হাদীসের অপরিহার্যতা
হাদীস কুরআন মজীদের ব্যাখ্যাদাতা ও বিশ্লেষণকারী। হাদীসের সাহায্য গ্রহণ ব্যতীত কুরআন মজীদের যথাযথ ব্যাখ্যা ও অর্থ করা, উহার সঠিক উদ্দেশ্য ও ভাবধারা নিরূপণ করা সুকঠিন। নবী করীম (স) এই জন্যই নিজ ইচ্চামত কুরআন ব্যাখ্যা সস্পর্কে কঠোর সাবধান বাণী উচ্চারণ করিয়া বলিয়াছেনঃ
******************************************************
যে ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামত কুরআন মজীদের ব্যাখ্যা করে সে যেন জাহান্নামে নিজের আসন তালাশ করিয়া লয়।[তিরমিযী, আরওয়াবুত্তাফাসীর, ইবনে আক্কাস বর্ণিত।]
হাদীসে বর্ণিত আছেঃ
******************************************************
যে লোক নিজের ইচ্ছামত কুরআন মজীদের অর্থ করে, তাহার ব্যাখ্যা নির্ভূল হইলেও সে ভূল করে।[তিরমিযী, আবওয়াবুত্তাফাসীর, জুনদুব হইতে বর্ণিত।]
বস্তুত মানুষের বুদ্ধি যতই প্রখর, তীক্ষ্ণ ও সুদূরপ্রসারী হউক না কেন, তাহা অবশ্যই সীমাবদ্ধ। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত পৌছিঁয়া উহা ব্যর্থ হইতে ও স্বীয় অক্ষমতা প্রকাল এবং প্রমাণ করিতে বাধ্য কিন্তু বুদ্ধবাদ বা বুদ্ধির পূজা কোন সীমা মানিয়ালইতে প্রস্তুত নয়। বুদ্ধি ও বিবেক-শক্তি যদি রাসূলের সুন্নাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়, তাবে তাহা বুদ্ধিবাদ ও বিবেক-পূজার নামান্তর। এই বুদ্ধিবাদ ও বিবেক-পূজা মানুষকে আল্লাহর আনগত্যের সীমা লংঘন করিতে বাধ্য করে। উপরন্তু তাহাতে একদিকে যেমন কুরআনের অপব্যাখ্যা, ভূল ও বিপরীত ব্যাখ্যা হয় বলিয়া উহার উপর জুলুম করা হয় এবং মানুষ এই কারণেই কুরআন মানিয়া চলার সৌভাগ্য হইতে বঞ্চিত হইয়া যায়; অপরদিকে তেমনি কুরআন বিশ্বাসীদের মধ্যে কঠিন মতবৈষম্য সৃষ্টি ও বিভিন্ সাংঘর্ষিক মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব হওয়ার ফলে মুসলিম সমাজ বহুধা বিভক্ত হইয়া পড়ে। অনেক লোক আবার এই সুযোগে কুরআন লইয়া স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করে, কুরআনের ছত্রে ছত্রে নিজেদের মনগড়া ব া পরকীয় চিন্তার পাঠ গ্রহণ করিতে শুরু করে। রাসূলের হাদীস এই পথে প্রবল প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। ইহাই মানুষের সম্মুখে কুরআনী হিদায়াতের প্রশস্ত পথ উপস্থাপিত করে; গোমরাহী বিভ্রান্তি হইতে মানুষকে রক্ষা করে ও সঠিক সরল ঋজুপথে পরিচালিত করে।
নবী করীম (স) কুরআনের বাহক, কুরআন তাঁহারই উপর অবতীর্ণ হইয়াছে; কিন্তু তিনি কেবল কুরআনই মানুষের সম্মুখে পেশ করেন নাই, কুরআনকে ভিত্তি ও কেন্দ্র করিয়া তিনি ইসলামের এক পূর্ণাঙ্গ বিধান উপস্থাপিত করিয়াছেন। এই কারণে তিনি নিজে কুরআনের সঙ্গে সঙ্গে সুন্নাত ও হাদীসের গুরুত্বের কথা নানাভাবে ঘোষণা করিয়াছেন। এখানে আমরা এই প্রৃসংগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস উল্লেখ করা জরুরূ মনে করিতেছি।
হযরত মিকদাম ইবনে মা’দি কারাব (রা) বলিয়াছেন, নবী করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ
******************************************************
সাবধান, আমাকে কুরআন দেওয়া হইয়াছে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে উহারই মত আর একটি জিনিস। সাবধান, সম্ভবত কোন সুখী ব্যক্তি তাহার বড় মানুষির আসনে উপবিষ্ট হইয়া বলিতে শুরু করিবে যে, তোমরা কেবল এই কুরআনকেই গ্রহণ কর, ইহাতে যাহা হালাল দেখিবে তাহাকেই হালাল এবং যাহাকে হারাম দেখিবে তাহাকেই হারাম মনে করিবে। অথচ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, রাসূল যাহা হারাম করিয়াছেন, তাহা আল্লাহর ঘোষিত হারামের মতই মাননীয়।[ইবনে মাজা, পৃষ্ঠা ৩, আবূ দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহঃ *********************]
এই হাদীসটিই ‘সুনানে দারেমী’ গ্রন্হ নিম্নলিখিত ভাষায় উল্লেখ করা হইয়াছেঃ
******************************************************
সম্ভবত এক ব্যক্তি তাহার আসনে হেলান দিয়া বসিয়া আমার বলা কথার উল্লেখ করিবে এবং বলিবেঃ তোমাদের ও আমাদের মাঝে একমাত্র আল্লাহর কিতাব রহিয়াছে। উহাতে যাহাই হালাল পাইব, তাহাকেই হালাল মনে করিব, আর যাহা হারাম পাইব, তাহাকেই হারামরূপে গ্রহণ করিব। (অতঃপর রাসূল বলেন) সাবধান, আল্লাহর রাসূল যাহা হারাম করিয়াছেন, তাহা আল্লাহর নির্দিষ্ট করা হারামের মতই।[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৭০।]
রাসূলের এই কথাটি অধিক সুস্পষ্ট হইয়া ফুটিঁয়া উঠিয়াছে নিম্নোক্ত হাদীসে। হযরত ইবরাজ ইবনে সারীয়া বলেনঃ
******************************************************
নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ তোমাদের একজন তাহার আসনে বসিয়া কি এই ধারণ করে যে, কুরআনে যাহার উল্লেখ আছে তাহা ব্যতীত আল্লাহ তা’আলা আর কিছুই হারাম করেন নাই? সাবধান, আল্লাহর কসম, আমিও কিন্তু অনেক আদেশ করিয়াছে, উপদেশ দিয়াছি এবং অনেক বিষয়ে নিষেধ করিয়াছি; আর তাহাও কুরআনের মতই মাননীয় কিংবা তাহারও অধিক কিছু।[আবূ দাউদ কিতাবুসসুন্নাহ ইহার সনদে আশয়াস ইবনে শু’বা একজন বর্ণনাকারী; কিন্তু তাঁহার বর্ণিত হাদীস গ্রহণ সম্পর্কে আপত্তি করা হইয়াছে।]
কুরআনের সঙ্গে সঙ্গে হাদীসও গ্রহণ করিতে হইবে এবং কোন বিশুদ্ধ হাদীসই যে কুরআনের খেলাফ হইতে পারে না, তাহা নিম্নোক্ত হাদীস হইতে প্রমাণিত হয়। হযরত সায়ীদ ইবনে যুবায়র (রা) একদা নবী করীম (স)- এর একটি হাদীস বর্ণনা করিলেন। উপস্থিত এক ব্যক্তি বলিলঃ
******************************************************
এই সম্পর্কে কুরআনে এমন কথা আছে যাহা এই হাদীসের বিপরীত।
তখন হযরর সায়ীদ বলিলেনঃ
******************************************************
আমি তোমার নিকট রাসূলের হাদীস বর্ণনা করিতেছি, আর তুমি আল্লাহর কিতাবের সহিত উহার বিরোধিতার কথা বল। অথচ রাসূলে করীম আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে তোমার অপেক্ষা অধিক ওয়াকিফহাল ছিলেন।[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৭৭।]
হিদায়াতের পথে চলা ও গোমরাহী হইতে বাঁচিয়া থাকা কুরআন ও হাদীস উভয়ই মানিয়া ও পালন করিয়া চলার উপর নির্ভর করে। এই প্রসঙ্গে এখানে রাসূলে করীম (স) হইতে বর্ণিত দইটি হাদীসের উল্লেখ করা যাইতেছে। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, নবী করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেন।
******************************************************
আমি তোমাদের মাঝে দুইটি জিনিস রাখিয়া যাইতেছে। এই দুইটি অনুসরণ করিতে থাকিলে অতঃপর তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হইবে না। তাহা হইতেছে আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত (হাদীস) এবং কিয়ামতের দিন ‘হাওযে কাওসার’- এ উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত এই দুইটি জিনিস কখনই পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন হইবে না।[মুস্তাদরাক হাকেম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩।]
বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ
******************************************************
দুইটি জিনিস, যাহা আমি তোমাদের মাঝে রাখিয়া যাইতেছি, তোমরা যতক্ষণ এই দুইটি জিনিস দৃঢ়ভাবে ধারণ করিয়া থাকিবে তোমরা কখনো গোমরাহ হইবে না। তাহা হইল, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত।[ঐ, মালেক ইবনে আনাস বর্ণিত।]
ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় এই ভাষণের ভাষা এইরূপঃ
******************************************************
আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রাখিয়া গেলাম যাহা তোমরা শক্তভাবে ধারণ করিয়া থাকিলে কস্মিনকালেও পথভ্রষ্ট হইবে না। তাহা হইল আল্লাহর কিতাব এবং তাঁহার নবী (স) –এর সুন্নাত।[তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮।]
সীরাতে ইবনে হিশাম-এ বিদায় হজ্জের ভাষণের এই অংশ নিম্নোক্তরূপ ভাষায় বর্ণিত হইয়াছেঃ
******************************************************
হে মানব সমাজ, আমি তোমাদের নিকট এমন এক সম্পদ রাখিয়া গেলাম, তোমরা যদি তাহা খুব দৃঢ়তা সহকারে ধারণ কর, তবে কখনই গোমরাহ হইবে না। তাহা হইল, আল্লাহর কিতাব এবং তাঁহার নবীর সুন্নাত।
হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন (রা)-এর মজলিসে একজন লোক বলিলঃ
******************************************************
আপনি আমাদের নিকট কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু বর্ণনা করিবেন না।
তখন হযরত ইমরান সে ব্যক্তিকে ডাকিয়া বলিলেনঃ
******************************************************
তুমি কি চিন্তা করিয়াদেখিয়াছ, তোমাকে ও তোমার সঙ্গী-সাথীদেরকে যদি কেবলমাত্র কুরআনের উপরই নির্ভরশীল করিয়াদেওয়া হয়, তাহা হইলে কি তুমি কুরআনে যেহরের চার রাকআত, আছরের চার রাকআত ও মাগরিবের তিন রাকআত নামাযের উল্লেখ পাইবে?
হজ্জের প্রসঙ্গ তুলিয়া বলিলেনঃ
******************************************************
কেবল কুরআন মজীদেই কি তুমি সাতবার বায়তুল্লাহার তওয়াফ, সাফা-মারওয়ার তওয়াফ, আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং পাথর টুকরা নিক্ষেপ করার বিধান দেখিতে পাও?
তিনি আরো বলিলেনঃ কুরআনে চোরের হাত কাটার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু-
******************************************************
চোরের হাত কোন স্থান হইতে কাটিতে হইবে?…………… এইখান হইতে না এইখান হইতে, তাহা কি কুরআনে লেখা আছে?[****************]
সুন্নাত ও হাদীসের গুরুত্ব এবং অপরিহার্যতা এইসব যুক্তি হইতে স্পষ্টভাবে ফুটিয়া উঠে। প্রাথমিক যুগের মনীষিগণ ইহার গুরুত্ব পূর্ণ মাত্রায় স্বীকার করিতেন। সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীন সকলেই কুরআনের সঙ্গে সঙ্গে হাদীসকেও অবশ্য পালনীয় বিষয় হিসাবে গ্রহণ করিতেন। এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা যথাস্থানে পেশ করা হইবে। এখানে প্রসংগত আমরা পূর্ববর্তী মনীষীদের এমন কিছু উক্তির উল্লেখ করিব, যাহা হইতে হাদীস ও সুন্নাত মানিয়া লওয়ার গুরুত্ব সুস্পষ্ট হইয়া উঠিবে।
এই পর্যায়ে প্রথমত সাহাবী যুগের একটি ঘটনা উল্লেখ করা আবশ্যক। এক ব্যক্তি হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন (রা) কে বলিলেনঃ
******************************************************
আপনারা আমাদের নিকট এমন সব হাদীস বর্ণনা করেন, যাহার কোন মূল ভিত্তি আমরা কুরআনে খুজিঁয়া পাই না।
ইহাতে হযরত ইমরান অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং প্রশ্নকারী ব্যক্তিকে সম্বোধন করিয়াবলিলেনঃ
******************************************************
প্রত্যেক চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম যাকাত দিতে হইবে, এত এত (প্রত্যেক চল্লিশটি) বকরীতে একটি বকরী দিতে হইবে ও এত এত (প্রত্যেক পচিঁশটি) উষ্ট্রে একটি উষ্ট্র দিতে হইবে- যাকাতের নিসাব কি তোমরা কুরআন মজীদে দেখিতে পাও?
অর্থাৎ যাকাত দানের স্পষ্ট আদেশ তো কুরআন মজীদে স্পষ্ট ভাষায় উদ্ধৃত হইয়াছে; কিন্তু উহার বিস্তারিত বিধান ও ব্যবস্থা কি কুরআনে উল্লিখিত হইয়াছে?
সেই ব্যক্তি বলিলেনঃ ‘না, তাহা কুরআনে পাওয়া যায় না’। তখন হযরত ইমরান বলিলেনঃ
******************************************************
তাহা হইলে যাকাতের এই বিস্তারিত বিধি-বিধান তোমরা কাহার নিকট হইতে জানিতে পারিলে? ইহা সবই তোমরা আমাদের (সাহাবীদের) নিকট হইতে পা্ইয়াছ, আর আমরা ইহা আল্লাহর নবীর নিকট হইতে (হাদীসের মাধ্যমে) লাভ করিয়াছি।[***************]
এই হাদীসের ভিত্তিতে মুহাদ্দিসগণ একবাক্যে যে মূলনীতি ও ফর্মূলা প্রমাণ করিয়াছেন, তাহা এইঃ
******************************************************
সমগ্র বিষয়েরই মূল বিধান কুরআনে উল্লিখিত; কিন্তু উহাদের শাখা-প্রশাখা খুটিঁনাটি (ও ব্যবহারিক নিয়মনীতি) সবই রাসূলের বর্ণনা হইতে জানা গিয়াছে।[******************]
মকহুল দেমাশকী বলিয়াছেনঃ
******************************************************
কুরআন হাদীস বা সুন্নাতের প্রতি অধিকতর মুখাপেক্ষী, সুন্নাত কুরআনের প্রতি ততটা নয়।[**********************]
ইমাম আওযায়ীও এই কথা বলিয়াছেন নিম্নোক্ত ভাষায়ঃ
******************************************************
আল্লাহর কিতাব ব্যাখ্যার জন্য সুন্নাত অধিক দরকারী কিন্তু সুন্নাত ব্যাখ্যার জন্য কুরআনের প্রয়োজন ততটা নয়।[***********]
ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীর বলিয়াছেনঃ
******************************************************
সুন্নাত বা হাদীস কুরআনের তুলনায় অধিক ফয়সালাকারী, কুরআন সুন্নাতের বিপরীত ফয়সালা দিতে পারে না।[**************]
ইমাম আহমদ ইবনে হা’ল এই দুইটি কথার ব্যাখ্যাদান করিতে গিয়া বলিয়াছেনঃ
******************************************************
সুন্নাত বা হাদীস কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণকারী এবং সুন্নাত উহার অর্থ প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করে।[********]
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী হাদীসের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা নিম্নোক্ত ভাষায় ঘোষণা করিয়াছেনঃ
******************************************************
******************************************************
ইলমে হাদীস সকল প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের তুলনায় অধিক উন্নত, উত্তম এবং দ্বীন-ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তি। হাদীসের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং তাহার সাহাবীদের হইতে নিঃসৃত কথা, কাজ ও সমর্থন বর্ণিত হইয়াছে। বস্তুত ইহা অন্ধকারের মধ্যে আলোকস্তম্ভ, ইহা যেন এক সর্বদিক উজ্জ্বলকারী পূর্ণ চন্দ্র। যে ইহার অনুসারী হইবে ও ইহকে আয়ত্ত করিয়া লইবে, সে সৎপথ প্রাপ্ত হইবে। সে লাভ করিবে বিপুল কল্যাণ। আর যে উহাকে অগ্রাহ্য করিবে, উহা হইতে বিমুখ হইবে সে পথভ্রষ্ট হইবে, লালসার অনুসারী হইবে, পরিণামে সে অধিক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। কেননা নবী করীম (স) অনেক কাজ করিতে নিষেধ করিয়াছেন, অনেক কাজের আদেশ করিয়াছেন। পাপের পরিণাম সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করিয়াছেন, নেক কাজের সুফল পাওয়ার সুসংবাদ দিয়াছেন। তিনি অনেক দৃষ্টান্ত দিয়া লোকদের নসীহত দান করিয়াছেন। অতএব তাহা নিশ্চয়ই কুরআনের মত কিংবা ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ।[হুজ্জতুল্লাহিল বালিগা, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১।]
শাহ দেহলভী আরো বলিয়াছেনঃ
******************************************************
সুন্নাত বা হাদীস কুরআনেরই ব্যাখ্যাদাতা এবং তাহা উহার কিছুমাত্র বিরোধিতা করে না।[***********************]
ইমাম আবূ হানীফার নিম্নোক্ত বাক্যটিও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়ঃ
******************************************************
সুন্নাত বা হাদীসের অস্তিত্ব না হইলে আমাদের মধ্যে কেহই কুরআন বুঝিতে পারিত না।[**************]
এই প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত কথাটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যঃ
******************************************************
রাবিয়া (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা (হে নবী) তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করিয়াছেন অতিশয় বিস্তারিতভাবে; কিন্তু উহাতে হাদীস ও সুন্নাতের জন্য একটি অবকাশ রাখিয়া দিয়াছেন। নবী করীম (স) সেই সুন্নাত ও হাদীস স্থাপন করিয়াছেন, যদিও তাহাতে ইজতিহাদ করা বা নিজের মত প্রয়োগের সুযোগও রাখিয়া দেওয়া হইয়াছে।[তাফসীরে দুররে মনসুর, তারিখুত্তাফসীর, পৃষ্ঠা ৪।]
ইমাম উবায়াদ লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
আল্লাহ ও রাসূলের হালাল-হারাম সম্পর্কিত হুকুমের মধ্যে পার্থক্য নাই। রাসূল এমন কোন হুকুম দিতেন না, যাহার বিপরীত কথা কুরআন হইতে প্রমাণিত হইত। বরং সুন্নাত (হাদীস) হইতেছে আল্লাহর নাযিল করা কিতাবের ব্যাখ্যাদাতা এবং কুরআনের আইন-বিধান ও শরীয়াতের বিশ্লেষণকারী।[কিতাবুল আমওয়াল-আবূ উবায়দ, পৃষ্ঠা ৫৪৪।]
হাদীস অমান্যকারী কাফির
ইসলামী ফিকাহর ইমামগণ সম্পূর্ণ একমত হইয়া ঘোষণা করিয়াছেন যে, হাদীস অমান্যকারী গুমরাহ, ইসলাম হইতে বাহির হইয়া যাওয়া লোক। ইসহাক ইবনে রাহওয়াই বলিয়াছেনঃ
******************************************************
যে লোকের নিকট রাসূল করীম (স) হইতে কোন হাদীস পৌছিঁল, সে উহার সত্যতা যথার্ততা স্বীকার করে তাহা সত্ত্বেও সে যদি কোনরূপ কারণ ব্যতীত উহা প্রত্যাখান করে। তাহা হইলে তাহাকে কাফির মনে করিতে হইবে।
ইমাম ইবনে হাজম তাঁহার ‘আল-আহাকাম’ গ্রন্হে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
কোন ব্যক্তি যদি বলে যে, আমরা শুধু তাহাই গ্রহণ করিব যাহা কুরআনে পাওয়া যায়-উহা ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করিব না, তাহা হইলে সে গোটা মুসলিম উম্মতের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাফির।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলিয়াছেনঃ
******************************************************
খুব শীঘ্র এমন সব লোক আসিবে যাহারা কুরআনের প্রতি সন্দেহ লইয়া তোমাদের সহিত বিবাদ করিবে, তোমরা তাহাদিগকে সুন্নাত বা হাদীসের সাহায্যে পাকড়াও কর। কেননা সুন্নাতের ধারক বা হাদীস বিশারদ মহান আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞানের অধিকারী।*********************************