ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ
দুনিয়ার বিভিন্ন ধর্মে, মতাদর্শে, সমাজে ও সভ্যতায় নারী ও পুরুষকে কি দৃষ্টিতে দেখা হয় –বিশেষত নারী সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করা হয়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা একান্ত জরুরী। এই পর্যায়ে প্রথমে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী পেশ করা হচ্ছে। পরে অন্যান্য দিক নিয়েও পর্যালোচনা করা হবে।
নারী-পুরুষের একত্ব
ইসলামে নারী ও পুরুষ সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করা হয়, তা কুরআন মজীদে নিম্নোদ্ধৃত আয়াতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বলা হয়েছেঃ
(আরবী******************************************************)
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই আর্লাহকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক জীবন্ত সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জুড়ি। আর এই উভয় থেকেই অসংখ্য পুরুষ ও নারী (সৃষ্টি করে) ছড়িয়ে দিয়েছেন।
এ আয়াতে সমগ্র মানবতাকে সম্বোধন করা হয়েছে, তার মধ্যে যেমন রয়েছে পুরুষ, তেমনি নারী। এ উভয় শ্রেণীর মানুষকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, পুরুষ ও নারী একই উৎস থেকে প্রবাহিত মানবতার দুটি স্রোতধারা। নারী ও পুরুষ একই জীবন-সত্তা থেকে সৃষ্ট, একই অংশ থেকে নিঃসৃত। দুনিয়ার এই বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষ সেই একই সত্তা থেকে উদ্ভুত। নারী আসলে কোনো স্বতন্ত্র জীবসত্তা নয়, না পুরুষ। নারী পুরুষের মতোই মানুষ, যেমন মানুষ হচ্ছে এই পুরুষেরা। এদের কেউ-ই নিছক জন্তু জানোয়ার নয়। মৌলিকতার দিক দিয়ে এ দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। পুরুষের মধ্যে যে মানবীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে, নারীর মধ্যেও তা বিদ্যমান। এ সব দিক দিয়েই উভয়ে উভয়ের একান্তই নিকটবর্তী, অতীব ঘনিষ্ঠ। এজন্যে তাদের যেমন গৌরব বোধ করা উচিত, তেমনি নিজেদের সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয় বলেও একে মনে করা ও আন্তরিকভাবে মেনে নেয়া কর্তব্য।
প্রথম মানবী হাওয়াকে প্রথম মানব আদম থেকে সৃষ্টি করার মানেই হচ্ছে এই যে, আদম সৃষ্টির মৌলিক উপাদান যা কিছু তাই হচ্ছে হাওয়ারই। আয়াতের শেষাংশ থেকে জানা যায়, মূলত নারী-পুরুষ জাতির বোন আর পুরুষরা নারী জাতির সহোদর কিংবা বলা যায়, নারী পুরুষেরই অপর অংশ এবং এ দুয়ে মিলে মানবতার এক অভিন্ন অবিভাজ্য সত্তা।
সূরা আল-হুজরাত-এ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবী*******************************************)
হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন গোত্র ও বংশ-শাখায় বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় লাভ করতে পার।
তবে একথা নিশ্চিত যে, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহ ভীরু ব্যক্তিই হচ্ছে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানার্হ।
এ আয়াত থেকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বড় বড় যে কয়টি কথা জানা যায়, তা হচ্ছে এইঃ
১. দুনিয়ার সব মানুষ–সকল কালের, সকল দেশের, সকল জাতের ও সকল বংশের মানুষ-কেবলমাত্র আল্লাহর সৃষ্টি।
২. আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে দুনিয়ার সব মানুষ সমান, কেউ ছোট নয়, কেউ বড় নয়; কেউ উচ্চ নয়, কেউ নীচ নয়। সৃষ্টিগতভাবে কেউ শরীফ নয়, কেউ নিকৃষ্ট নয়। উভয়ের দেহেই একই পিতামাতার রক্ত প্রবাহিত।
৩. দুনিয়ার সব মানুষই একজন পুরুষ ও একজন নারীর যৌন-মিলনের ফল হিসেবে সৃষ্ট। দুনিয়ার এমন কোনো পুরুষ নেই, যার সৃষ্টি ও জন্মের ব্যাপারে কোন নারীর প্রত্যক্ষ দান নেই কিংবা কোনো নারী এমন নেই, যার জন্মের ব্যাপারে কোনো পুরুষের প্রত্যক্ষ যোগ অনুপস্থিত। এ কারণে নারী-পুরুষ কেউই কারো ওপর কোনোরূপ মৌলিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে না এবং কেউই অপর কাউকে জন্মগত কারণে হীন, নীচ, নগণ্য ও ক্ষুদ্র বলে ঘৃণা করতেও পারে না। মানবদেহের সংগঠনে পুরুষের সঙ্গে নারীরও যথেষ্ট অংশ শামিল রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে নারীর অংশই বেশি থাকে প্রত্যেকটি মানব শিশুর দেহ সৃষ্টিতে।
নারী ও পুরুষ যে সবদিক দিয়ে সমান, প্রত্যেকেই যে প্রত্যেকের জন্যে একান্তই অপরিহার্য –কেউ কাউকে ছাড়া নয়, হতে পারে না, স্পষ্টভাবে জানা যায় নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয় থেকেঃ
(আরবী*********************************************************)
নিশ্চয়ই আমি নষ্ট করে দেই না তোমাদের মধ্যে থেকে কোন আমলকারীর আমলকে, সে পুরুষই হোক আর নারীই হোক, তোমরা পরস্পর পরস্পর থেকে –আসলে এক ও অভিন্ন।
তাফসীরকারগণ ‘তোমরা পরস্পর থেকে, আসলে এক ও অভিন্ন’ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, এ বাক্যটুকু ধারাবাহিক কথার মাঝখানে বলে দেয়া একটি কথা। এ থেকে এ কথাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এখানে আল্লাহ তা’আলা যে বিষয়ের ওয়াদা করেছেন, তাতে পুরুষদের সাথে নারীরাও শামিল। কেননা পরস্পর পরস্পর থেকে হওয়ার মানেই হচ্ছে এই যে, এরা সবাই একই আসল ও মূল থেকে উদ্ভূত এবং তারা পরস্পরের সাথে এমনভাবে জড়িত ও মিলিত যে, এ দুয়ের মাঝে পার্থক্যের প্রাচীর তোলা কোনোক্রমে সম্ভব নয়। দ্বীনের দৃষ্টিতে তারা সমান, সেই অনুযায়ী আমল করার দায়িত্বও দু’জনার সমান এবং সমানভাবেই সে আমলের সওয়াব পাওয়ার অধিকারী তারা। এক কথায় নারী যেমন পুরুষ থেকে, তেমনি পুরুষ নারী থেকে কিংবা নারী-পুরুষ উভয়ই অপর নারী-পুরুষ থেকে প্রসূত।
(আরবী**************************************************)
মেয়েরা হচ্ছে পুরুষদের পোশাক, আর তোমরা পুরুষরা হচ্ছ মেয়েদের পরিচ্ছদ।
এ আয়াতেও নারী ও পুরুষকে একই পর্যায়ে গণ্য করা হয়েছে এবং উভয়কেই উভয়ের জন্যে ‘পোশাক’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আয়াতে উল্লিখিত ‘লেবাস’ (আরবী******) শব্দটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ‘লেবাস’ মানে পোশাক, যা পরিধান করা হয়, যা মানুষের দেহাবয়ব আবৃত করে রাখে। প্রখ্যাত মনীষী রবী ইবনে আনাস বলেছেনঃ স্ত্রীলোক পুরুষদের জন্যে শয্যাবিশেষ আর পুরুষ হচ্ছে স্ত্রীলোকদের জন্য লেপ। স্ত্রী পুরুষকে পরস্পরের ‘পোশাক’ বলার তিনটি কারণ হতে পারেঃ
১. যে জিনিস মানুষের দোষ ঢেকে দেয়, দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখে, দোষ প্রকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাই হচ্ছে পোশাক। স্বামী-স্ত্রীও পরস্পরের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখে –কেউ কারো কোনো প্রকারের দোষ দেখতে বা জানতে পারলে তার প্রচার বা প্রকাশ করে না –প্রকাশ হতে দেয় না। এজন্যে একজনকে অন্যজনের ‘পোশাক’ বলা হয়েছে।
২. স্বামী-স্ত্রী মিলন শয্যায় আবরণহীন অবস্থায় মিলিত হয়। তাদের দুজনকেই আবৃত রাখে মাত্র একখানা কাপড়। ফলে একজন অন্যজনের পোশাকস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। এদিক দিয়ে উভয়ের গভীর, নিবিড়তম ও দূরত্বহীন মিলনের দিকের ইঙ্গিত সুস্পষ্ট।
৩. স্ত্রী পুরুষের জন্যে এবং পুরুষ স্ত্রীর জন্যে শান্তিস্বরূপ। যেমন অপর এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ
(আরবী****************************************************)
এবং তার থেকেই তার জুড়ি বানিয়েছেন যেন তার কাছ থেকে মনের শান্তি ও স্থিতি লাভ করতে পারে।
ইবনে আরাবী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ
(আরবী*********************************************************)
পুরুষের জন্য স্ত্রীরা কাপড় স্বরূপ। একজন অপর জনের নিকট খুব সহজেই মিলিত হতে পারে। তার সাহায্যে নিজের লজ্জা ডাকতে পারে, শান্তি ও স্বস্তি লাভ করতে পারে।
তিনি আরো বলেছেন যে, এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, স্বামী-স্ত্রীর কেউ নিজেকে অপর জনের থেকে সম্পর্কহীন করে ও দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না, কেননা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মিল-মিশ ও দেখা-সাক্ষাত খুব সহজেই সম্পন্ন হতে পারে।
অন্যরা বলেছেনঃ
(আরবী*****************************************************************)
প্রত্যেকেই অপরের সাহায্যে স্বীয় চরিত্র পবিত্র ও নিষ্কলুষ রাখতে পারে। স্ত্রী ছাড়া অপর কারো সামনে বিবস্ত্র হওয়া হারাম বলে এ অসুবিধা থেকেও এই স্ত্রীর সাহায্যেই রেহাই পেতে পারে।
রাসূলে করীম (স) বলেছেনঃ
(আরবী**************************************************)
মেয়েলোকেরা যে পুরুষদেরই অর্ধাংশ কিংবা সহোদর এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বস্তুত নারী ও পুরুষ যেন একটি বৃক্ষমূল থেকে উদ্ভূত দুটি শাখা।
অন্যান্য ধর্মমত –অন্যান্য মতাদর্শ
কিন্তু দুনিয়ার অন্যান্য ধর্মমত ও মতাদর্শের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের এ সমান মর্যাদা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকৃত।
ইহুদী ধর্মে নারীকে ‘পুরুষের প্রতারক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ওল্ড টেষ্টামেন্ট (আদি পুস্তক)-এ হযরত আদম ও হাওয়ার জান্নাত থেকে বহিস্কৃত হওয়ার ব্যাপারটিকে এভাবে পেশ করা হয়েছেঃ
তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি কোথায়? তিনি কহিলেন, আমি উদ্যানে, তোমার রব শুনিয়া ভীত হইলাম। কারণ আমি উলঙ্গ, তাই আপনাকে লুকাইয়াছি। তিনি কহিলেন, তুমি যে উলঙ্গ উহা তোমাকে কে বলিল? যে বৃক্ষের ফল ভোজন করিতে তোমাকে নিষেধ করিয়াছিলাম, তুমি কি তাহার ফল ভোজন করিয়াছ? তাহাতে আদম কহিলেন, তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি। তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর নারীকে কহিলেন, তুমি এ কি করিলে? নারী কহিলেন, সর্প আমাকে ভুলাইয়াছিল, তাই খাইয়াছি। (আদি পুস্তক –মানব জাতির পাপের পতন ১০-১১ ক্ষেত্র)
এর অর্থ এই হয় যে, বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হওয়া আদম তথা মানব জাতির পক্ষে অভিশাপ বিশেষ এবং এ অভিশাপের মূল কারণ হচ্ছে নারী –আদমের স্ত্রী। এজন্যে স্ত্রীলোক সে সমাজে চিরলাঞ্ছিত এবং জাতীয় অভিশাপ, ধ্বংস ও পতনের কারণ। এজন্যে পুরুষ সব সময়ই নারীর ওপর প্রভুত্ব করার স্বাভাবিক অধিকারী। এ অধিকার আদমকে হাওয়া বিবি কর্তৃক নিষিদ্ধ ফল খাওয়ানোর শাস্তি বিশেষ এবং যদ্দিন নারী বেঁচে থাকবে, ততদিনই এ শাস্তি তাকে বোগ করতে হবে।
ইহুদী সমাজে নারীকে ক্রীতদাসী না হলেও চাকরানীর পর্যায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে বাপ নিজ কন্যাকে নগদ মূল্যে বিক্রয় করতে পারত, মেয়ে কখনো পিতার সম্পত্তি থেকে মীরাস লাভ করত না, করত কেবল তখন, যখন পিতার কোনো পুত্র সন্তানই থাকত না।
প্রাচীনকালে হিন্দু পণ্ডিতরা মনে করতেন, মানুষ পারিবারিক জীবন বর্জন না করলে জ্ঞান অর্জনে সমর্থ হতে পারে না। মনু’র বিধানে পিতা, স্বামী ও সন্তানের কাছ থেকে কোনো কিচু পাওয়ার মতো কোনো অধিকার নারীর জন্যে নেই। স্বামীর মৃত্যু হলে তাকে চির বৈধব্যের জীবন যাপন করতে হয়। জীবনে কোনো স্বাদ-আনন্দ-আহলাদ-উৎসবে অংশ গ্রহণ তার পক্ষে চির নিষিদ্ধ। নেড়ে মাথা, সাদা বস্ত্র পরিহিতা অবস্থায় আতপ চালের বাত ও নিরামিষ খেয়ে জীবন যাপন করতে হয় তাকে।
প্রাচীন হিন্দু ভারতীয় শাস্ত্রে বলা হয়েছেঃ
মৃত্যু, নরক, বিষ, সর্প, আগুন –এর কোনোটিই নারী অপেক্ষা খারাপ ও মারাত্মক নয়।
যুবতী নারীকে দেবতার উদ্দেশ্যে –দেবার সন্তুষ্টির জন্যে কিংবা বৃষ্টি অথবা ধন-দৌলত লাভের জন্যে বলিদান করা হতো। একটি বিশেষ গাছের সামনে এভাবে একটি নারীকে পেশ করা ছিল তদানীন্তন ভারতের স্থায়ী রীতি। স্বামীর মৃত্যুর সাথে সহমৃত্যু বরণ বা সতীদাহ রীতিও পালন করতে হতো অনেক হিন্দু নারীকে।
অনেক সমাজে নারীকে সকল পাপ, অন্যায় ও অপবিত্রতার কেন্দ্র বা উৎস বলে ঘৃণা করা হতো। তারা বলত, এখনকার নারীরা কি বিবি হাওয়ার সন্তান নয়? আর হাওয়া বিবি কি আদমকে আল্লাহর নাফরমানীর কাজে উদ্ধুদ্ধ করেনি? –পাপের কাজকে তার সামনে আকর্ষনীয় করে তোলেনি? ধোঁকা দিয়ে পাপে লিপ্ত করেনি? আর মানব জাতিকে এই পাপ পংকিল দুনিয়ার আগমনের জন্যে সেই কি দায়ী নয়? সত্যি কথা এই যে, হাওয়া বিবিই হচ্ছে শয়তান প্রবেশের দ্বারপথ, আল্লাহর আনুগত্য ভঙ্গ করার কাজ সেই সর্বপ্রথম শুরু করেছে। এ কারণে তারই কন্যা বর্তমানের এ নারী সমাজেরও অনুরূপ পাপ কাজেরই উদগাতা হওয়া স্বাভাবিক। তাই নারীরা হচ্ছে শয়তানের বাহন, নারীরা হচ্ছে এমন বিষধর সাপ, যা পুরুষকে দংশন করতে কখনো কসুর করেনি।
এসব মতের কারণে দুনিয়ার বিভিন্ন সমাজ ও সভ্যনায় নারী জাতির মর্মান্তিক অবস্তা দেখা গিয়েছে। এথেন্সবাসীরা হচ্ছে সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য প্রাচীনতম জাতি। কিন্তু সেখানে নারীকে পরিত্যক্ত দ্রব্য-সামগ্রীর মতো মনে করা হতো। হাটে-বাজারে প্রকাশ্যভাবে নারীর বেচা-কেনা হতো। শয়তান অপেক্ষাও অধিক ঘৃণিত ছিল সেখানে নারী। ঘরের কাজকর্ম করা এবং সন্তান প্রসব ও লালন-পালন ছাড়া অন্য কোনো মানবীয় অধিকারই তাদের ছিল না। স্পার্টাতে আইনত একাধিক স্ত্রী গ্রহন নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যত প্রায় প্রত্যেক পুরুষই একাধিক স্ত্রী রাখত। এমনকি নারীও একাধিক পুরুষের যৌন ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে সেখানে বাধ্য হতো। সমাজের কেবল নিম্নস্তরের মেয়েরাই নয়, সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েরা-বৌ’রা পর্যন্ত এ জঘন্য কাজে লিপ্ত থাকত। রুমানিয়ায়ও এর রেওয়াজ ছিল ব্যাপকভাবে। শাসন কর্তৃপক্ষ দেশেল সব প্রজা-সাধারনের জন্য একাধিক বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সমাজের কোনো লোক –পাদ্রী-পুরোহিত কিংবা সমাজ-নেতা কেউই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেনি।
ইহুদী সমাজে নারীদের অবস্থা আরো মারাত্মক। মদীনার ‘ফিতুম’ নামক এক ইহুদী বাদশাহ আইন জারী করেছিলঃ “যে মেয়েকেই বিয়ে দেওয়া হবে, স্বামীর ঘরে যাওয়ার আগে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে এই রাত্রি যাপন করতে হবে”। (আরবী**********************)
খ্রিষ্টধর্মে তো নারীকে চরম লাঞ্ছনার নিম্নতম পংকে নিমজ্জিত করে দেয়া হয়েছে। পোলিশ লিখিত এক চিঠিতে বলা হয়েছেঃ নারীকে চুপচাপ থেকে পূর্ণ আনুগত্য সহকারে শিক্ষালাভ করতে হবে। নারীকে শিক্ষাদানের আমি অনুমতি দেই না; বরং সে চুপচাপ থাকবে। কেননা আদমকে প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পরে হাওয়াকে, আদম প্রথমে ধোঁকা খায় নি, নারীই ধোঁকা খেয়ে গুনাহে লিপ্ত হয়েছে।
জনৈক পাদ্রীর মতে নারী হচ্ছে শয়তানের প্রবেশস্থল। তারা আল্লাহর মান-মর্যাদার প্রবিন্ধক, আল্লাহর প্রতিরূপ, মানুষের পক্ষে তারা বিপজ্জনক। পাদ্রী সন্তান বলেছেনঃ নারী সব অন্যায়ের মূল, তার থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়। নারী হচ্ছে পুরুষের মনে লালসা উদ্রেককারী, ঘরে ও সমাজে যত অশান্তির সৃষ্টি হয়, সব তারই কারণে। এমন কি, নারী কেবল দেহসর্বস্ব, না তার প্রাণ বলতে কিছু আছে, এ প্রশ্নের মীমাংসার জন্যে পঞ্চম খ্রিষ্টাব্দে বড় বড় খ্রীষ্টান পাদ্রীদের এক কনফারেন্স বসেছিল ‘মাকুন’ নামের এক জায়গায়।
ইংরেজদের দেশে ১৮০৫ সন পর্যন্ত আইন ছিল যে, পুরুষ তার স্ত্রীকে বিক্রয় করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে একন একটি স্ত্রীর দাম ধরা হয়েছিল অর্ধশিলিং। এক ইটালীয়ান স্বামী তার স্ত্রীকে কিস্তি হিসেবে আদায়যোগ্য মূল্যে বিক্রয় করেছিল। পরে ক্রয়কারী যখন কিস্তি বাবদ টাকা দিতে অস্বীকার করে, তখন বিক্রয়কারী স্বামী তাকে হত্যা করে।
অষ্টাদশ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগে ফরাসী পার্লামেন্টে মানুষের দাস প্রথার বিরুদ্ধে যে আইন পাস হয়, তার মধ্যে নারীকে গণ্য করা হয় নি। কেননা অবিবাহিতা নারী সম্পর্কে কোনো কিছু করা যেতো না তাদের অনুমতি ছাড়া। (আরবী*****************************) ৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বহু চিন্তা-ভাবনা, আলোচনা-গবেষণা ও তর্ক-বিতর্কের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, নারী জন্তু নয় –মানুষ। তবে সে এমন মানুষ যে, পুরুষের কাজে নিরন্তর সেবারত হয়ে থাকাই তার কর্তব্য। কিন্তু তাই বলে তাকে শয়তানের বাহন, সব অন্যায়ের উৎস ও কেন্দ্র এবং সার সাথে সম্পর্ক রাখা অনুচিত প্রভৃতি ধরনের যেসব কথা বলা হয় তার প্রতিবাদ বা প্রত্যাহার করা হয়নি। কেননা এগুলো ছিল তার স্থির ও মজ্জাগত আকীদা।
(আরবী*****************************************)
গ্রীকদের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা কি ছিল, তা তাদের একটা কথা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। সেখানে বলা হতোঃ
আগুনে জ্বলে গেলে ও সাপে দংশন করলে তার প্রতিবিধান সম্ভব; কিন্তু নারীর দুষ্কৃতির প্রতিবিধান অসম্ভব।
পারস্যের ‘মাজদাক’ আন্দোলনের মূলেও নারীর প্রতি তীব্র ঘৃণা পুঞ্জীবূত ছিল। এ আন্দোলনের প্রভাবাধীণ সমাজে নারী পুরুষের লালসা পরিতৃপ্তির হাতিয়ার হয়ে রয়েছে। তাদের মতে দুনিয়ার সব অনিষ্টের মূল উৎস হচ্ছে দুটি –একটি নারী দ্বিতীয়টি ধন-সম্পদ। (আরবী******************)
প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থা অন্যান্য সমাজের তুলনায় অধিক নিকৃষ্ট ছিল। প্রাচীন ভারতের প্রখ্যাত আইন রচয়িতা মনু মহারাজ নারী সম্পর্কে বলেছেনঃ
‘নারী –নাবালেগ হোক, যুবতী হোক আর বৃদ্ধা হোক –নিজ ঘরেও স্বাধীনভাবে কোন কাজ করতে পারবে না’।
‘মিথ্যা কথা বলা নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য। মিথ্যা বলা, চিন্তা না করে কাজ করা, ধোঁকা-প্রতারণা, নির্বুদ্ধিতা, লোভ, পংকিলতা, নির্দয়তা –এ হচ্ছে স্বভাবগত দোষ’।
ইউরোপে এক শতাব্দীকাল পূর্বেও পুরুষগণ নারীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাত। পুরুষের অত্যাচার বন্ধ করার মতো কোনো আইন সেখানে ছিল না। নারী ছিল পুরুষের গোলাম। নারী সেখানে নিজ ইচ্ছায় কোনো কাজ করতে পারত না। নিজে উপার্জন করেও নিজের জন্যে তা ব্যয় করতে পারত না। মেয়েরা পিতামাতার সম্পত্তির মতো ছিল। তাদের বিক্রয় করে দেয়া হতো। নিজেদের পছন্দসই বিয়ে করার কোন অধিকার ছিল না তাদের।
প্রাচীন আরব সমাজেও নারীর অবস্থা কিছুমাত্র ভালো ছিল না। তথায় নারীকে অত্যণ্ত ‘লজ্জার বস্তু’ বলে মনে করা হতো। কন্যা-সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে পিতামাতা উভয়ই যারপর নাই অসন্তুষ্ট হতো। পিতা কন্যা-সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করে ফেলত। আর জীবিত রাখলেও তাকে মানবোচিত কোনো অধিকারই দেয়া হতো না। নারী যতদিন জীবিত থাকত, ততদিন স্বামীর দাসী হয়ে থাকত। আর স্বামী মরে গেলে তার উত্তরাধিকারীরাই অন্যান্য বিষয় সম্পত্তির সাথে তাদেরও একচ্ছত্র মালিক হয়ে বসত। সৎমা –পিতার স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বানানো সে সমাজে কোনো লজ্জা বা আপত্তির কাজ ছিল না। বরং তার ব্যাপক প্রচলন ছিল সেখানে। আল্লামা আবূ বকর আবুল জাসসাস লিখেছেনঃ
(আরবী**********************************************)
জাহিলিয়াতের যুগে পিতার স্ত্রী –সৎ মা বিয়ে করার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
সেখানে নারীর পক্ষে কোনো মীরাস পাওয়া একেবারেই অসম্ভব ছিল। আধুনিক সভ্যতা নারীমুক্তির নামে প্রাচীন কালের লাঞ্ছনার গহবর থেকে উদ্ধার করে নারী স্বাধীনতার অপর এক গভীর গহবরে নিক্ষেপ করেছে। নারী স্বাধীনতার নামে তাকে লাগামহীন জন্তু জানোয়ার পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। আজ সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিল্পের নামে নারীর লজ্জা-শরম-আবরু ও পবিত্রতার মহামূল্য সম্পদকে প্রকাশ্য বাজারে নগণ্য পণ্যের মতো ক্রয়-বিক্রয় করা হচ্ছে। পুরুষরা চিন্তার আধুনিকতা উচ্ছলতা ও শিল্পে অগ্রগতি ও বিকাশ সাধনের মোহনীয় নামে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে ঘরের বাইরে নিয়ে এসেছে এবং ক্লাবে, নাচের আসরে বা অভিনয় মঞ্চে পৌঁছিয়ে নিজেদের পাশবিক লালসার ইন্ধন বানিয়ে নিয়েছে। বস্তুত আধুনিক সভ্যতা নারীর নারীত্বের সমাধির ওপর লালসা চরিতার্থতার সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করেছে। এ সভ্যতা প্রকৃতপক্ষে নারীকে দেয়নি কিছুই, যদিও তার সব অমূল্য সম্পদই সে হরণ করে নিয়েছে নির্মমভাবে।
বিশ্বনবীর আবির্ভাবকালে দুনিয়ার সব সমাজেই নারীর অবস্থা প্রায় অনুরূপই ছিল। রাসূলে করীম (স) এসে মানবতার মুক্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে বিপ্লবী বাণী শুনিয়েছেন, তাতে যুগান্তকালের পংকিলতা ও পাশবিকতা দূরীভূত হতে শুরু হয়। নারীর প্রতি জুলুম ও অমানুষিক ব্যবহারের প্রবণতা নিঃশেষ হয়ে গেল। মানব সমাজে তার সম্মান ও যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হলো। জীবনক্ষেত্রে তার গুরুত্ব যেমন স্বীকৃত হয়, তেমনি তার যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদাও পুরাপুরি বহাল হলো। নারী মানবতার পর্যায়ে পুরুষদের সমান বলে গণ্য হলো। অধিকার ও দায়িত্বের গুরুত্বের দিক দিয়েও কোনো পার্থক্য থাকল না এদের মধ্যে। নারী ও পুরুষ উভয়ই যে বাস্তবিকই ভাই ও বোন, এরূপ সাম্য ও সমতা স্বীকৃত না হলে তা বাস্তবে কখনই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
নারী ও পুরুষ পিতামাতার উত্তরাধিকারের দিক দিয়েও সমান। একটি গাছের মূল কাণ্ড থেকে দুটি শাখা বের হলে যেমন হয়, এও ঠিক তেমনি। কাজেই যারা বলে যে, নারী জন্মগতভাবেই খারাপ, পাপের উৎস, পংকিল –তারা সম্পূর্ণ ভুল কথা বলে। কেননা বিবি হাওয়া স্ত্রী পুরুষ সকলেই আদি মাতা, তার বিশেষ কোনো উত্তরাধিকার পেয়ে থাকলে দুনিয়ার স্ত্রী-পুরুষ সকলেই তা পেয়েছে। তা কেবল স্ত্রীলোকেরাই পেয়েছে, পুরুষরা পায় নি –এমন কথা বলাতো খুবই হাস্যকর। আর বেহেশত আল্লাহর নিষিদ্ধ গাছের নিকট যাওয়া ও তার ফল খাওয়ায় দোষ কিছু হয়ে থাকলে কুরআনের দৃষ্টিতে তা আদম ও হাওয়া দুজনেরই রয়েছে। শুরুতে দুজনকেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিলঃ
(আরবী**************************************************************)
হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাকো এবং সেখান থেকে তোমরা দুজনে প্রাণভরে পানাহার করো –যেখান থেকেই তোমাদের ইচ্ছা। আর তোমরা দুজনে এই গাছটির নিকটেও যাবে না –গেলে তোমরা দুজনই জালিমদের মধ্যে গণ্য হবে।
পরবর্তী কথা থেকেও জানা যায়, আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণে তাঁদের যে ভুল হয়েছিল, তা এক সঙ্গে তাঁদের দুজনেরই হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর দুজনই সেজন্যে আল্লাহর নিকট তওবা করে পাপঙ্খালন করেছিলেন। একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াত কয়টিতেঃ
(আরবী*****************************************************************)
অতঃপর তারা দুজনই যখন সে গাছ আস্বাদন করল, তাদের দুজনেরই লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে পড়ল। এবং তারা দুজনই বেহেশতের গাছের পাতা নিজেদের গায়ে লাগিয়ে আবরণ বানাতে থাকে এবং তাদের দুজনের আল্লাহ তাদের দুজনকে ডেকে বললেনঃ আমি কি তোমাদের দুজনকেই তোমাদের (সামনের) এই গাছটি সম্পর্ক নিষেধ করিনি? আমি বলিনি যে, শয়তান তোমাদের দুজনেরই প্রকাশ্য দুশমন? তখন তারা দুজনে বললঃ হে আমাদের রব্ব, আমরা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছি, এখন তুমি যদি আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি রহমত নাযিল না করো, তাহলে আমরা বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
কুরআন মজীদের সুস্পষ্ট বর্ণনা থেকে নারী সম্পর্কে যাবতীয় অমানবিক ও অপমানকর ধারণা ও মতাদর্শের ভ্রান্তি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। বস্তুত দুনিয়ায় কুরআনই একমাত্র কিতাব, যা নারীকে যুগযুগ সিঞ্চিত অপমান-লাঞ্ছনা ও হীনতা-নীচনার পূঞ্জীভূত স্তূপের জঞ্জাল থেকে চিরদিনের জন্যে মুক্তি দান করেছে এবং তাকে সঠিক ও যথোপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুছে দিয়েছে তার ললাটস্থ সহস্রাব্দকালের মসিরেখা।
ইসলাম নারীকে সঠিক মানবতার মূল্য দান করেছে। নারী স্বাভাবিক সুকুমার বৃত্তি ও সহজাত গুণাবলীর বিকাশ সাধনই ইসলামের লক্ষ্য। এজন্যে ইসলাম নারীকে ঘরের বাইরে মাঠে-ময়দানে হাটে-বন্দরে, অফিসে-বাজারে, দোকানে-কারখানায়, পরিষদে-সম্মেলনে, মঞ্চে-নৃত্যুশালায়-অভিনয়ে টেনে নেয়ার পক্ষপাতী নয়। কারণ এসব যোগ্যতা সহকারে পুরোমাত্রায় অংশ গ্রহণের জন্যে যেসব স্বাভাবিক গুণ ও কর্মক্ষমতার প্রয়োজন, তা নারীকে জন্মগতভাবেই দেয়া হয়নি। নারীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজের যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা দান করা হয়েছে এবং ইসলাম নারীর জন্যে যে জীবন-পথ ও যে কাজের দায়িত্ব নির্ধারণ করেছে, তা সবই ঠিক এ দৃষ্টিতেই করা হয়েছে। ইসলাম নারীর স্বাভাবিক যোগ্যতার সঠিক মূল্য দিয়েছে, দিয়েছে তা ব্যবহার করে তার উৎকর্ষ সাধনের জন্যে প্রয়োজনীয় বিধান ও ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় নারীদের দ্বারা যে সব কাজ করানো হচ্ছে কিংবা যেসব কাজ করতে তাদের নানাভাবে বাধ্য করা হচ্ছে, তা সবই তার প্রকৃতি পরিপন্থী, প্রলোভন বা জোর জবরদস্তিরই পরিণতি মাত্র। সে সব কাজের জন্যে মূলতই নারীদের সৃষ্টি করা হয়নি, তা নিঃসন্দেহেই বলতে চাই। ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারিক জীবন যাপনই হচ্ছে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যে চিরকল্যাণের উৎস। এ জীবনের বিস্তারিত ব্যবস্থার যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণই এ গ্রন্থের উদ্দেশ্য।