২.১০ সালাত বিষয়ক
২.১০.১ পবিত্রতা বিষয়ক
১. ‘কুলুখ ব্যবহার না করলে গোর আযাব হওযা
প্রচলিত একটি গ্রন্থে বলা হয়েছে: হাদীসে আছে,যাহারা বাহ্য- প্রস্রাবের পর কুলুখ ব্যবহার না করিবে তাহাদের ন্যায় কঠিন আযাব কাহারও হইবে না”। (মোঃ গোলাম রহমান, মকছুদোল মো‘মেনীন, পৃ. ৮৪)।
কথাটি এভাবে ঠিক নয়। এভাবে একে হাদীস বললে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে মিথ্যা বলা হবে। সম্ভবত এখানে একটি সহীহ হাদীসের অনুবাদ বিকৃত ভাবে করা হয়েছে। বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, পেশাব থেকে ভালভাবে পবিত্র না হওয়া কবর আযাবের অন্যতম কারণ। একটি হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লহ (সাঃ) বলেছেন:আরবী(******)
“কবরের অধিকাংশ শাস্ত পেশাব থেকে।”(ইনবনু মইবনু মাজাহ, আস সুনান ১/১২৫; হাকিম, আল মুসতাদরাক ১/২৯৩)।
নুইব উপরের কথাটি সম্ভবত এই হাদীসের বিকৃত অনুবাদ। এই হাদীস এবং এই অর্থের অন্য সকল হাদীসে পেশাব থেকে ভালভাবে পবিত্র হতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কোনো হাদীসেই বলা হয়নি যা, ‘কুলুখ’ ব্যবহার না করলে কোনো অন্যায় হবে বা শাস্তি হবে। মূল বিষয় হলো, মলমূত্র ত্যাগের পর পরিপূর্ণরূপে পবিত্র হওয়া ইসলামের অন্যতম বিধান। হাদীসের আলোকে আমরা দেখতে পাই যা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইস্তিঞ্জার সময় কখনো পাথর বা ঢিলা ব্যাবহার করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি পানি ব্যবহার করতেন। কখনো কখনো পাথর ও পানি দু’টিই ব্যবহার করতেন। সাহাবায়ে কেরামও এভাবেই ইস্তিঞ্জা করেছেন। পানি ও পাথর (কুলুখ) উভয়ই ব্যবহার করা উত্তম। তা না হলে শুধুমাত্র পানি ব্যবহার করা ভাল। তা না হলে শুধুমাত্র পাথর বা (কুলুখ) ব্যবহার করে পবীত্রতা অর্জন করতে হবে। এতেও মূল ওয়াজিব আদায় হবে কোনরূপ অপরাধ বা গোনাহ হবে না।বিভিন্ন হদীস থেকে বিষয়গুলি জানা যায়। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়। মলমূত্র পরিত্যাগের পরে পবিত্র হওয়ার দুটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায় হলো মলমূত্র ত্যাগের পরে বসা অবস্থাতেই পানি অথবা পাথর উভয়ের ব্যবহারের মাধ্যমে ময়লা স্থানকে পরিষ্কার করা। একে আরবীতে ইসতিনজা বা ইসতিজমার বলা হয়। পবিত্রতার দ্বিতীয় পর্য়ায় হলো সতর্কতা বা সন্দহমুক্ত হওয়া। এর অর্থ হলো,পেশাব শেষে ইসতিনজার পরেও ওঠে দাঁড়ালে বা হাঠতে গেলে দুই এক ফোটা পেশাব বেরিয়ে আসতে পারে ভয় পেলে গলা খাঁকারি দিয়ে বা কয়েক পা হাঁটাচলা করে সন্দহ থেকে মুক্ত হওয়া। আরবীতে একে ‘ইসতিবরা’ বলা হয়।
হাদীস শরীফে প্রথম পর্যায়ে ইসতিনজার জন্য পানি ও পাথর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছ। একটি জরীফ হাদীসে পেশাবের বসা অবস্থাতেই তিনবার পুরুষাঙ্গ টান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো হদিস শরীফে বর্ণিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বা তার সাহাবীগণ ইস্তিঞ্জার সময় কখনো উঠে দাঁড়াননি হাঁটাচলা, লাফালাফি, গলাখাকারি ইত্যাদি কিছুই করেননি। পেশাব ও পায়খানা উভয় ক্ষেত্রেই তঁারা স্বাভাবিকভাবে বসা অবস্হাতেই পাথর বা পানি,অথবা প্রথমে পাথর এবং তারপর পানি ব্যবহার করে পরিচ্ছিন্নতা অর্জন করেছেন। পরবর্তী যুগের আলিমগণ সন্দেহের ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য এরূপ হাঁটা চলার বিধান দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মানুষের তবিয়ত বিভিন্ন প্রকারের। যদি কারো একান্ত প্রয়োজন হয় তহলে উঠে দাঁড়িয়ে বা দুই এক পা হেঁটে, গলাখাকারি দিয়ে বা এধরনের কোনো কাজের মাধ্যমে তারা ‘পেশাবএকদম শেষ হয়েছে’ –এ বিষয়ে নি্শ্চিত হতে পারে। আর যার মনে হবে যে, বসা অবস্থাতেই সে পরিপূর্ণ পাক হয়ে গিয়েছে তার জন্য সুন্নতের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কাজেই ‘কুলুখ নিয়ে হাঁটাচলা করা’ অথবা দাবি করি যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এরূপ হাটাচলা করেছেন বা করতে বলেছেন তাহলে তাঁর নামে মিথ্যা দাবি করা হবে।
২. বেলালের ফযীলতে কুলুখের উল্লখ
প্রচলিত একটি বইয়ে রয়েছে: “হযরত (সাঃ) কদিন বিলাল (রা)-কেজিজ্ঞাসা করিলেন, ওহে বিলাল! আমি মেরাজের রাত্রীতে বেহেস্তের মধ্য তোমার পায়ের চিহ্ন দেখিতে পাইয়াছি। বলত এরূপ পূণ্যের কোন কাজ তোমার দ্বারা সম্পাদিত হইতেছে? তদুত্তরে বিলাল (রা) বলিলেন , আমি বাহ্য-প্রসাবের পর কুলূখ ব্যবহার করি, পবিত্রতার দিকে লক্ষ রাখি ও সদা সর্বদা অজুর সহিত থাকি। হুজুর (সাঃ)বলিলেন ইহাইতো সকল নেক কাজের মূল।”
বিভিন্ন হাদীসে বেলালের এই মর্যাদার বিষয়ে তিনি তিনটি বিষয় উল্লেক করেছেন: ওযু করলেই দুই রাক’আত সালত আদায় করা; আযান দিলেই দুই রাক’আত সালত আদায় করা এবং ওযু ভাঙ্গলেই ওযু করা্।প্রথম বিষয়টি বুখারী ও মুসলীম সংকলিত হাদীস রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিষয়টী ইবনে খুইয়াম, হাকিম প্রমূখ মুহাদ্দীস সংকলিত একটি হাদীস রয়ছে। কুলুখের কথা কোথাও উল্লেখ করা হযেছে বলে জানা যায় না।
এখানে লক্ষণীয় যে,সাহাবীগণ সকলেই মল মূত্র পরিত্যাগের পরে কুলুখ ব্যবহার করতেন। এজন্য বিভিন্ন হাদীসে পানি ও কুলুখু উভয়ই ব্যবহার করার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
৩. খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা
প্রচলিত একটি পুস্তকে রয়েছে: হাদীসে আছে যারা খোলা জায়গায় বসিয়া বাহ্য-প্রসাব করিবে, ফেরেস্তাগণ তাহাদীগকে বদদোয়া কিতে থাকিবেন। কথাটি এভাবে সঠিক নয়। খোলা বলতে মাথার উপরে খোলা বা চারিপিাশে খোলা কোনো স্তানে মলমুত্র পরত্যাগ করলে এ্ই বদদোয়ার কথা কোনো হাদিসে উল্লখ করা হয়েছে বলে যথাসাধ্য চেষ্টা করে জানতে পারি নি।মলমূত্র ত্যাগের সময় সতর অন্য দৃষ্টি থেকে আবৃত রাখা জরূরিঅন্য মনুষকে সতর দেখিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করতে,মলমূত্র ত্যাগের সময় কথা বলতে হাদিসশরীফে নিষেধ করা হয়েছে এছারা মানুষের রাস্থায় ,মানুষের ব্যবহারের ছায়ায় মলত্যাগকে হাদীস শরীফে অভিশাপের বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. ফরয গোসল দেরী করা
গোসল ফরয হলে তা দেরী করলে পাপ হবে বা সেই অবস্থায় মাটির উপর হাটলে মাটি অভিসাপ দিবে ইত্যাদি সকল কথা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
গোসল ফরয হলে তা যথাসম্ভব দ্রুত সেরে নেয়া উত্তম।তবে গোসলের মূল প্রযোজনীয়তা হলো সালাত আদায় বা কুরআন পাঠের জন্য। এছারা মুমিন গোসল ফরয থাকা অবস্থায় সকল কর্ম যিক্র ও দোয়া করতে পারেন।কাজেই নামাজের ক্ষতি না হলে গোসল দেরি করলে গোনাহ হয় না।রাসুলুল্লাহ (সা) অনেক সময় প্রধম রাত্রিতে গোসল ফরয হলেও গোসল না করে শুয়ে পড়তেন এবং শেষ রাত্রিতে গোসল করতেন বলে সহীহ হদীসে বর্ণিত হয়েছে।
৫. শবে বরাত বা শবে কদরের গোসল
লাইলাতুল বারাআত ও লাইলাতুল কাদর-এর জন্য গোসল করার বিষয়ে যা কিছু বলা হয় তা সবই বানোয়াট।এই দু্ই রাত্রির জন্য গোসলের কোনো ফজিলত সহীহ হাদীসে বর্ণথ হয় নি।রন পরবর্তিতে এ বিষয়ক জাল হাদীসগুলি উল্লেখ করার আশা রাখি।
৬. ওযু, গোসল ইত্যাদির নিয্যাত
নিয়্যাত নামে ‘নাওইতু আন…’ বলে যা কিছু প্রচলিত আছে সবই পরবর্তী যুগের আলীমদের বানানো কথা। এগুলিকে হদীস মনে করলে বা রাসূলুল্লাহ(সা) এরুপ নয়্যাত পাঠ করতেন বা এভাবে নিয়্যাত করতে বলেছেন বলে মনে করলে বা দাবী করলে তা ভিত্তিহীন মিথ্যা দাবী হবে। নিয়্যাত অর্থ উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা(intention)। উদ্দেশ্যের উপরেই ইবাদতের সওয়াব নির্ভর করে। নিয়্যাত মানুষের অভ্যন্তরের অভ্যন্তরীন সংকল্প বা ইচ্ছা, যা মানুষকে উক্ত কর্মে উদ্বুদ্ধ বা অনুপ্রানিত করেছে।নিয়্যাত করতে হয়,বলতে বা পড়তে হয় না।রাসূলুল্লাহ(সা)কখনো জীবনে একটিবারের জন্যও ওযু,গোসল,নামায,রোযা ইত্যাদি কোনো ইবাদতের জন্য কোনো প্রকার নিয়্যাত মুখে বলেননি। তার সাহাবীগণ, তাবেয়ীগণ,ইমাম আবু হানিফা(রহ:)-সহ চার ইমাম ও ফকীহ কখনো কোনো ইবাদতের নিয়্যাত মুখে বলেননি বা বলতে কাউকে নির্দেশ দেননি। পরবর্তী যুগের কোনো কোনো আলিম এগুলি বানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে মুখের উচ্চারনের কোনো মূল্য নেই মনের মধ্যে উপস্থিত নিয়্যাতই মূল, তবে এগুলি মূখে উচ্চারন করলে মনের নিয়্যাত একটু দৃঢ় হয়। এজন্য এগুলো বলা ভাল। তাদের এই ভালোকে অনেকেই স্বীকার করেননি। হযরত আলফ সানী ওযু,নামায,রোযা ইত্যাদি যে কোনো ইবাদতের জন্য মুখে নিয়্যাত করাকে খারাপ বিদ’আত হিসাবে নিন্দা করেছেন এবং কঠোর ভাবে এর বিরোধিতা করেছেন। আমি “এহইয়াউস সুনান” গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
৭. ওযুর আগের দোয়া
আমাদের দেশে প্রচলিত বিভিন্ন পুস্তকে ওযুর পূর্বে পাঠ করার জন্য নিম্নের দোযাটি শেখানো হয়েছে আরবী(*******)
এ্ দোয়াটি বানোয়াট। বিভিন্ন হাদীসে ওযুর পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটি হাদীসে ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল-হামদুলিল্লাহ’(আল্লাহর নামে ও প্রশংসা আল্লহ নিমিত্ত)বলার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে উপরের এই দোয়াটির কথা কোনো হাদীসে আছে বলে জানা যায় না।
৮. ওযুর ভিতরের দোয়া
বিভিন্ন পুস্তকে ওযুর পত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পঠের জন্য বিশেষ দোয়ার কথা উল্লেখ করা হযেছে।হাত ধোয়ার দোয়া,কুলি করার দোয়া, নাক পরিষ্কার করার দোয়া…ইত্যাদি। এই দোয়ার ভিত্তি যে হাদীসটি বানোয়াট। ইমাম দারাকুতনী,ইমাম নববী,ইমাম সুয়ূতী,মোল্লা আলী কারী ও অন্যা্ন্য মুহাদ্দীস সকলেই হাদীসটিকে বানোয়াট ও ভিত্তীহিন বলে উল্লেখ করেছেন।৬০৬
৯.ওযুর সময়ে কথা না বলা
ওযুর সময়ে কথা বলা যাবে না, বা কথা বললে কোনোরূপ অন্যায় হবে এ্ মর্মে কোনো হাদীস নির্ভরযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য সনদে বর্ণূত হয় নি।
এ বিষয়ে যা কিছু বলা হয় তা কোনো কোনো আলিমের কথা মাত্র।
১০.ওযুর পরে সুরা ‘কাদ্র’ পাঠ করা
সহীহ হাদীসে ওযুর পরে পাঠ করার জন্য একাধিক দোয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। ‘রহে বেলায়েত’ গ্রন্থে আমি দোয়াগুলো সনদ সহ আয়োচনা করেছি। আমাদের দেশে অনেক পুস্তকে এ সকল সহীহ দোয়ার বদলে কিছু বানোয়াট কথা লেখা হয়েছে। কোনো কোনো গ্রন্থে লেখা আছে “অজু করার পর ছুরা কদর পাঠ করলে সিদ্দিকের দরজা হছিল হইবে।
আলীর প্রতি রাসূলুল্লাহ(সা)-এর ওসীয়ত’ নামক জাল হাদীসটিতে এইরূপ কিছু কথা উল্লেখ আছে। ওসীয়তটির বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
২.১০.২. মসজিদ ও আযান বিষয়ক
১. মসজিদে তৈরির উদ্দেশ্য হলো, সালাত আদায় করা,আল্লাহর জিকির আদায় করা,দ্বীনের আলোচনা করা ইত্যাদি মসজিদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ(সা) বলেনঃ আরবী(*****)
“এগুলিতে শুধুমাত্র আল্লাহর জিকির,সালাত, কুরআন তিলওয়াতের জন্য”।(মুসলিম, আস-সহীহ ১/২৩৬)।
মসজিদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং হারানো বা পলাতক কোনো কিছু খোজ করতে, উচ্চস্বরে কথা বলতে বা চৎকার করতে হাদীস শরীফে নিষেধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সাধারণ জাগতিক কথাবার্তা বলার কোনো স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা কোনো সহীহ হাদীসে বর্নিত হয় নি।সাহাবী গণ মসজীদের মধ্যই কবিতা পাঠ করতেন। জাবির (রা)বলেন:
রাসূলুল্লাহ(সা) যে স্থানে ফজরের সালাত ।আদায় করতেন সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। সূর্যোদয় পরে তিনি উঠতেন। তার বসা অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম কথাবার্থা বলতেন,জাহেলী যুগের কথা আলোচনা করতেন,কবিতা পাঠ করতেন এবং মুচকি হাসতেন।আর তিনি শুধু মুচকি হাসতেন। (সহীহ মুসলিম, ১/৪৬৩)।
আমাদের দেশে প্রচলিত কয়েকটা জাল হাদীস নিম্নরূপ:
“যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্থা বলবে আল্লাহ তার চল্লিশ বৎসরের আমল বাতিল করে দিবনে।”
আল্লামা সগনী, তাহের ফাতানী, মোল্লা আলী কারী, আজলূনী প্রমূখ মূহাদ্দীস একবাক্যে হাদীসকে জাল বলেছেন। মোল্লা কারী বলেন: এই কথাটি যেমন সনদগতভাবে বাতিল, তামনি এর অর্থও ইসলাম বিরোধী।”
অনুরুপ আরেকটি জাল ও বানোয়াট কথা:
“মসজিদে কথাবার্তা নেক আমলন খায়,যেরুপ কাঠ আগুন খায়।”
কোনো কোনো প্রসিদ্দ আলেম জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে এই বাক্যটিকে হাদীস উল্লেখ করেছেন। আল্লামা ইরাকী,ফাইরোযআবাদী,তাহের ফাতানী,মোল্লা আলী কারী ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দীস একমত যে; এই বাক্যটি বানোয়াট ও ভিত্তীহিন ও সনদবীহিন একটি কথা যা রাসূলুল্লাহ(সা) এর নামে বলা হয়েছে।
২.মসজিদে বাতি জ্বালানো ও ঝাড়ু দেওয়া
মসজিদ পরিষ্কার করা, ঝাড়ু দেওয়া, বাতি জালানো ইত্যাদি সাধারণভাবে নেক কর্ম । কিন্তু অন্যান্য সকল বিষয়ের মত এ বিষয়েও বিশেষ পুরুষ্কারের নামে কিছু জাল হাদীস বানানো হয়েছে। মসজিদে বাতি জ্বালালে এত এত সওয়াব, বা এত হাজার ফিরিশতা দোয়া করবে, এত হজ্জ বা উমরার সওয়াব মিলবে…………. সকল কথা বানোয়াট।
৩. আযানের সময় বৃদ্ধাঈুলি চোখে বুলানো আমাদের দেশে অনেক ধার্মিক মুসলমান আযানের সময় “আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বাক্যটি শুনলে দুই হাতের আঙুলে চুমু খেয়ে তা তা দিয়ে চোখ মুছেন।এই মর্মে একটি বানোয়াট ও মিথ্যা হাদীসকে সত্য মনে করেই তারা এই কাজ করেন। এই বানোয়াট হাদীসটি বিভিন্ন ভাবে প্রচারিত। এক বর্ণমালায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আযানের এই বাক্যটি শুনে মুখে বলবে: আরবী(*******)
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহম্মদ (সাঃ) তার বান্দা ও রাসূল, আমি সন্তুষ্ঠ ও পরিতৃপ্ত হয়েছি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে গ্রহণ করে” আার এই কথাগুলি বলার সাথে সাথে দুই হাতের শাহাদত আঙুলের ভিতরের দিক দিয়ে তার দুই চক্ষু মুছবে তার জন্য শাফায়াত পাওনা হবে। কেউ কেউ বলেন : আযানের এই বাক্যটি শুনলে মুখে বলবে:
’’মারহাবা! আমার প্রিয়তম আমার চোখের শান্তি মুহম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহকে”, এরপর তার বৃদ্ধাঙুলিদ্বয়কে চুমু খাবে এবং উভয়কে তার দুই চোখের উপর রাখবে। যদি কেউ এরূপ করে তবে কখনো তার চোখ উঠবে না বা চোখের দৃষ্ঠিশক্তি নষ্ঠ হবে না।
এই জাতীয় সকল কথাই বানোয়াট । কেউ কেউ এ সকল কথা আবু বকর (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। মোল্লা আলী কারী বলেন, “আবু বকর (রা)থেকে বর্ণনা প্রমানিত হলে তা আমল করা যথেষ্ঠ হবে।” তবে হাদীসটি আবু বকর (রা)থেকে প্রমানিত নয়। ইমাম সাখাবী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বর্তমান যুগের অন্যতম হানাফী ফকীহ,মুহাদ্দিস ওসুফী আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাম লিখেছেন, তার উস্তাদ ও প্রখ্যাত হানাফী ফকীহ ও মুহাদ্দিস মুহাম্মদ যাহেদ আল- কাওসারীর গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে যে,মুল্লাআলী কারী এ বিষয়ে ইমাম সাখাবীর বিস্তারিত আলোচনা জানতে পারন নি। ফলে তার মনে দ্বিধা ছিল। প্রকৃত বিষয় হলো হযরত আবু বকর (রা) বা অন্য কোনো সূত্রে হাদীসটির কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায়নি মুহাদ্দিসগণ কমত হয়েছেন যে, এ বিষয়ক সকল বর্ণনা বানোয়াট। (ইমাম সাখাবী, আল-মাকসিদ, পৃ:৩৮৩-৩৮৪,নং১০২১, মুল্লা আলী কারী, আল-আসরার,পৃ:২১০,নং৮২৯, আল-মাসনূ’য় পৃ:১৩৪নং৩০০,যারকানী, মাখতাসারূল মাকসিদ,পৃ:১৭৪নং৯৪০, আল-আজলূনী,কাশফুল খাফা২/২০৬; শাওকানী,আল-ফাওয়াইদ১/৩৯)।
এখানে তিনটি বিষয় লক্ষনীয়:
প্রথমত, রোগমুক্তি, সুস্থতা ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন ‘আমল’ অনেক সময় অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যবহার করা হয়। জন্য এই প্রকারের আমল করে ফল পাওয়ার অর্থ এই নয় যে, এগুলি হাদীস দ্বারা প্রমানিত। কেউ রোগমুক্তি উদ্দেশ্যে কোনো শরীয়ত সম্মত আমল করতে পারেন।তবে বিশুদ্ধ সনদ ছাড়া এরূপ ‘আমল’ –কে হাদীস বলা যায় না।
দ্বিতীয়ত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কেমহস্সত করা ঈমানের অংশ ও অত্যন্ত পড় নেককর্ম। যদি কেউ হাদীসটির জালীয়াতী অবগত অবগত না হওয়ার কারনে এর উপরে আমল করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম শুনে হৃদয়ে মহব্বত ও ভলবাসা নিয়ে এভাবে আঙুলে চুমু খান,তবে তিনি এই জাল হাদীসে বর্ণীত সওয়াব না পেলেও,মূল মহব্বতের সওয়াব পাবেন,ইনশা আল্লাহ।তবে জেনেশুনে জাল হাদীসে উপর আমল করা জায়েয নয়।
তৃতীয়ত,এই জাল হাদীসের পরিবর্তে মুমিন একটি সহীহ হাদীসের উপর আমল করতে পারেন।দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে চোখ মুছার বিষয়টি বানোয়াট হলেও উপরের বাক্যগুলি মুখে বলার বিষয়ে অত্যন্ত বিশুদ্ধ হাদীস বর্নিত হয়েছ। রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেছেন:যদি কেউ মুআযযিনকে শুনে বলে:
“এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই,তিনি একক,তাঁর কোনো শরীক নেই।এবং মুহাম্মদ(সা:) তার বান্দা ও রাসূল। আমি তুষ্ট ও সন্তুষ্ট আছি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে,ইসলাম কে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মদকে(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)নবী হিসাবে।”রাসূলুল্লাহ (সা:) বেলেন ,যদি কেউ উপরেবাকগোলো বলে,তবে তার সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (মুসলিম ১/২৯০,নং৩৮৬,ইবনু খুযাইমাহ ১/২২০, ইবনু হিব্বান ৪/৫৯১)।
৪.আযানের জাওয়াবে সাদাকাত ও বারিরতা
আমাদের দেশে প্রচলন হলো,ফয়রের আযানে ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’শুনলে উত্তরে বলা হয়: “সাদাকাত ও বারিরতা(বারারতা)’।এই কথাটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
বাখারী ও মুসলিম বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : “মুয়াযযিনকে যখন আযান দিতে শুনবে তখন মুয়াযযিন যা যা বলবে তোমরা তাই বলবে।” (বুখারী ১/২২১,মুসলিম ১/২৮৮)।
অন্য হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা বলেছেন,রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কাছে ছিলাম। তখন বিলাল দাড়িয়ে আযান দিলেন। বিলাল আযান শেষ করলে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন :“এই ব্যক্তি (মুয়াযযিন) যা বলল, তা যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”(হাদীসটি হসান। সহীহ ইবনু হিব্বান ৪/৫৫৩,মুসতাদরাক হকীম ১/৩২১ মুসনাদ আহমদ ২/৩৫২,নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ১/৫১০,৬/১৪৬ সহীহুত তারগীব ১/১৭৭)।
উপরের হাদীসদ্বয় থেকে বুঝা যায় যে,মুয়াযযিন যা বলবেন আযান শ্রবণকারী অবিকল তাই বলবেন। কোনো ব্যতিক্রম বলতে বলা হয়নি। তবে মুসলিম সংকলিত অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা:) একত্রে একটি ব্যতিক্রম শিক্ষা দিয়েছেন, তা হলো, মুয়াযযিন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বললে, শ্রোতা ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবেন। এই হাদীসে তিনি বলেছেন “এভাবে যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের সাথে সাথে আযানের বাক্যগুলো অন্তর থেকে বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”(সহীহ মুসলিম১/২৮৯,নং৩৮৫)।
তাহলে, উপরের দুইটি বাক্য ছাড়া বাকি সকল বাক্য মুয়াযযিন যেভাবে বলবেন’ জওয়াব দানকারীও সেভাবেই বলবেন। ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ বাক্যটিও এর ব্যতিক্রম নয়।এর জওযাবেও এই বাক্যটিই বলতে হবে এই বাক্যটির জন্য ব্যতিক্রম কিছু বলতে হবে তা কোনো হাদীসে বলা হয় নি। এজন্য মুল্লা আলী কারী “সাদাকাত ও বারিরতা” বাক্যটিকে জাল হদীসে তালিকাভুক্ত করে বলেছেন: “শাফেয়ী মযহাবের লোকেরা এই বাক্যটি বলা মুস্তাহাব বলেছেন, তবে হাদীসে কোনো অস্তিত্ব নেই।”(দেখুন:মুল্লা আলী কারী,আল আসরারূল মারফুয়া ১৪৬পৃ)।
৫.আযানের দোয়ার মধ্যে ‘ওয়াদ দারাজাতার রাফীয়াহ’
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: যখন তোমরা মুয়াযযিনের আযান দিতে শুনব,তখন সে যরুপ বলে তদ্রূপ বলবে।এরপর আমার উপর সালাত পাঠ করবে; যে ব্যক্তি আমার উপর সালাত পাঠ করবে,আল্লা তাঁকে দ্শবার সালাত(রহমত) প্রদান করবেন।এরপর আমার জন্য‘ওসিলা চাইবে;কারণ‘ওসিলা’ হলো জান্নাতের এবন একটি মর্যাদা যা আল্লহর একজন মাত্র বান্দাই লাভ করবেন এবং আমি আশা করি আমিই হব সে বান্দা যে ব্যেক্তি আমার জন্য ‘ওসিলা’প্রার্থনা করবে তাঁর জন্য শাফায়ত প্রাপ্য হয়ে যাবে।(সহীহ মুসলিম ১/২৮৮,নং৩৮৪)।
অন্যান্য হাদীসে তিনি ‘ওসিলা’ প্রার্থনার নিম্নরূপ পদ্ধতি শিখিয়েছেন:
আরবী(*****) “হে আল্লাহ,এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং আসন্ন সালতের মালিক, আপনি প্রদান করূন মহাম্মদ(সা:)ওসিলা এবং মহামর্যাদা এবং তাকে উঠান সম্মানিতি অবস্থানে,যা আপনি তাকে ওয়াদা করেছেন।”
তিনি বলেছেন,“ মুয়াযযিনের আযান শুনে যে ব্যক্তি উপরের বাক্যগুলি বলবে,তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফায়ত প্রাপ্য হয়ে যাবে।” (সহীহ বুখারী ১/২২২,নং৫৮৯,৪/১৭৪৯,নং৪৪৪২)।
ইমাম বুখারীসহ সকল মুহাদ্দিস এভাবেই দোয়াটি সংকলন করেছেন। আমাদের দেশে প্রচলিত দোয়ার মধ্যে দুটি বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে,যা উপরের দোয়াদিতে নেই। প্রথম বাক্যটিতে(ওয়াল ফাদীলাতা)-র পরে …………..(এবং সুউচ্চ মর্যাদা)বলা এবং দ্বীতিয় বাক্যটির দোয়ার শেষে:……………….(নিশ্চই আপনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না)বলা এই দ্বীতিয় বাক্যদি একটি দূর্বল হাদীসে বর্ণীত হয়েছে। (বাইহকী,আস-সুনানুল কুবরা ১/৪১০(৬০৩-৬০৪)। আর প্রথম বাক্যটি(ওয়াদ দারাজাতার রাফী’আহ)একেবারেই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা হাদীস নির্ভর। ইবনু হজার,সাখাবী,যারকানী,মুল্লা আলী কারী ও অন্যান্য মুহাদ্দীস বলেছেন যে এই বাক্যটি (ওয়াদ দারাজাতার রাফী’আহ) বানোয়াট। (ইবনু হাজার,তালখীসূল হবীর ১/২১১, সাখাবী,আল-মাকসিদ,পৃ ২২২-২২৩,যারকানী,মুখতাসারূল মাকাসিদ,পৃ৭০-৭১.আল আসরার,পৃ ১২২.মাবারাকপুরী,তুহফাতুল আহওয়াযী,পৃ১/৫৩২)।
৬.আযানের সময় কথা বলার পরিনতি
আযানের সময় কথা বলার নিষেধাঞ্জা বুঝাতে এই ‘হাদীসটি’ বলা হয়: “যে ব্যক্তি আযানের সময় কথা বলবে,তার ।ঈমান বিনষ্ট হওযার ভয় রয়েছে।”
আল্লামা সাগনী,আজলূনী প্রমুখ মুহাদ্দীস উল্লেখ করেছেন যে,বাক্যটি হাদীসের নামে বানানো ভিত্তিহীন জাল কথা।আযানের সময় কথা বলা যাবে না মর্মে কোনো নির্দেশনা হাদীসে বণিত হয়নি। (সাগনী,আল-মাউদূআত,পৃ.৮০;আজলূনী,কাশফুল খাফা ২/২৯৫,৩১৫)।
২.১০.৩ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বিষয়ক
সালাতের ৫ প্রকার ফযীলত ও ১৫ প্রকার শাস্তি
কুরআন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, ৫ ওয়াক্ত ফরয সলাত যথাসময়ে আদায় করা মুমিনের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেস্ঠ দাযিত্ব। সালাতই মামিনের পরিচয এবং ঈমান ও কুফরির মধ্যে পার্থক্য। সালাত পরিত্যাগকারী কাফিরদের দলভুক্ত বলে গণ্য করা হবে। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব গ্রহন করা হবে। এভাবে অগনিত সহীহ হাদীস থেকে আমরা ফরয সালাতের গুরুত্ব ও সালাতের অবহেলা ভয়াভহ পরিণতি জানতে পারি।
কিন্তু সাধারন মানুষদের অবাক করার জন্য জালিয়াতিগণ এ বিষয়ে আরো অনেক কথা বানিয়ে সমাজে প্রচার করেছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, সমাজে প্রচলিত অনেক গ্রন্থেই কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীসের পরিবর্তে এই সকল বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথাগুলি লেখা হয়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের ক্যালেন্ডার, পোষ্টার ইত্যাদিতেও এই সকল বানোয়াট কথাগুলো লিখে প্রচার করা হয়।এই বিষয়ে একটি জাল হাদীস আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। এই জাল হাদীসের সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ:
যে ব্যাক্তি যথারীতি ও গুরূত্ব সহকারে নামায আদায় করবে আল্লাহ পাক থাকে পাঁচ প্রকারে সম্মানিত করবেন:রূজি রোজগার ও জীবনের সংকীর্নতা হতে মুক্তি দান করবেন, সে ব্যাক্তি পুলছেরাতের উপর দিয়ে বিদ্যুতের মত পার হয়ে যাবে এবং বিনা হিসাবে বেহেসাতে প্রবেশ করবে।আর য়ে ব্যাক্তি নামাজের ব্যাপারে অলশতা করে তাকে পনের প্রকার শাস্তি দেওযা হবে।তন্মধ্যে পাঁচ প্রকার দুনিয়াতে, তিন প্রকার মৃত্যুর সময় তিন প্রকার কবরে এবং তিন প্রকার কবর হতে বের হওয়ার পর।নামাজ শিক্ষা,আমলয়াত ইত্যাদি বইয়ে পাওয়া যায়। এজন্য এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাগুলি লিখে কলেবর বাড়াচ্ছি না।
এই দীর্ঘ হাদীসটি পুরোটাই ভিত্তিহীন ও জাল। কোনো হাদীস গ্রন্থে এই হাদীসটি পাওয়া যায় না। পরবর্তী যুগে কোনো কোনো আলিম তাদের ওয়ায নসীয়ত মূলক গ্রন্থে অন্য সকল প্রচলিত কথার সাথে এই কথাগুলিও হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হদীসের ইমামগণ স্পষ্ঠরূপে উল্লেখ করেছেন যে, এই কথাগুলি বাতিল ও জাল কথা। কোন ব্যক্তি এই জালিয়াতি করেছে তাও তাঁরা উল্লেখ করেছেন। ইমাম যাহাবী, ইবনু হাজার আসকালানী সয়ূতি, ইবনু ইরাক প্রমুখ মুহাদ্দিস এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।(যাহাবী, মীযানুল,ই’তিদাল৬/২৬৪;ইবনু হাজার,মীযানুল,ই’তিদাল৫/২৯৫;সুয়ুতি, যাইলুল লাআলী,পৃ৯৯ ইবনু ইরাক,তানযীহ২/১১৩-১১৪)। শাইখুল হাদীস আল্লামা মুহম্মদ যাকারিয়া কান্ধলভি (রাহ) তার ‘ফাযায়েলে নামায’ গ্রন্থে এই জাল হাদীসটি আরবী ইবারত-সহ পুরোপুর উল্লেখ করেছেন। তিনি হাদীসটি উল্লেখ করার আগে বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন, এই কথাটি নাকি হাদীসে আছে…………………..। হাদীটি উল্লেখ করার পরে তিনি সংক্ষেপে বলেছেন যে, ইমাম যাহাবী, মাম সয়ূতী প্রমুখ মুহাদ্দিস এই হাদীসটি জালও বাতিল বলে উল্লেখ করেছেন। এর সনদের জালিয়াতদের পরিচয়ও তাঁরা তুলে ধরেছেন। (হযরত মাওলানা যাকারিয়া কান্দলভী, ফাযায়েলে আমল.পৃ ১০৪-১০৮)।
এভাবে আল্লামা যাকারিয়া (রাহ) হাদীসটির জালিয়াতির বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁর আমানত আদায় করেছেন। কিন্তু অনুবাদে এই আমানত রক্ষা করাহয়নি। আল্লামা যাকারিয়া (রাহ)-এর এই আলোচনা অনুবাদে উল্লেখ করা হয় নি। অনুবাদের শুরুতে বলা হয়েছে: “এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে ……”। শেষে শুধুমাত্র লেখা হয়েছে ‘যাওয়াজির ইবন হাজার মাক্কী (রাহ)’। সাধারণ পাঠক একে নির্ভরযোগ্য হাদীস বা রাসূলুল্লাহ(স) এর কথা বলে বিশ্বাস করেছেন। অথচ মুহাদ্দীসগণ একমত যে, কোনো জাল হাদীস কে ‘জাল’ বলে উল্লেখ না করে হাদীস বলে বর্ণনা করা কঠিন হারাম। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
২ সালাত মুমিনদের মি’রাজ
একটি অতি প্রচলিত ভিত্তিহীন জাল হাদীস
“নামাজ মুমিনদের মিরাজ স্বরূপ।” (মুফতী হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত পৃ.১২৩)।
এখনে লক্ষণীয় যে, এই অর্থের কাছাকাছি অনেক হাদীস রয়েছে! মুমিন সালাতের মধ্যে আল্লাহর সবছেয়ে নৈকট্য লাভ করেন, সালাতে দাঁড়ালে আল্লাহ মুমিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন …..ইত্যাদি সহীহ হদীসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এগুলির পরিবর্তে অনেকে এই ভিত্তিহীন কথটিকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে বলে তাঁর নামে মিথ্যা বলার অপরাধী হয়ে যান।
৩. ৮০ হুকবা বা ১ হুকবা শাস্তি
“মাজালিসুল আবরার নামক কেতাবে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, যেই লোক সময়মত নামায পরিল না, নামাযের ওয়াক্ত শেষ হইবার পরে কাযা পরিল, সেই লোকও জাহান্নামে ৮০ হুকবা শাস্তি ভোগ করিবে। ৮০ বৎসরে এক হুকবা আর ৩৬০ দিনে এক বৎসর। ৩৬০*৮০ = ২৮,৮০০ দিন। অতএব তাকে ২৮,৮০০ দিন এক ওয়াক্ত নামায না পড়বার জন্য দোজখের আগুনে জ্বলিতে হইবে। আর আখেরাতের দিন হইবে দুনিয়ার এক সহস্র বৎসরের তুল্য। এই হিসাবে এক ওয়াক্ত নামায তরককারীকে দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বৎসর জাহান্নামের আগুনে শাস্তি ভোগ করিতে হইবে।” (মুফতী হাবীব ছামদানী,বার চান্দের ফযীলত পৃ.১৩১।)
শাইখুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া কান্ধালভী (রাহ)এই হাদীসটিকে তার ‘ফাযায়েলে নামায গ্রন্থে নিম্নরূপে উদ্ধৃত করেছেন: “যে ব্যাক্তি ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করল না, এবং এরপর সে কাযা করল, তাকে জাহান্নামে এক হুকবা শস্তি প্রধান করা হবে। এক হুকবা ৮০ বৎসর এবং এক বৎসর ৩৬০ দিন এবং প্রত্যেক দিনের পরিমাণ এক হাজার বৎসরের সমান।”
হাদীসটি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন:
“মাজালিসুন আবরার নামক গ্রন্থে লেখা হয়েছে। আমার বক্তব্য হলো, আমার নিকটে যত হাদীস গ্রন্থ রয়েছে সেগুলির কোনো পুস্তকেই আমি এই হাদীসটি দেখতে পাই নি।…………….” (হযরত মাওলানা যাকারিয়া কান্দলভী,ফাযায়েলে আমল.পৃ ৫৭-৫৮)।
আর তাঁর মত একজন মুহাদ্দিস যে হাদীস কোনো হাদীসের গ্রন্থে খুজে পান নি সেই হাদীসের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। বস্তুত, হাদীসটি ভিত্তিহীন ও সনদহীন একটি বানোয়াট কথামাত্র। কোথাও কোনো প্রকার সহীহ, যরীফ বা বানোয়াট সনদেও এই কথাটি সংকলিত হয়নি। জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে শেষ যুগের কোনো কোনো আলীম তা নীজ গ্রন্থে সনদবিহীনভাবে সংকলন করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, একথাটি যে কোনো হাদীস গ্রন্থে নেই এবং ‘মাজালিসুল আবরার’ –এর লেখক সনদবীহীনভাবে তা উল্লেখ করেছেন, তা জানা সত্তেও ভাল আলীম ওয়াযে- আলোচনায় এবংলিখনিতেএই ‘হাদীস’ ও অনুরুপ অনেক জাল ও দুর্বল হাদীস উল্লেখ করেন। মানুষের হেদায়তের আগ্রহেই তারা তা করেন। মনে হয়, তারা চিন্তা করেন, কুরআন কারীমে হাজার হাজার আয়াত এবং প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থসমূহে হাজার হাজার সহীহ হাদীস মানুষদের হেদায়াত করতে আর সক্ষম নয়। কাজেই এগুলির পাশাপাশি কিছু দুর্বল (!) হাদীসেও আমাদের না বলে উপায় নেই!!
৪.জামাতে সালাত আদায়ে নবীগণের সাথে হজ্জ
জামাতে সালাত আদায় করা মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। কুরআনে মুমিনগণণকে একত্রে সালাত আদায় করার নার্দেশ দেওয়া হয়েছে। অগণিত সহীহ হাদীসে জামাতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামাত ছেড়ে একা সালাত আদায়কারীকে মুনাফিক বলে চহ্নিত করা হয়েছে। আযান শোনার পরেও যে ব্যক্তি অসুস্থতা বা ভয়ের ওযর ছাড়া জামাতে না এসে একা সালাত আদায় করবে তার সালাত কবুল হবে না বলে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে।
‘জামাতে সালাত আদায়ের’ বিধান সম্পর্কে ফিকহী পরিভাষাগত মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন সুন্নতে মুয়াক্কাদা, কেউ বলেছেন ওয়াজিব ও কেউ বলেছেন ফরয। এই মতভেদ একান্তই পরিভাষাগত। কারণ সকলেই একমত যে, পুরুষের জন্যওযর ছাড়া ফরয সালাত একা আদায় করলে কঠিন গুণাহ হবে। সালাত হবে কি না সে বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে।
এ সকল সহীহ হাদীসের পাশাপাশি জালিয়াতগণ এবিষয়ে অনেক জাল হাদীস তৈরি করেছে । আর এ বিষয়েও সহীহ হাদীসগুলি বাদ দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাল হাদীসই বই পুস্তকে লেখা হয় ওওয়াযে বলা । সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে যে, ইশা ও ফজরের সালাত জামাতে আদায় করলে সারারাত্র তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের সওয়াব হবে, ফজরের সালাত জামাতে আদায় করলে আল্লাহর দায়িত্বে থাকা যাবে…………ইত্যাদি। কিন্তু এ সকল ‘সামান্য’ সওয়াবের কথায় মন না দিয়া জালিয়াতগন বানিয়েছে: “যে ফযরের সালাত জামাতে আদায় করল সে যেন আদম (আ)এর সাথে ৭০ বার হজ্জ করল………….।” (সয়ূতি, যাইলুল লাআলী, পৃ.৮৩ সাগানী, আল-মাউদূ আত পৃ ৪২; ফাতানী , তাযকিরা, পৃ. ৩৯,১০৬; শাওকানী, আল –ফাওয়াইদ১/৫৫)। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তের সাথে একজন নবীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে…………..।
অনরুপ বানোয়াট কথার মধ্যে রয়েছে: যে ব্যাক্তি ফযর ও ইশার সালাত জামাতে আদায় করল সে যেন আদমের(আ) পিছনে নামায আদায় করল …। এভাবে এক এক সালাতের জন্য এক এক নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে…..।(অধ্যাপিকা কামরুন নেসা দুলাল , নেক কানুন, ১০২-১০৩)।
৫. মুক্তাদি আলিমের পিছনে সালাত নবীর পিছনে সালাত
জামাতে সালাত আদায়ের কারণে সওয়াব বৃদ্ধির কথা সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি। বিভিন্ন হাদীসে কুরআনের তিলাওয়াত ও জ্ঞানে পারদর্শি, হাদীসের জ্ঞানে পারদর্শি, হিজরতও অন্যান্য নেক আমলে অগ্রবর্তী ব্যাক্তিগণকে ইমামতি প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ইমামের ‘তাকওয়া’ বা ইলমের কারণে মুক্তাদিগণের ‘সাওয়াব’বা ‘বরকত’ বেশি হবে, এইরূপ অর্থে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি।এই অর্থে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সবই অত্যন্ত যয়ীপ অথবা বানোয়াট। এইরূপ একটি ভিত্তিহীন কথা:
“যে ব্যক্তি কোনো মুত্তাকি আলিমের পিছনে সালাত আদায় করল, সে যেন একজন নবীর পিছনে সালাত আদায় করল।”
ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হেদায়া’-র প্রণেতা আল্লামা আলী ইবনু আবী বাকর মারগীনানী(৫৯২হি) জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে এই কথাটিকে হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এই কথাটি কোনো হাদীস নয়। কোনো সহীহ বা যয়ীফ সনদে তা কোনো গ্রন্থে সংকলিত হয় নি। এজন্য আল্লামা যাইলয়ী, ইরাকী, ইবনু হাজার, সয়ূতী, সাখাবী, তাহের ফাতানী, মোল্লা আলী কারী, আজলূনী প্রমুখ মুহাদ্দিস এই কথাটিকে জাল হাদীস হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন। (মারগীনানী, হেদায়া১/৫৭; যাইলায়ী, নাসবুর ,রাইয়াহ ২-২৬; ইবনু হাজার , আদ-দিরাইয়া ১/১৬৮; সাখাবী, আল-মকসিদ, পৃ.১৪৭ ,২৩৫; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৩৭,১২২, ৩৩৭; তাহের ফাতানী, তাযকিরাতুল মাউদূ‘আত, পৃ.৪০; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৫৫)।
৬. আলীমের পিছনে সালাত ৪৪৪০গুণ সওয়াব
এই জাতীয় আরেকটি বানোয়াট কথা হলো,
‘আলীমের পিছনে সালাত ৪৪৪০ গুণ সওয়াবপাওয়া যায়।’ (মোল্লা আলী কারী,আল-মাসূন,পৃ ১৫২; আল-আসরার, পৃ ১৪৭)।
৭.পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের রাক‘আত সংখ্যার কারণ
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের রাকা‘আত সংখ্যা ১৭ হলো কেন, ফর ২ রাকা‘আত, যুহর ৪ রাকা‘আত, আসর ৪ রাকা‘আত, মাগরীব ৩ রাকা‘আত ও ইশা ৪ রাকা‘আত হলো কেন, বিতর ৩ রাকা‘ত হলো কেন, ইত্যাদি বিষয়ে প্রচলিত সকল কথাই ভিত্তিহীন ওমিথ্যা। অনুরূপভবে বিভিন্ন ওয়াক্তের সালাতকে বিভিন্ন নবীর আদায় করা বা প্রতিষ্ঠিত বলে যে সকল গল্প বলা হয় সবই ভিত্তিহীন। এই জাতীয় অনেক ভিত্তিহীন কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত। এখানে একটি গল্প উল্লেখ করছি।
আমাদের অতি প্রসিদ্ধ কোনো কোনো পুস্তকে লেখা হয়েছে: বেতের নামাজ ওয়াজিব হইবার কারণ এই যে , এরশাদুত্বালবিন কিতবে লিখিত আছে হযরত (সাঃ) মেরাজ শরীফে যাইবার সময়ে যখন বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত তাশরীফ নিয়াছিলেন তকন সমস্ত পয়গম্বরের রুহ মুবারক হযরত (সাঃ)- এর সাক্ষাত ওআশির্বাদের জন্য আসিলে জিব্রাইল (আ) এর আদেশানুযায়ী হযরত (সাঃ) ইমাম হইয়া এক রাকাত নামায পরিলেন। তার পর মিকাইল (আ) ৭০ হাজার ফেরশতা লইয়া হযরত (সাঃ)-এর মোলাকাত ও দোয়ার প্রত্যাশী হইলে জিব্রাইল (আ)-এর আদেশ অনুযায়ী রাসূল (সাঃ) পুণরায় আরও এক রাকাত নামায পরড়লেন। ইহার পর ইস্রাফীল (আ) ৭০ হাজার ফেরেশতা লইয়া হযরত (সাঃ) – এর দোওয়ার প্রত্যাশী হইলে জিব্রাইল (আ) –এর হুকুম অনুযায়ী হযরত (সাঃ) তাহাদিগকে মুক্তাদি করিয়া এক রাকাত নামায পরড়িলেন। অতঃপর আজরাঈল (আ) বহু ফেরেশতা লইয়া এরুপ বাসনা করিয়া উপস্তিত হইলে জিব্রাইল (আ) বলিলেন, হে প্রিয় পয়গম্বর আপনি ইহাদিগকে সঙ্গে করিয়া দোওয়া কুনুত পাঠ করান। হযরত (সাঃ) তাহাই করিলেন সুতরাং ঐ তিন রাকাত নামাযই আমাদের উপর ওয়াজিব হইয়াছে এবং বেতের নামাযে দোওয়া কুনুত পরাও ওয়াজিব হইয়াছে।” (মাও. গোলাম রহমান, মকছুদোল মো’মেনীন,পৃ. ১৯২-১৯৩)।
কোনো কোনো জালিয়াত ঘুরিয়ে বলছে যে, তিনি মি’রাজের রাত্রিতে মূসা (আ) এর জন্য এক রাক‘আত, তার নিজের জন্য আরক এক রাকা‘আত এবং শেষে আল্লাহর নির্দশে তৃতীয় রাকা‘আত সালাত আদায় করেন। (অধ্যাপিকা কামরুন নেসা দুলাল, নেক কানুন পৃ. ১১৫)।
৮. উমরী কাযা
সালাত বা নামায মুমিনের জীবনে একটি ফরয ইবাদত যার কোনো বিকল্প নেই বা কাফফারা নেই । যতক্ষন হুশ বা চেতনা থাকবে সালাত আদায় করেই হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, দৌড়িয়ে, হেটে, ইশারায় বা যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করতে হবে। চেতন রহিত হলে সালাত মাফ হয়ে যাবে।কোনো ববিশেষ কারনে একান্ত বাধ্য হে দুই এক এক ওয়াক্ত সালাত ছুটে গেলে কাযা করতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক ওয়াক্তের সালাতের কাযা করার কুনোরুপ বিধান হাদীস শরীফে দেয়া হয় ন। করণ, কোনো মুসলিম সালা পরিত্যাগ করতে পারে, এইরুপ চিন্তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবিগণের যগে ছিল না। সাহাবিগণ লতেন, একজন মুসলিম অনেক পাপ করতে পারে, কিন্তু মুসলিম কখনো সালাত পরিত্যাগ করতে পারে না।
পরবর্তী যুগের মুসলিম ও ফকীহগণ এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভবে এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করলে সে ব্যাক্তি কাফির বা অমুসলিমে পরিণত হবে। কেউ বলেছেন, যদি কোনো ব্যাক্তি ‘সালাতের’ গুরুত্ব পুরুপুরি স্বিকার করেন. কিন্তু লসতা হেতু ত্যাগ করেছেন, তিনি ‘কাফিরের মত’ কঠিন পাপী বলে গণ্য হবেন,কিন্তু ‘কাফির’ বা অমসলিম বলে গ্য হবেন না। আর কেউ যদি মনে করেন যে, ৫ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আদায় না করেও তিনি নামাযী মুসলমানদের মতই মুসলমান, তা হলে সেই ব্যাক্তি সালাতের গুরুত্ব অস্বিকার করার কারণে প্রকৃত কাফির বলে গণ্য হবেন।
সর্বাবস্থায় সকলেই একমত যে, ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ সময়ের সালাত পরিত্যাগ করলে বা কাযা করলে পরে সেই সালাতের ‘কাযা’ করার বিষয়ে হাদীসে কোনোরুপ বিধান দেওয়া হয় নি। তবে জালিয়াতগণ এ বিষয়ে কিছু জাল হাদীস তৈরি করেছে। এছাড়া সমাজে কিছু প্রচলিত ভিত্তিহীন কতাবার্তাও এ বিষয়ে প্রচলিত আছে। দুইটি ক্ষেত্রে তা ঘটেছে। প্রথমত, উমরী কাযা ও দ্বিতীয়ত, কাফফারা বা এস্কাত। এবিষয়ে জালিয়াতদের বনানো একটি হাদীস:
“এক ব্যাক্তি বলে , হে রাসূল, আমি সালাত পরিত্যাগ করেছি। তিনি বলেন, যা পরিত্যাগ করেছ তা ‘কাযা’ কর। লোকটি বলল, হে আল্লহর রাসূল , আমি কিভাবে তা ‘কাযা’ করব? তিনি বলেন, প্রত্যাক ওয়াক্তের সালাতের সাথে অনুরূপ আদায় কর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আগে, না পরে? তিনি বলেন, না, বরং আগে।”
মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এই হাদীসটি জাল, ভিত্তিহীন ওবাতিল।(জোযকানী,আল-আবাতিল ২/৪১৯; ইবনুল জাওযী, আল-মাওদূ‘আত ২/২৬; সুয়ূতি আল-লাআলী ২/২৪; ইবনু ইরাক , তানযীহ ২/৮০; শাওকানী, আল ফাওয়াইদ ১/৩৫)।
যদি কোনো মুসলমান দীর্ঘদিন সালাতে অবহেলার পরে অনুতপ্ত হয়ে নিয়মিত সালাত শুরু করেন, তখন তার প্রধান দায়িত্ব হবে বিগত দিনগুলির পরিত্যাক্ত সালাতের জন্য বেশি বেশি করে কাদাকাটি ও তাওবা করা । এরপর পাশাপাশি, অনেক ফকীহ বলেছেন যে, ঐ পরিত্যাক্ত সালাতগুলি নির্ধারন করে তা কাযা করবেন এভাবে ‘উমরী কাযা’ করার কোনো নির্ধারিত বিধান কুরআন বা হাদীসে নেই। এ হলো সাবধানতা মুলক কর্ম। আশা করা যায় যে, তাওবা ও কাযার মধ্যমে আল্লহ তার অপরাধ ক্ষমা করবেন।
৯. কাফফারা ও এস্কাত
ইসলামে সিয়াম বা রোযার জন্য কাফফারার বিধান রয়েছে। কোনো মুসলিম অপারগতার কারণে সিয়াম পালন করতেনা পারলে এবং কযার ক্ষমতাও না থাকলে তিনি তার প্রতিটি ফরয সিয়ামের পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবেন। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে প্রতিটি সিয়ামের পরিবর্তে ফীরর পরিমান খাদ্য প্রদানের বিধান দিয়েছেন ফকীহগণ।
কিন্তু সালাতের এরুপ কোনো কাফফারার বিধান হাদীসে দেওয়া হয় নি। কারণ সিয়ামের ক্ষেত্র যে অপারগতার সম্ভাবনা রয়েছে, সালাতের ক্ষেত্রে তা নেই। যতক্ষন চেতনা আছে, ততক্ষণ মুমিন ইশারা-ইঈিতে যেভাবে পাররবেন সেভাবেই তার সাধ্যানুসারে সালাত আদায় করবেন। কাজেই অপারগতার কোনো ভয় নেই। আর দীর্ঘস্থায়ীভাবে চেতনা রহিত হলে সালাতও রহিত হবে।
তবুও পরবর্তি যুগের কোনো কোনো ফকীহ সাবধানতামুলকভাবে সালাতের জন্যও কাফফারা বিধান দিয়েছেন। নিয়মিত সালাত আদায়কারি কোনো মুমিন যদি মৃত্যুর কারণে অসুস্থতার কারণে কিছু সালাত আদায় করতে না পারেন, তবে মৃত্যুর পরে তার জন্য সিয়ামের মত প্রত্যেক সালাতের বদলে একটি করে ‘ফিতরা’ প্রদানের বিধান দিয়েছেন।
কেউ কেউ এই বিধানকে আবার আজীবন সালাত পরিত্যাগকারী ও সালাতকে অবজ্ঞা ও উপহাসকারীর জন্যও প্রয়োগ করেছেন । এরপর খাদ্যের বদলে কুরআন প্রদানের এক উদ্ভট বিধান দিয়েছেন। প্রচলিত একটি পুস্তকে এ বিষয়ে লেখা হয়েছে: “এস্কাত করার নিয়ম এই যে , প্রথমত মুর্দার বয়স হিসাব করিবে। তম্মধ্য হইতে পুরুষের বার বছর ও স্ত্রী লোকের নয় বছর (নাবালেগী) বয়স বাদ দিয়ে বাকী বয়সের প্রত্যেক বৎসর ৮০ তোলা সেরের ওজনের ১০ মন ১০ সের ময়দার মুল্য ধরিয়া। ঐ মুল্যের পরিবর্তে নিজে এক জেলদ কোরআন শরীফ সকলের সম্মুখে কোনো গরীব মিছকীনের নিকট হাদীয়া করীয়া দিবে। এবং সকলের মোকাবেলা বলিবে যে, অমুকের উপরোক্ত হুকুমের জন্য খোদায়ী পাওনা এত হাজার , এত শত, এত মন ময়দার পরীবর্তে এই কালামুল্লা তোমার নিকট হাদীয়া করলাম। ঐ গরীব বা মিছকীন দুইজন সাক্ষির মোকাবেলা উহা কবুল করিলে ঐকালামুল্লাহ তাহারই হইয়া গেল এবং ময়দা আদায় করা তাহার উপর ওয়াজিব হইয়া গেল।” (মাও. গোলাম রহমান, মকছুদোল মো’মেনিন, পৃ. ১৮১)।
এই উদ্ভট নিয়মটি শুধু বানোয়াটই নয়, এ হলো আল্লাহর দ্বীনের সাথে চরম উপহাস! এর চেয়ে বড় উপহাস আর কি হতে পারে!! আজীবন সালাত আবমাননা করে, সালাতকে নিয়ে অবজ্ঞা উপহাস করে, মরার পরে এক জিলদ ‘কুরআন’ ফকীরকে দিয়েই মাফ!!!
২. ১০. ৪ . সুন্নাত-নফল সালাত বিষয়ক
ফরয সালাত যেমন মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, তেমনি নফল সালাতও সর্বশ্রষ্ঠ নফল ইবাদত বং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়।ফরযের অতিরিক্ত কর্মকে “নফল” বলা হয়। কিছু সময়ে কিছু পরিমান “নফল” সালাত পালন করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহ দিয়েছেন , বা তিনি নিজে তা পালন করেছেন । এগুলিকে ‘সুন্নাত’ ও বলা হয়। যে সকল নফল সালাতের বিষয়ে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেগুলিকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলা হয়। এ ধরণের কিছু সুন্নাত সালাত সম্পর্কে হাদীসে বেশি গুরুত্ব প্রদানের ফলে কোনো ইমাম ফকীহ তাকে ওয়াজিব বলেছেন।
বিভিন্নসহীহ হাদীসে সাধারণভাবে যত বেশি পারা যায় নফল সালাত আদায়ের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এক সাহাবী প্রশ্ন করেন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কর্ম কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
আরবী(*****)
“তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সাজদা করবে (বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করবে ); কারণ তুমি যকনই আল্লার জন্য একটি সাজদা কর , তকনই ার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন।” (মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৫৩)।
অন্য এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আবেদন করেন যে, তিনি জান্নাতে সহচর্য চন। তিনি বলেন:
“তাহলে বেশি বেশি সাজদা করে (নফল সালাত আদায় করে) তুমি আমাকে তোমার বিষয়ে সাহায্য কর।” মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৫৩)
অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আরবী(******)
“সালাত সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়, কাজেই যার পক্ষে সম্ভব হবে সে যেন যত বেশি পারে সালাত আদায় করে।” হাদীসটি হাসান।(তাবারানী, আল-মু‘জামু আউসাত ১/৮৪, হাঈসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৪৯, আলবানী, সহীহুত তারগীব১/২৫৬)।
সাধারণভাবে নফল সালাত ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বা স্থানে বিশেষ সালাতের বিষেশ মর্যাদা ও ফযীলতের কথাও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে আল্লামা মাওসিলির আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি যে, সহীহ হাদীস থেকে নিম্নলিখিত বিশেষ সুন্নাত-নফল সালাতের কথা জানা যায়: ফরয সালাতের আগে পরে সুন্নাত সালাত, তারাবীহ, দোহা বা চাশত, রাতের সালাত বাতাহাজ্জুদ, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ, তাহিয়্যাতুল ওযু, ইসতিখারার সালাত, কুসূফের সালাত, ইসতিখারার সালাত ওসালাতুত তাসবীহ। এছাড়া পাপ করে ফেললে দু রাকা‘আত সালাত আদায় করে তাওবা করার কথাও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। কটি যয়ীফ হাদীসে ‘সালাতুত হাজাত’ বর্ণিত হয়েছে। সুন্নাত-নফল সালাতের বিষয়ে সহহহাদীস থাক সত্ত্বেও জালিয়াতগণ এ বিষয়ে অনেক জাল হাদীস প্রচার করেছে। অন্যান্য জাল হাদীসের মতই এগুলিতে অনেক আকর্ষনীয় অবান্তর সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। জালিয়াতগণ দুটি ক্ষেত্রে কাজ করেছে।প্রথমত, সহীহ হাদীসে উল্লিখিত সুন্নাত-নফল সালাতগুলির জন্য বানোয়াট ফযীলত, সূরা বা পদ্ধতি তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সময়, স্থান বা কারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির সালাতের উদ্ভাবন করে সেগুলির কাল্পনিক সওয়াব, ফযীলত বা আসরের কাহীনি বানিয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত এ বিষয়ক কিছু ভিত্তিহীন কথাবার্তা বা জাল হাদীসস এখানে উল্লেখ করছি।
সহীহ হাদীসে প্রমানিত সুন্নাত-নফল সালাত বিষয়ক বানোয়াট হাদীসগুলি বিস্তারিত আলোচনা করতে চাচ্ছি না। শুধুমাত্র এ সকল সালাত বিষয়ক মনগড়া পদ্ধতিগুলি আলোচনা করব। এরপর জালিয়াতগণ মনগড়াভাবে যে সকল সালাত ও তার ফযীলতের কাহীনি বানিয়েছে সেগুল উল্লেখ করব।
১.বিভিন্ন সালাতের জন্য নির্দিষ্ট সূরা বা আয়াত নির্ধারন করা
সহীহ হাদীসে প্রমানিত এ সকল সালাতের কোনো সালাতের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সূরা বা আয়াত
নির্ধারন করে দেওয়া হয় নি। এ সকল সালাতের জন্য নির্ধারিত সুরা পঠের বিষয়ে , বা প্রথম রাকাতে অমুক সূরা বা অমুক আয়াত এতভাবে পাঠ করতে হবে বলে যা কিছু বর্ণীত হয়েছে সবই বানোয়াট বা ভিত্তিহীন কথা। কজেই ইসতিখারার সালাতের প্রথম রাকা’আতে অমুক সূরা দ্বীতিয় রাকাতে অমুক সূরা বা অমুক আয়াত, চাশতের সালাতের প্রথম ও দ্বীতিয় রাকাতে অমুক সূরা বা অমুখ আয়াত….শবে কদরের রাতের সালাতে অমুক সূরা বা অমুক আয়াত পড়তে হবে……ইত্যাদি সকল কথাই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। যে কোনো সূরা বা আয়াত দিয়ে এ সকল সালাত আদায় করা যাবে।কোনো নিদ্দিষ্ট সুরা বা আয়াত এ সকল সালাত আদায় করা যায়। কোনো নিদ্দিষ্ট সূরা বা আয়াতের কারনে এ সকল সালাতের সওয়াব বা বরকতের কোনো হেরফের হবে না।সূরা বা আয়াতের কারনে এ সকল সালাতের সওয়াব বা বরকতের কোনো হেরফের হবে না। সূরা বা আয়াতের দৈর্ঘ্য, মনযোগ, আবেগ ইত্যাদির কারনে সওয়াব কমবেশি হয়।
২.তারাবীহ সালাতের দোয়া ও মুনাজাত
রামাদানের কিয়ামুল্লাইলকে ‘সালাতুল তারাবীহ’ বা ‘বিশ্রামের সালাত’ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা:) এর যুগে তিনি নিজে ও সাহাবীগণ সাধারন রামাদান ও অন্যান্য সকল মাসেই মধ্যরাত থেকে শেষ রাত পর্যন্ত ৪/৫ ঘন্টা দাঁড়িয়ে একাকি কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ আদায় করতেন। খলীফা উমর(রা) এর সময় থেকে মুসলিমগণ জামাতে তারাবীহ আদায় করতেন। সাধারনত ইশার পর থেকে শেষ রাত বা সাহরীর পূর্ব সময় পর্যন্ত ৫/৬ ঘন্টা যাবৎ তাঁরা একটানা দাড়িয়ে দাড়িয়ে তারাবীহর সালাত আদায় করতেন।
যেহেতু এভাবে একটানা কয়েক ঘন্টা দাড়িয় সালাত আদায় করা খুবই কষ্টকর, সেহেতু পরবর্তী সময়ে প্রতি ৪ রাকা’আত সালাত আদায়ের পরে প্রায় ৪ রাকা’আত সালাতের সম পরিমান বিশ্রাম নেওয়ার রিতি প্রচলিত হয়। এজন্যই পরবর্তীকালে এই সালাত ‘সালাতুল তারাবীহ’ বলে প্রসিদ্ধ হয়। এই বিশ্রাম সালাতের বা ইবাদতের কোনো অংশ নয়। বিশ্রাম না করলে সওয়াব কম হবে বা বিশ্রামের কমবেশির কারণে সওয়াব কমবেশি হবে এইরুপ কোনো বিষয় নয়। বিশ্রাম মুলত ভালভাবে সালাত আদায়ের উপকরন মাত্র। বিশ্রামের সময়ে মুসল্লী যে কোনো কাজ করতে পারেন, বসে বা শুয়ে থাকতে পারেন বা দোযা বা যিকির –এ রত থাকতে পারেন। এ বিষয়ে কোনো নির্ধারিত কিছু নেই।
গত কয়েক শতাব্দী যাবত কোনো কোনো দেশে প্রতি চার রাকা’আত পরে একটি নির্দিষ্ঠ দোয়া পাঠ করা হয় এবং নির্ধারিত মুনাজাত করা হয়। অনেক সময় দোয়াটি প্রতি ৪ রাকা’আত অন্তে পাঠ করা হয়। দোয়াটি নিম্নরূপ: আরবী(*****)
মুনাজাতটি নিম্নরূপ:
আরবী(*******)
এ দোয়া ও মুনাজাত উভয়টিই বানোয়াট। সহীহ হাদীসে অনেক প্রকারের দোয়া ও মুনাজাত বর্ণিত হয়েছে।বিশ্রামের জন্য তো নয়ই,এমনকি অন্য কোনো স্থানে এই দুটি দোয়ার কোনো অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না।তবে একটি বানোয়াট ও জাল হাদীসে উপরের দোয়াটির অনুরূপ একটি দোয়া দেখতে পাওয়া যায়।এই জাল হাধীসটিতে বলা হয়েছে, আল্লাহর কিছু ফিরিশতা একটি নুরের সমুদ্রে এই দোয়াটি পাঠ করেন যে ব্যক্তি কোনো দিবসে মাসে ব বৎসরে এই দোয়াটি পাঠ করবেন সে এত এত পুরুস্কার লাভ করবে। (সয়ূতি, যাইলুল লাআলী, পৃ.১৪৭ ইবনু ইরাক,তানযীহ ২/৩২৬ আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/৫৩ ১/৫৩৮)।
আমাদের উচিত এ সকল বানোয়াট দোয়া না পড়ে এ সময়ে দুরুদ পাঠ করা। অথবা কুরআন তিলাওয়াত বা মাসনূন যিক্র-এ মসগুল থাকা।
কোনো কোনো প্রচলিত পুস্তকে তারাবীহের দুই রাকাত অন্তে নিম্নের পাঠ করতে বলা হয়েছে আরবী(**** ) (মাও.গোলাম রহমান,মকছুদোল মো’মেনীন পৃ ২২৮)।
এ দোয়াটি ভিত্তিহীণ ও বানোয়াট।
৩. সালাতুল আওয়াবীন
রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজে ও তার সাহাবীগণ মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি নফল আদায় করতেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণীত হয়েছে। হযরত হুযাইফা (রা) বলেন “আমি নবীজি(সা)-র কাছে এসে তার সাথে মাগরীবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরীবের পরে ইশার সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন।” হাদীসটি সহীহ। (ইবনু আবী শাইবা,মুসান্নাফ ২/১৫,নসাঈ,সুনানুল কুবরা ১/৫১,৫/৮০,সহীহুত)।
অন্য হাদীসে আনাস (রা) বলেন,সাহাবায়ে কেরাম মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সজাগ থেকে অপেক্ষা করতেন এবং নফল সালাত আদায় করতেন।”হাদীসটি সহীহ।হযরত হাসান বসরী বলতেন,ইশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাযও রাতের নামায বা তাহাজ্জুদের নামায বলে গণ্য হবে। (বাইহাকী,আস সুনানুল কুবরা৩/১৯,সুনানু আবী দাউদি২/৩৫,মাজমাউয যাওয়াইদ২/২৩০, ইবনু আবী শাইবা,আল মুসান্নাফ২/১৫,সহীহুত তারগীব ১/৩১৩)।
বিভিন্ন হদীসে আমরা দেখতে পাই যে,কোনো কোনো সাহাবী তবেয়ীগণের এই সময়ে সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ প্রধান করতেন। (মুসান্নাফু ইবনু আবী শাইবা, ২/১৪-১৬)।
এ সকল হাদীসের আলোকে জানা যায় যে মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়েমুমিন কিছু নফল সালাত আদায় করবেন। যিনি যত বেশি আদায় করবেন তিনি তত বেশি সওয়াব লাভ করবেন। এই সমযের সালাতের রাক’আত সংখ্যা বা বিশেষ ফযীলতে কোনো সহীহ হাদীসে বর্ণীত হয় নী। কিছু জাল বা অত্যন্ত যয়ীফ সনদে হাদীসে এই সময়ে ৪ রাক’আত,৬ রাক’আত,১০ বা ২০ রাক’আত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা বলা হয়েছে। যেমন , যে ব্যাক্তি এ সময়ে ৪ রাক’আত, সালাত আদায় করবে,সে এক যুদ্দের পর আরেক যুদ্দে জিহাদ করার সওয়াব পাবে।যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কোনো কথা বলা্র আগে ৬ রাক’আত,সালাত আদায় করবে তাঁর ৫০ বৎসরের গোনাহ ক্ষমা করা হবে। অথবা তাঁর সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। অন্য বর্ণনায় –সে ১২ বৎসর ইবাদত করার সমপরিমাণ সওয়াব অর্জন করবে।। যে ব্যক্তি এই সময়ে ১০ রাক’আত,সালাত আদায় করবে , তাঁর জন্য জান্নাতে বাড়ি তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি এ সময়ে ২০ রাক’আত,সালাত আদায় করবে , তাঁর জন্য আল্লাহ জান্নাতে বাড়ি তৈরি করবেন। এ সকল হাদীস সবই বানোয়াট বা অত্যন্ত যয়ীফ সনদে বর্ণীত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এ সময়ে ৬রাক’আত,সালাত আদায় করলে ১২ বৎসরের সওয়াব পাওয়ার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন হাদীসটি অত্যান্ত দুর্বল।কোনো কোনো মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন।(তিরমিযী ২/২৯৮ নং ৪৩৫,ইবনু মাজাহ ১/৩৬৯,নং১১৬৭,বইহাকী,আস সুনানুল কুবরা ৩/১৯,ইবনু আবী শাইবা,আল মুসান্নাফ২/১৪-১৫,বইহাকী শু’আবুল ঈমান৩/১৩৩,ইবনুল ,মুবারাক, আয-যুহদ পৃ.৪৪৫/৪৪৬,শাওকানী,নাইলূল আউতার৩/৬৫-67, মাজমাউয যাওয়াইদ২/২৩০)।
আমাদের দেশে এই ৬ রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে কোন্ সূরা পাঠ করতে হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলি সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে,যে, কোনো কোনো সাহাবী-তাবেয়ী বলেছেন,সালাতুল মাগরিবের পর সালাতুল ইশা পর্যন্ত যে নফল সালাত আদায় করা হয় তা ‘সালাতুল আওয়াবীন’ অর্থাৎ বেশি বেশি তওবাকারীগনের সলাত। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা:) চাশতের নামাযকে ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৪. সালাতুল হাজাত
ইমাম তিরমিযী তাঁর সুনান গ্রন্থে ‘সলাতুল হাজাত’ বা প্রয়োজনের সালাত বিষয়ে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। হাদীসটিতে বলা হয়েছে, আল্লাহর কাছে বা কোনো মানুষের কাছে কারো কোনো প্রয়োজন থাকলে সে ওযু করে দুই রাকজ’আত সালাত আদায় করবে এবং এর পর একটি দোয়া পাঠ করে আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন মেটোনোর জন্য পার্থনা করবে । ইমাম তিরমিযী বলেন,হাদীসটির একমাত্র বর্ণনাকারী ফাইদ ইবনু আব্দুর রহমান দুর্বল রাবী। এজন্য হাদীসটি দুর্বল এই ফাইদকে ইমাম বুখারী ও অন্যান্য মাহাদ্দিস মুনকার,মাতরুক,পরিত্যক্ত ও মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারী বলে গণ্য করেছেন। (তিরমিযী আস-সুনান ২/৩৪৪;ইবনু হাজার,তাহযীব৬/২২৯;তাকরীব পৃ৪৪৪;ইবনুল জাওযী,আল- মাউদূ’আত২/৬১সুয়ূতী,আল-লাআলী২/৪ল- মাউদূ’আত২/৬১সুয়ূতী,আল-লাআলী২/৪৮;ইবনু ইরাক,তানযীহ২/১১০)।
আমাদের দেশে ‘সলাতুল হাজাত’ নামে আরো অনেক বানোযাট পদ্ধতি প্রচলিত্। যেমন কোনো কোনো পুস্তকে বলা হয়েছে “হাজাতের (খেজের আ.)-এর নামাজ ২ রাকাত।….মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য খেজের আ. জনৈক বোজর্গ ব্যক্তিকে শিক্ষা দিয়াছেন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফেরূন দশবার…..ইত্যাদি।” এগুলো সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। (মো.বসির উদ্দীন আহমদ.নেক আমল পৃ.১৬৮)।
৫ সালাতুল ইসতিখারা
ইসতিখারার জন্য সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওযু করে দুই রাক’আত সালাত আদায় করে “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি ইলমিকা….” দোয়াটি পাঠ করতে হবে। (বুখারী,আস-সহীহ ১/৩৯১,৫/২৩৪৫,৬/২৬৯০ইবনু হাজার,ফাতাহুল বারী ১১/১৮৩)।
কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত কোনো কোনো গ্রন্থে এ বিষয়ে বিভিন্ন্ বানোয়াট পদ্ধতি ও দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। একটি পুস্তকে বলা হয়েছে: কোনো জিনিসের ভাল মন্দ জানিতে হইলে এশার নামাজের পর এসাতেখারার নিয়তে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়িয়া নিয়া পরে কয়েক মর্তবা দুরূদ শরীফ পাঠ করিয়া “ছুবহানাক লা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা……”১০০ বার পাঠ করিয়া আবার ২১ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করিয়া পাক ছাপ বিছানায় শুইয়া থাকিবে……। (মো.বসির উদ্দীন আহমদ,নেক আমল,পৃ১৬৮)।
অন্য পুস্তকে বলা হয়েছে:হযরত আলী(কার্রা) বলিয়াছেন যে,স্বপ্নে কোনো বিষয় ভালমন্দ জানিতে হইলে নিম্নোক্ত নয়মে রাত্রে শয়ন করিবার পূর্বে দুই রাকাত করিয়া ছয় রাকাত নামাজ পরিবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা ওয়াশশামছে ৭ বার…..। (মো. শামছুল হুদা,নেয়ামুল কোরআন পৃ ২০২-২০৩)।
এ সকল কথা ও পদ্ধতি সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।আমরা বুঝি না,সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে এ সকল বানোয়াট পদ্ধতি আমরা কেন উল্লেখ করি?
৬. হালকী নফল
রাসূলুল্লাহ (সা:) শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায়ের পর বিত্র আদায় করতেন। এরপর দুই রাক’আত নফল সালাত আদায় করতেন। একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে,বিতর এর পরে দুই রাকাত নফল সলিাত আদায় করলে ‘তাহাজ্জুদ’বা কিয়ামুল্লাইলের সওয়াব পাওযা যায়। (দারিমী,আস-সুনান ১/৪৫২)। হাদীস দ্বারা এতটুকুই প্রমানিত। এ বিষয়ক প্রচলিত জাল ও ভিত্তিহীন কথার মধ্যে রয়েছে: বেতের নামাজ পড়ার পর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে একশত রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াব হাসীল হয়। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সূরা একলাছ ৩ বার করিয়া পাঠ করিয়া নামাজ আদায় করিতে হয়। এগুলি সবই ভিত্তিহিীন কথা বলে প্রতিয়মান হয়। (মো.বসির উদ্দীন আহমদ,নেক আমল,পৃ১৬৮)।
৭. আরো কিছু বানোয়াট ‘নামায’
বিভিন্ন নামে বিভিন্ন মনগড়া ও ভিত্তিহীন ফযীলতের বর্ণনা দিয়ে আরো কিছু ‘নামায’ প্রচলিত রয়েছে সমাজে। এগুলির মধ্যে রয়েছে ‘হেফযুল ঈমান’ নামায, কাফফারা নামায, বুজুর্গী নামায, দৌলত লাভের নামায, শোকরের নামায, পিতামাতার হকের নামায ইত্যাদি ইত্যাদি( লাখনবী,আল-আসার, পৃ.১০৩-১১৭; শাওকানী,আল-ফাওয়াইদা ১/৫৭-৮৫, মো.বসিরউদ্দীন আহমদ, নেক আমল, পৃ.১৬৮-১৭৫)।
৮. সপ্তাহের ৭ দিনের সালাত
সপ্তাহের ৭ দিনের দিবসে বা রাতে নির্ধারিত নফল সালাত ও তার ফজিলত বিষয়ক সকল হাদীস ই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা।মুমিন নিয়মিত তাহাজ্জুদ,চাশত ইত্যাদি সালাত আদায় করবেন । এছাড়া যথাসাদ্য বেশি বেশি নফল ালাত আদায় করবেন।এগুলো সহীহ হাদীসে বর্ণীত সওয়াবের আশা করবেন।কিন্তু জালিয়াতিগন কাল্পনিক সওযাব ও ফজিলত কাহীনি দিয়ে অনেক হাদীস বানিয়েছে,যাতে সপ্তাহের প্রত্যেক দিন ও রাতে বিশেষ বিশেষ সালাতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।শুক্রবার রাত্রির নফল নামায ,শুক্রবার দিবসের নফল নামায,শনিবার রাত্রির নফল নামায,শনিবার দিবসের নফল নামায,….ইত্যাদি নামে প্রচলিত সবই বানোয়াট কথা।
যেমন আনাস (রা) ও অন্যান্য সাহাবীর নামে হাদীসে হিসাবে বর্ণীত হয়েছে যে, বৃহস্পতিবার দিবাগত শুক্রবারের রাত্রিতে এত রাকা’আত সালাত আদায় করবে…এতে জান্নাতে বালাখানা,ইত্যাদি অপরিমেয় সওয়াব লাভ করবে।শুক্রবার দিবসে অমুক সময়ে অমুক পদ্ধতিতে এত রাকা’আত সালাত আদায় করবে… এতে এত এত পুরস্কার লাভ করবে…। শনিবার রাত্রিতে যে ব্যাক্তি এত রাকা’আত সালাত অমুক সময়ে অমুক পদ্ধতিতে আদায় করবে সে অমুক অমুক পুরস্কার লাভ করবে…। শনিবার দিবসে অমুক পদ্ধতিতে এত রাকা’আত সালাত আদায় করলে অমুক অমুক ফল পাওয়া যাবে…।
এভাবে সপ্তাহের ৭ দিনের দিবসে ও রাত্রিতে বিভিন্ন পরিমাণে ও পদ্ধতিতে, বিভিন্ন সূরা বা দোয়া সহকারে যত প্রকারের সালাতের কথা বলা হথেছে সবই বানোয়াট ও জাল কথা।
আমাদের দেশে প্রচলিত বার চান্দের ফযীলত,নেক আমল,ওযীফা,ইত্যাদি পুস্তকেই এই সব মিথ্যা কথাগুলি হাদীস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।অথচ মুহাদ্দীসগণ সকলেই এগুলির জালিয়াতির বিষয়ে একমত।
অনেক সময়ে অনেক বড় আলিমও জনশ্রুতির উপরে অনেক কথা লিখে ফেলেন। সবার জন্য সব কথা ‘তাহকীক’বা বিশ্লেষন করা সম্ভব হয় না্। সপ্তাহের ৭ দিন বা রাতের নামাযও কোনো কোনো বড় আলিম ‘উল্লেখ করেছেন। তবে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এই অর্থে বর্ণিত সকল হাদীসই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম যাহাবী,ইবনু হাজার,জোযকানী,ইবনুল জাওযী,সুয়ূতি,মুহাম্মাদ তাহের ফাতানী,মোল্লা আলী কারী,আব্দুল হাই লাখনবী,ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মদ আজলূনী,শাওকানী প্রমুখ প্রসিদ্ধ মুহাদ্দীস। (৬৫৭ ইবনুল জাওযী,আল-মাউদূ’আত২/১১৩-১১৯,যাহাবী,তারতীবুলি মাউদূ’আত পৃ১৫৮-১৬০;ইবনুল কাইয়েম,আল-মানার,পৃ৪৯;সুয়ূতি,আল-লাআলী২/৪৯-৫২, ইরাক ,তানযীহ২/৫৮-৮৭;তাহের ফাতানী,তাযকীরতুল মাউদূ’আত,পৃ৪২;মোল্লা কারী, আল-আসরার,পৃ২৮৮,২৯৫-২৯৭,৩২৮;আজলুনী,কাশফুল খাফা,২/৫৫৬:আব্দুল হাই লাখনবী,আল আসরার,পৃ৪৭-৫৮শাওকানী আল-ফাওয়াইদ১/৬৯-৭২)।
সালাত বা নামায সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। মুমিন যত বেশি নফল সালাত আদায় করার চেষ্টা করবেন। তবে এর সাথে কোনো মনগড়া পদ্ধতি যোগ করা বা মনগড়া ফযীলতের বর্ণনা দেওয়া বৈধ নয়।