গ্রন্থপঞ্জী
(আরবী*****************************************************************************************************************************************************************************************)
গ্রন্থকার পরিচিতি
মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) বর্তমান শতকের এক অনন্যসাধারণ ইসলামী প্রতিভা। এ শতকে যে ক’জন খ্যাতনামা মনীষী ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা কায়েমের জিহাদে নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি লেখনীর সাহায্যে ইসলামকে একটি কালজয়ী জীবন-দর্শন রূপে তুলে ধরনের পেরেছেন, তিনি তাদের অন্যতম।
এই ক্ষণজন্মা পুরুষ ১৩২৫ সনের ৬ মাঘ (১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারী) সোমবার, বর্তমান পিরোজপুর জিলার কাউখালী থানার অন্তর্গত শিয়ালকাঠি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। ১৯৩৮ সালে তিনি শর্ষীনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে ফাযিল ও কামিল ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার জ্ঞানগর্ভ রচনাবলি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণায় নিরত থাকেন। ১৯৪৬ সালে তিনি এ ভূখণ্ডে ইসলামী জীবন ব্যব্স্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন এবং সুদীর্ঘ চার দশক ধরে নিরলসভাবে এর নেতৃত্ব দেন।
বাংলা ভাষায় ইসলামী জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মওলানা আবদুর রহীম (রহ) শুধু পথিকৃতই ছিলেন না, ইসলামী জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ সম্পর্কে এ পর্যন্ত তার প্রায় ৬০টিরও বেশি অতুলনীয় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার কালেমা তাইয়েবা, ইসলামী রাজনীতির ভূমিকা, মহাসত্যের সন্ধানে, বিজ্ঞান ও জীবন বিধান, বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিত্ত্ব, আজকের চিন্তাধারা, পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি, সুন্নাত ও বিদয়াত, ইসলামের অর্থনীতি, ইসলামী অর্থনীতির বাস্তবায়, সূদমুক্ত অর্থনীতি, ইসলামের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও বীমা, কমিউনিজম ও ইসলাম, নারী, পরিবার ও পারিবারিক জীবন, আলকুরআনের আলোকে নবুয়্যত ও রিসালাত, আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার, ইসলাম ও মানবাধিকার, ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত, শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি, অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম, ইসলামে জিহাদ, হাদীস শরীফ (তিন খণ্ড), ইত্যাকার গ্রন্থ দেশের সুধীমহলে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছে।
মৌলিক ও গবেসণামূলক রচনার পাশাপাশি বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী মনীষীদের রচনাবলী বাংলায় অনুবাদ করার ব্যাপারেও তার কোনো জুড়ি নেই। এসব অনুবাদের মধ্যে রয়েছে মওলানা মওদুদী (রহ)-এর বিখ্যাত তাফসীর তাফহীমুল কুরআন, আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী কৃত ইসলামের যাকাত বিধান (দুই খণ্ড) ও ইসলামে হালাল হারামের বিধান, মুহাম্মদ কুতুবের বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত এবং ইমাম আবু বকর আল-জাসসাসের ঐতিহাসিক তাফসীর আহকামুল কুরআন। তার অনুদিত গ্রন্থের সংখ্যাও ৬০টিরও ঊর্ধ্বে।
মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-র অন্তর্গত ফিকাহ একাডেমীর একমাত্র সদস্য ছিলেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সূচিত আল কুরআনে অর্থনীতি এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস শীর্ষক দুটি গবেষণা প্রকল্পেরও সদস্য ছিলেন। প্রথমোক্ত প্রকল্পের অধীনে প্রকাশিত দুটি গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ তারই রচিত। শেষোক্ত প্রকল্পের অধীনে তার রচিত স্রষ্টা ও সৃষ্টিতত্ত্ব ও ইতিহাস দর্শন নামক দুটি গ্রন্থ।
মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) ১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন ও রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলন, ১৯৭৮ সালে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইসলামী দাওয়াত সম্মেলন, একই বছর করাচীতে অনুষ্ঠিত প্রথম এশীয় ইসলামী মহাসম্মেলন, ১৯৮০ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত আন্তঃপার্লামেন্ট সম্মেলন এবং ১৯৮২ সালে তেহরানে ইসলামী বিপ্লবের তৃতীয় বার্ষিক উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এই যুগস্রষ্টা মনীষী ১৩৪৩ সনের ১৪ আশ্বিন (১৯৮৭ সালের ১ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার এই নশ্বর দুনিয়া ছেড়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন।
(ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন)
খায়রুন প্রকাশনী