পারস্পরিক হাদীস পর্যালোচনা ও শিক্ষাদান
সাহাবায়ে কিরাম নবী করীম (স)-এর নিকট হইতে হাদীস শ্রবণ করিয়া অবসর সময় সুযোগ ও প্রয়োজনমত একত্র হইয়া বসিতেন এবং পারস্পরিক চর্চা ও আলোচনায় লিপ্ত হইতেন। কোন কোন সময় হাদীস আলোচনার জন্য সাহাবাগণ নিজেদের মধ্যে বিশেষ বৈঠকের ব্যবস্থা করিতেন। এই ধরনের বৈঠক সাধারণত মসজিদে নববীতে অনুষ্ঠিত হইলেও কখনো কখনো সাহাবীদের বাড়িতেও অনুরূপ বৈঠক বসিত। েই বৈঠকসমূহে রাসূলে করীমের কথা, কাজ ও উপদেশাবলী সম্পর্কে প্রকাশ্য আলোচনা হইত। প্রধান প্রধান সাহাবিগণই এইসব বৈঠকে যোগদান করিতেন। পূর্বৈ কাহারো কোন বিষয়ে অজ্ঞতা থাকিলে এইসব বৈঠকের আলোচনা হইতে নির্ভরযোগ্যভাবে ও বিশ্বস্তসূত্রে তাঁহারা সেই বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিফহাল হইতে পারিতেন। কাহারো কোন বিষয়ে সন্দেহ থাকিলে তাহাও এই আলোচনার ফলে তিরোহিত হইয়া যাইত। এই ধরণের আলোচনা সভা-অনুষ্ঠান সম্পর্কে এখানে আমারা কয়েকটি প্রামাণ্য বিবরণ পেশ করিতেছিঃ
১. হযরত আনাম (রা) বলেনঃ
আমরা রাসূল (স)- এর নিকট হাদীস শ্রবণ করিতাম. তিনি যখন মজলিস হইতে উঠিয়াচলিয়া যাইতেন, তখন আমরা বসিয়া শ্রুত হাদীসসমূহ পরস্পর পুনরাবৃত্তি করিতাম, চর্চা করিতাম, পর্যালোচনা করিতাম। আমাদের এক একজন করিয়াসবকয়টি হাদীস মুখস্থ শোনাইয়া দিত। এই ধরনের প্রায় বৈঠক হইতে আমরা যখন উঠিয়া যাইতাম, তখন আমাদের প্রত্যেকের সবকিছু মুখস্থ হইয়া যাইত।[**********]
২. আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) বলেনঃ
একদিন নবী করীম (স) তাঁহার কোন এক হুজরা হইতে বাহির হইয়া আসিলেন এবং মসজিদে দুইটি জনসমাবেশ দেখিতে পাইলেন। একটিতে সমবেত লোকেরা কুরআন পাঠ করিতেছিল ও আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করিতে মগ্ন ছিল। আর অপরটির লোকেরা (হাদীস) শিক্ষা করিতেছিল ও শিক্ষা দান করিতেছিল। নবী করীম (স) বলিলেনঃ এই উভয় সমাবেশের লোকই কল্যাণের কাজ করিতেছে। ইহারা (একদল লোক) কুরআন পাঠ করিতেছে ও আল্লাহকে ডাকিতেছেঃ আল্লাহ চাহিলে তিনি তাহাদিগকে প্রার্থিত জিনিস দান করিবেন, আর না চাহিলে দিবেন না। আর অপর দলের লোক জ্ঞান ও হাদীস শিক্ষা করিতেছে ও শিক্ষা দিতেছে। ********************* এবং আমি শিক্ষক হিসাবেই প্রেরিত হইয়াছি। আবদুল্লাহ ইবন আমর বলেনঃ ‘অতঃপর তিনি তাহাদের সহিতই বসিয়া গেলেন।[**********************]
ইলম চর্চায় নিযুক্ত লোকগণ যে রাসূলের হাদীস, কাজ-কর্ম ও উহার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীন-ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করিতে ও উপস্থিত লোকদিগকে তাহা শিক্ষা দিতেছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। নবী করীম (স)-এর জীবদ্দশায়ই এই ধরনের বৈঠক বসিত ও রাসূল (স) নিজে তাহাতে যোগদান করিতেন, লোকদিগকে ইলম হাদীস শিক্ষার জন্য বিশেষ উৎসাহ দান করিতেন, তাহা উপরিউক্ত দীর্ঘ বর্ণনা হইতে অকাট্যরূপে প্রমাণিত হইতেছে।
৩. হযরত মু’আবিয়া বর্ণিত নিম্নোক্ত ঘটনা হইতে উপরের কথার আরো প্রমাণ মেলে। তিনি বলিয়াছেন৬
******************************************************
আমি একদিন নবী করীম (স)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি মসজিদে প্রবেশ করিয়া একদল লোককে উপবিষ্ট দেখিতে পাইলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তোমরা কিসের জন্য বসিয়া আছ? তাহারা বলিলঃ আমরা ফরয নামায পড়িয়াছি, তাহার পর বসিয়া আল্লাহর কিতাব ও তাঁহার নবীর সুন্নাত সম্পর্কে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করিতেছি।[মুস্তাদরাক-হাকেম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৪।]
হাদীস মুখস্থ করার পর উহা যাহাতে ভুলিয়া না যান, সাহাবায়ে কিরাম সেইদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখিতেন। এইজন্য অনেক সাহাবী নিজস্বভাবেই হাদীস চর্চা ও আবৃত্তি করিতে থাকিতেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর নিম্নোক্ত উক্তি হইতে তাহা প্রমাণিত হয়। তিনি বলিয়াছেনঃ
******************************************************
আমি রাত্রক তিন ভাগে ভাগ করিয়া লই। এক ভাগ রাত্র আামি ঘুমাই, এক ভাগ ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করি, এক ভাগে আমি রাসূলের হাদীস স্মরণ ও মুখস্থ করিতে থাকি।[মুসনাদে দারেমী, *****************]
এই প্রসঙ্গে ‘আসহাবে সুফফা’র কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে। বিশেষত হাদীসের প্রথম উৎপত্তিক্ষেত ও ধারক হিসাবে হাদীসের ইতিহাসে আসহাবে সুফফার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সাধারণভাবে সকল সাহাবীই রাসূলের সাহচর্যে অধিক সময় অতিবাহিত করিতে চেষ্টা করিতেন। কিন্তু ‘সুফফার অধিবাসিগণ দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টাই রাসূলের দরবারে পড়িয়া থাকিতেন। মসজিদে নববীর সম্মুখস্থ চত্তরই ছিল তাঁহাদের আবাসস্থল। ইহাদের কোন ঘর-সংসার ছিল না, আয়-উপার্জনের তেমন কোন প্রয়োজনও ছিল না। তাই অন্যান্য সাহাবাদের তুলনায় তাঁহারা যে রাসূলের সাহচর্যে সর্বাধিক সময় ব্যয় করিতে পারিতেন, তাহাতে সন্দেহ থাকিতে পারে না।
ফলে মসজিদে নববী কার্যত একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হইয়াছিল। স্বয়ং নবী করীম (স) ছিলেন ইহার প্রধান অধ্যক্ষ আর প্রায় সকল সাহাবীই ছিলেন এখানকার শিক্ষার্থী। রাসূলের নির্দেশক্রমে বড় বড় সাহাবিগণ বিশেষ বিশেষ বিষয়ে শিক্ষাদানের কাজও করিতেন।
সুফফার বসবাসকারী সাহাবীদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে সে সংখ্যা যে কিছুমাত্র নগণ্য ছিল না, তাহাতে সন্দেহ নাই। ইবন আবদুল বার কর্তৃক এক কবীলা সম্পর্কে প্রদত্ত বর্ণনা হইতে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপকতা সমন্ধে ধারণা করা যায়। তিনি লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তামীম প্রতিনিধি দলে সত্তর কি আশি জন লোক ছিল। তাহারা ইসলাম কবুল করিয়া দীর্ঘদিন পর্যন্ত মদীনায় অবস্থান করেন। এই সময়ে তাহারা কুরআন ও দ্বীন-ইসলাম শিক্ষা করিতেছিল।[**************]
মোটকথা আসহাবে সুফফার সাহাবিগণ দিন ও রাত্র রাসূলের সন্নিকটে থাকিয়াতাঁহার মুখ-নিঃসৃত বাণীসমূহ, তাঁহার কার্যাবলী, কর্মতৎপরতা, গতিবিধি ও চিন্তা-প্রবণতা এবং তাঁহার নিকট অনুমোদনপ্রাপ্ত কথা ও কাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ও বিশেষ সতর্কতা সহকারে শ্রবণ, পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবণ করিতেন। কোন একটি কথা- একটি সামান্য বিষয়ও – যাহাতে তাঁহাদের অজ্ঞতা থাকিয়া না যায়, সেজন্য সর্ব প্রযত্নে চেষ্টা করিতেন।[****************]
বস্তুত রাসূলের করীম (স)-এর দরবারে নিরবিচ্ছিন্নভাবে উপস্থিত থাকিতে পারা ছিল সাহাবিগণের নিকট সর্বাধিক কার্ম। এই পর্যায়ে হযরত সলীত (রা)- এর ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। রাসূলে করীম (স) তাহাকে একখণ্ড জমি চাষাবাদের জন্য দিয়াছিলেন। তিনি উহার চাষাবাদের কাজে বাহিরে চলিয়া যাইতেন এবং আবার ফিরিয়া আসিতেন। তখন তিনি তখন তিনি অন্যান্য সাহাবীর নিকট শুনিতে পাইতেন যে, তাঁহার অনুপস্থিতিতে কুরআনের অমুক অমুক আয়াত নাযিল হইয়াছে এবং রাসূলে করীম (স) এই এই কথা বলিয়াছেন। তখন তাহার মনে বিশেষ দুঃখ ও বঞ্চনার জ্বালা অনুভূত হইত। তিনি রাসূলে করীম (স)-এর নিকট গিয়া বলিলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে যে ভুমিখণ্ড দান করিয়াছেন, উহা ফিরাইয়া নিন। কেননা উহার কারণেই আমাকে দরবারে উপস্থিত থাকার পরম সৌভাগ্য হইতে বঞ্চিত থাকিতে হয়। ইহা আমি চাই না, ইহার কোন প্রয়োজনই আমার নাই।
******************************************************
কোন সাহাবী যদি বিশেষ কারণে কোন দিন দরবারে উপস্থি হইতে না পারিতেন, তাহা হইলে তিনি অপর যে লোক সেই দিন দরবারে উপস্থিত ছিলেন, তাহার নিকট হইতে সব কথা জানিয়া লইতেন। হযরত উমর (রা) তাঁহার আনসারী ভাই ও প্রতিবেশী হযরত উতবান মালিকের সহিত এই প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হইয়াছিলেন যে, তাঁহাদের কেহ কোন দিন রাসূল (স)- এর দরবারে উপস্থি হইতে না পারিলে অপরজন তাঁহাকে সেই দিনের যাবতীয় বিষয়ে অবহিত করিবেন। হযরত উমরের ভাষায়ঃ
******************************************************
আমি যখন রাসূল (স)- এর দরবারে যাইতাম, তখন সেই দিনের ওহী ও অন্যান্য বিষয়ক খবর তাহাকে পৌছাইয়া দিতাম আর তিনি যখন যাইতেন তখন তিনিও এইরূপ করিতেন।[**************]
হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) হাদীস শিক্ষা লাভের জন্য বিশেষ আগ্রহশীল ছিলেন। তিনি দরবারে নববী হইতে কোন দিন বা কোন সময় অনুপস্থিত থাকিলে সেই সময়ে রাসূলে করীম (স) যেসব কথা বলিয়াছেন, যেসব কাজ করিয়াছেন এবং যেসব কথা ও কাজের অনুমোদন দান করিয়াছেন তাহা জানিবার জন্য সেই সময়ে যেসব সাহাবী উপস্থিত ছিলেন তাঁহাদের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লইতেন।[**************] কোন হাদীস বা অপর কোন বিষয়ে তাঁহার অজানা থাকিলে তিনি স্বয়ং নবী করীম (স)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া সকল অজ্ঞতা ও শোবাহ-সন্দেহ দূর করিয়া লইতেন।[***************]
একবার লায়স বংশীয় এক ব্যক্তি হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) সূত্রে বলিল, নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
******************************************************
তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ কেবল সমান পরিামণে ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় করিও না।[বুখারী শরীফ, প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা ২৯১।]
এই কথাটি হযরত ইবন উমরের অজানা ছিল। তিনি তখনই আবূ সাঈদ খুদরীর নিকট উপস্থি হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
******************************************************
আপনি রাসূল (স)- এর নিকট হইতে এই কি হাদীস বর্ণনা করিতেছেন?
সাহাবায়ে কিরাম (রা) নিজেরাও কুরআন হাদীস শিক্ষাদানের জন্য নিজ নিজ এলাকায় অনুরূপ শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করিয়াছিলেন। নবী করীম (স)- এর জীবদ্দশায়ই মদীনা শহরে নয়টি মসজিদ তৈরী হইয়াছিল। তাহাতে যেমন পাঁচ ওয়াক্ত জামা’আতের সহিত নামায পড়া হইত তেমনি প্রত্যেকটিতে দ্বীন-ইসলাম শিক্ষাদনেরও ব্যবস্থা ছিল।[******************] আবদুল কায়স গোত্রের আগত প্রতিনিধি দল এই স্বীকৃতিসহ নিজেদের দেশে প্রত্যাবর্তন করিয়াছিলেনঃ
******************************************************
আনসারগণ আমাদিগকে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত শিক্ষা দিতেছিলেন।[***********]
ফরহাম ইবন মালিক (রা) ইয়ামেন হইতে ইসলামের শিক্ষা লাভের জন্য মদীনায় আগমন করেন। তাঁহার সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবন সায়াদ লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি ইয়ামেন হইতে আগমন করেন এবং কুরআন, ইসলামের ফরযসময়হ ও শরীয়াতের বিধান শিক্ষা করেন। [*********]
এই প্রসঙ্গে হযরত আবূ হুরায়ারা কর্তৃক উক্ত নিম্নোক্ত কথাটিও উল্লেখযোগ্য। তিনি বলিয়াছেনঃ
******************************************************
আমি যে নিয়মিনভাবে রাসূল (স)-এর দরবারে উপস্থিত থাকিতাম তাহা সাহাবাদের ভাল করিয়াই জানা ছিল। এই জন্য তাঁহারা রাসূলে করীম (স)- এর হাদীস সম্পর্কে আমার নিকট জিজ্ঞাসা করিতেন ও জানিয়া লইতেন। তাঁহাদের মধ্যে হযরত উমর, উসমান, আলী, তালহা ও যুবায়র প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি।[***************]
মদীনার বিভিন্ন অঞ্চলে সাহাবাগণ কর্তৃক স্থাপিত দ্বীন-শিক্ষার কেন্দ্রসমূহ সাধারণত দিনের বেলায়ই শিক্ষাদান করা হইত। সেই কারণে অনেক শ্রমজীবী ও বিভিন্ন পেশা-পালনকারী লোক ইহাতে শরীক হইতে ও ইলম হাসিল করার সুযোগ পাইতেন না। এইজন্য তাঁহারা নৈশ বিদ্যালয় ধরনের শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করিতে বাধ্য হন। এইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
রাত্রির অন্ধকার যখন তাঁহাদিগকে ঢাকিয়া ফেলিত, তখন তাঁহারা মদীনায় অবস্থিত তাঁহাদের শিক্ষকদের নিকট চলিয়া যাইতেন। এবং সেখানে তাঁহারা সকালবেলা পর্যন্ত পড়াশোনার কাজে মশগুল হইয়া থাকিতেন।[************]
বলা বাহুল্য, এইসব কেন্দ্রে কুরআনে সঙ্গে সঙ্গে হাদীসেরও শিক্ষাদান করা হইত। ঠিক এই কারণেই অনেক সাহাবী রাসূলের নিকট হইতে বর্ণনা না করিয়া অপর কোন সাহাবীর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। হযরত আনাম ইবন মালিক (রা)- এর নিম্নলিখিত উক্তি হইতে ইহার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি বলিয়াছেনঃ
******************************************************
আমরা তোমাদের নিকট যেসব হাদীস বর্ণনা করি, তাহার সবই আমরা সরাসরি রাসূলের নিকট হইতে শুনি নাই। বরং আমাদের (সাহাবীদের ) লোকেরা পরস্পরের নিকট হাদীস বর্ণনা করিতেন।[মুস্তাদরাক হাকেম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৫।]
হযরত বরা ইবন আজিব (রা) তাঁহার বর্ণিত হাদীসসমূহের মর্যাদা সম্পর্কে বলিতে গিয়া যে কথাটি বলিয়াছেন, তাহা হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলিয়াছেনঃ
******************************************************
সব হাদীসই আমরা রাসূলের নিকট হইতে শুনি নাই বরং আমাদের সঙ্গী-সাথিগণও আমাদিগকে রাসূলের হাদীস শোনাইতেন। কেননা উট পালনের কাজ ও ব্যস্ততা আমাদিগকে রাসূলের দরবারে উপস্থিত হইতে দিত না।[তাবকাতে ইবন সাদ ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮৩; মুসতাদরাক, ১ম খণ্ড, পৃষ্টা ৯৫।]
‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্হে এই কথাটির ভাষা নিম্নরূপঃ******************************************************
আমরা সব হাদীসই রাসূলের নিকট হইতে শুনি নাই, বরং আমাদরে সঙ্গিগণ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করিতন। আর আমরা উট চড়াইবার কাজে ব্যস্ত থাকিতাম।[মুস্তাদরাক হাকেম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৬]
এই দীর্ঘ প্রমাণমূলক আলোচনা হইতে একথাই প্রমাণিত হয় যে, যেসব সাহাবী নবী করীম (স)- এর নিকট হইতে হাদীস শুনিতে পাইতেন, তাঁহারা অপরাপর সাহাবীদের নিকট তাহা পৌঁছাইতেন এবং যাঁহারা সরাসরি রাসূরে নিকট হইতে হাদীস শ্রবণের সুযোগ পাইনত না, তাঁহারা অপর যেসব সাহাবী তাহা শুনিয়াছেন, তাঁহাদের নিকট হইতে শুনিয়া লইতেন। এইভাবে রাসূলে করীম (স)-এর প্রতেকটি হাদীস তাঁহার জীবদ্দশায়ই প্রায় সমস্ত সাহাবী পর্যন্ত গিয়াছিল।