সাহাবীদের লিখিত হাদীস সম্পদ
সাহাবীদের মধ্যে কিছু লোক জাহিলিয়াতের যুগেই লিখিতে ও পড়িতে জানিতেন এবং পূর্বে যেমন বলিয়াছি-বদর যুদ্ধে ধৃত মক্কার লেখাপড়া জানা লোকদের নিকট অনেক যুবক সাহাবীই শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন। ফলে তাহাদের অনেকেই নবী করীম (স)-এর নিকট শ্রুত হাদীস ব্যক্তিগতভাবে লিখিয়া রাখিতে সমর্থ ছিলেন। নবী করীম (স) সাধারণভাবে সকলকেই হাদীস লিখিতে প্রথম পর্যায়ে নিষেধ করিলেও উত্তরকালে ইহার জন্য তিনি সাধারণ অনুমতিই দান করেন। এমনকি, হাদীস লিখার পথে কোনরূপ অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতরা সৃষ্টি হইলে তাহা তিনি দূর করিয়া দিতেন।
এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রা) বলেনঃ
আমি নবী করীম (স)-এর নিকট শ্রুত প্রত্যেকটি কথাই হিফাযতের উদ্দেশ্যে লিখিয়া লইতাম। ইহা দেখিয়া কুরায়শ বংশের সাহাবিগণ আমাকে এই কাজ করিতে নিষেধ করেন। আমাকে তাঁহারা বলেনঃ
******************************************************
তুমি রাসূলে মুখে যাহাই শুনিতে পাও, তাহা সবই লিখিয়া রাখো? অথচ রাসূল (স) একজন মানুষ তো, তিনি কখনো সন্তোষ আর কখনো ক্রোধের মধ্যে থাকিয়া কথা বলেন?
আবদুল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি হাদীসি লেখা বন্ধ করিয়া দেই এবং একদিন রাসূলের নিকট ব্যাপারটি উল্লেখ করি এবং বলিঃ
******************************************************
হে আল্লাহর রাসূল! কুরায়শরা বলে, তুমি রাসূলের সব কথাই লিখিতেছ? অথচ তিনি একজন মানুষ। সাধারণ মানুষের মতই তিনি কখনো কখনো ক্রদ্ধ হইয়া থাকেন।
রাসূলে করীম (স) আমার একথা শ্রবণের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দুই ওষ্ঠের দিকে ইশারা করিয়া বলিয়া উঠিলেনঃ
******************************************************
তুমি লিখিতে থাক। যে আল্লাহর মুষ্টিবদ্ধ আমার প্রাণ, তাঁহার শপথ, আমার এই (মুখ) হইতে প্রকৃত সত্য কথা ছাড়া কিছুই বাহির হয় না।[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৬৭। আবূ দাউদ; মুসনাদে আহমাদ মুস্তাদরাক-হাকেমের বর্ণনায় এই কথার পর উল্লেখ করা হইয়াছে। রাসূল বলিলেন-************ ‘অতএব লিখ; ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ১০৪; ইমাম আহমাদের উদ্ধৃতিতে বলা হইয়াছেঃ ************************** লিখ, যাহার হস্তে আমার প্রাণ তাঁহার শপথ, আমার হইতে ‘হক ছাড়া কিছুই প্রকাশিত হয় না। *****************************]
এই আদেশ শ্রবণের পর হযরত আবদুল্লাহ রাসূল (স)-কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
******************************************************
হে রাসূল ! আপনার নিকট হইতে যাহা কিছুই শুনিতে পাই তাহা সবই কি লিখিয়া রাখিব?
রাসূল বলিলেনঃ ****** হ্যাঁ; আবদুল্লাহ পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
**************************- ক্রদ্ধ ও সন্তোষ উভয় অবস্থায় বলা সব কথাই কি লিখিব?
তখন রাসূল (স) চুড়ান্তভাবে বলিলেনঃ
******************************************************
হ্যাঁ, এই সকল অবস্থায়ই আমি প্রকুত সত্য ছাড়া আর কিছুই বলি না।[******************************************************]
এই বর্ণনা হইতে এক সঙ্গে দুইটি কথা সুস্পষ্টভাবে জানা যায়। প্রথম এই যে, নবীর কণ্ঠ হইতে কখনো সত্যোর বিপরীত কথা প্রকাশিত ও উচ্চারিত হয় নাই। কখনে সেরূপ কথা বলিয়া ফেলিলে বা বলিতে উদ্যত হইলেও আল্লাহর সামগ্রিক হেফাজতের সাহায্যে নবী সেই ভূল হইতে রক্ষা পাইয়া গিয়াছেন। উপরের উদ্ধৃতি হইতে সত্য কথা বলার ব্যাপারে নবীর অপ্রতুল দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠ মানসিকতা প্রমাণিত হয়।
দ্বিতীয়ত, হাদীস লিখিয়া রাখা কেবল সঙ্গতই নয়, সেজন্য রাসূলের কেবল অনুমতিই ছিল না, সেই সঙ্গে হাদীস লিখিয়া রাখার সুস্পষ্ট ও অবাধ আদেশও তিনি করিয়াছিলেন। রাসূলের এই আদেশ বিশেষ কোন সময় বা অবস্থার মধ্যে সীমিত ছিল না। সকল সময় ও অবস্থায় বলা সব কথাই লিখিবার জন্য তিনি বলিষ্ঠ স্বরে অনুমতি দিয়াছিলেন।
কেননা, রাসূলে করীম (স) সর্বসাধারণ মুসলিমের জন্য সকল সময়ে ও সকল অবস্থায়ই অনুসরনীয় ছিলেন। তাঁহার প্রত্যেকটি অবস্থা ও প্রত্যেক সময়ের সকল কথা এবং সকল প্রকার কাজই ইসলামী শরীয়াতের অন্যতম উৎসরূপে গণ্য।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) রাসূলের সকল কথা লিপিবদ্ধ করিয়া যে হাদীস সংগ্রহ তৈয়ার করিয়াছিলেন নবী করীম (স) নিজেই উহার নামকরণ করিয়াছিলেন ‘সহীফায়ে সাদেকা’ (*************)। ইহা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’সের অন্যন্ত প্রিয় গ্রন্হ ছিল।তিনি নিজেই বলিয়াছেনঃ
******************************************************
জীবনের প্রতি মাত্র দুইটি জিনিসই আমাকে আকৃষ্ট করিয়াছে, তন্মধ্যে একটি হইতেছে ‘সাদেকা’ আর দ্বিতীয়টি হইতেছ আমার নিম্ন জনি। তবে ‘সাদেকা’ এমন একখানি গ্রন্হ, যাহা আমি নবী করীম (স)- এর নিকট হইতে (শুনিয়া) লিখিয়া লইয়াছি।[সুনানে দারেমী; পৃষ্ঠা ৬৭. – ************* জামে’ বয়ানুল ইলম-ইবনে আবদুল বার ************] ইহাতে এক হাজারটি হাদীস সংগৃহীত হইয়াছিল।[*********************]
হযরত আবদুল্লাহর ইন্তেকালের পর এই ‘সাদেকা’ গ্রন্হখানি তাঁহার পৌত্র শুয়াইব ইবন মুহাম্মদের হস্তগত হয়। তাঁহার নিকট হইতে পুত্র আমর সাদেকা’র হাদীসসমূহ লোকদের নিকট বর্ণনা করেন।
******************************************************
হাদীস গ্রন্হসমূহে আমর ইবনে শুয়াইব, তাহার পিতা হইতে………….. তাঁহার দাদা হইতে সূত্রে যত হাদীসই বর্ণিত হইয়াছে, তাহা সবই এই ‘সাদেকা সহীফা’ হইতে গৃহীত ও বর্ণিত।[তিরমিযী শরীফ, *********************- কিতাবুল ইলম, দারেমী।]
মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল গ্রন্হে এই সহীফাখানি সম্পর্ণ শামিল হইয়াছে। ফিকাহর চারজন ইমামই এই গ্রন্হের হাদীস দলীল হিসাবে পেশ করিতেন।[যাদুল মায়াদ-ইবনুল কাইয়্যেম, ৩য় পৃষ্ঠা ৪৫৮।]
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেনঃ একজন আনসার সাহাবী রসালে করীম (স)-এর খিদমতে বসিয়া থাকিয়া তাঁহার বাণী শুনিতেন; তাহা তাঁহার খুবই ভাল লাগিত, পছন্দ হইত। কিন্তু তিনি কোন কথাই ভালভাবে স্মরণ রাখিতে পারিতেন না। সব কথা স্মরণ রাখার ব্যাপারে তিনি ছিলেন কতকটা ব্যতিক্রম। তাই একদিন তিনি তাঁহার এই অসুবিধার কথা রাসূলের নিকট প্রকাশ করিলে রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ ******************** ‘তোমার দক্ষিণ হস্তের সাহায্য গ্রহণ কর’। এই বলিয়া তিনি হাত দ্বারা লিখিবার কথা বুঝাইয়াছিলেন।[**************]
নবী করীম (স) সকল প্রকার ইলম –বিশেষভাবে ইলমে হাদীস লিখনের মাধ্যমে অক্ষয় ও চিরন্তন করিয়া রাখার জন্য আদেশ করেন।
তিনি বলেনঃ- ******************* ‘ইলম লিপিবদ্ধ করিয়া রাখ’। অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ করা হইয়াছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) বলেনঃ নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
******************************************************
ইলমে হাদীস বন্দী করিয়া সংরক্ষিত কর?
আমরা জিজ্ঞাসা করিলামঃ
******************************************************
উহাকে কেমন করিয়া বন্দী করিব।
রাসূল বলিলেনঃ
******************************************************
উহাকে লিখিয়া লও।[মুস্তাদরাক, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৬।]
আবু তুফাইল আমের ইবনে ওয়াসিল বলেনঃ আমি একদিন হযরত আলীর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি হযরত আলী (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
******************************************************
রাসূল আপনাকে বিশেষভাবে কোন জিনিস দান করিয়াছেন কি?
জওয়াবে হযরত আলী (রা) বলিলেনঃ
******************************************************
রাসূল বিশেষভাবে আমাকে এমন কোন জিনিস দিয়া যান নাই, যাহা সকল লোককে সাধারণভাবে দেন নাই। তবে আমার এ্ই তরবারির খাপের মধ্যে যাহা লিখিথ অবস্থায় আছে, তাহা আমাকে তিনি বিশেষভাবে দান করিয়া গিয়াছেন।[জামে বায়ানুল ইলম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭২; মুস্তাদরাক-হাকেম, মুসলিম, শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬১।]
অপর এক বর্ণনায় কথাগুলি নিম্নরূপ ভাষায় বলা হইয়াছে। হযরত আলী (রা)-কে জিজ্ঞাসাকরার হইলঃ
******************************************************
রাসূল আপনার নকট গোপন করিয়া কি কিছু বলিয়া গিয়াছেন?
জওয়াবে হযরত আলী (রা) বলিলেনঃ
******************************************************
রাসূল আমাকে অন্য লোকদের হইতে লুকাইয়া একটি জিনিস ব্যতীত গোপনভাবে আর কিছুই দিয়া যান নাই। সেই জিনিসটি হইল এই যে, তিনি চারিট কথা আমাকে বলিয়া গিয়াছেন।[জামে বয়ানুল ইলম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭২ ; মুস্তাদরাক-হাকেম, মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬১।]
হযরত আবু হুযায়ফা (রা) হইতেও অনুরূপ ঘটনা বর্ণিত হইয়াছে। তিনি বলেন, একদিন তিনি হযরত আলী (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
******************************************************
আপনার নিকট কোন লিখিত জিনিস আছে কি? উত্তরে তিনি বলিলেনঃ
******************************************************
না। আল্লাহর কিতাব, মুসলিম ব্যক্তিকে প্রদত্ত বোধশক্তি এবং এই সহীফায় লিখিত জিনিস ব্যতীত আমার নিকট আর কিছুই নাই।
হুযায়ফা (রা) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
******************************************************
এই সহীফার মধ্যে কি কি লিখিত আছে?
হযতর আলী (রা) বলিলেনঃ
******************************************************
ইহাতে রক্তপাতের বদলা, বন্দী মুক্তিদান ও কাফির হত্যার শাস্তিস্বরূপ মুসলিম নিহত হইবে না- এই সব কথা লিখিত আছে।[বুখারী শরীফ, কিতাবুল ইলম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১।]
আবু তুফাইল বর্ণিত হাদীসের শেষভাগে বলা হইয়াছে, অতঃপর হযরত আলী (রা) তাঁহার কোষের মধ্য হইতে একখানি সহীফা বাহির করেন। তাহাতে নিম্নোক্ত কথাগুলি লিখিত ছিলঃ
******************************************************
যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অপর কাহারো উদ্দেশ্যে জন্তু বা প্রাণী যবেহ করে, তাহার উপর আল্লাহর অভিশাপ; যে ব্যক্তি জমির বিভিন্ন অংশের চিহ্ন চুরি করে বা (অপর বর্ণনামতে ) পরিবর্তন করে, তাহার প্রতি আল্লাহর লা’নত; এবং যে ব্যক্তি কোন ইসলাম বিকৃতকারী বা বিদ’আত ব্যক্তিকে আশ্রয় দান করে, তাহার উপর আল্লাহর লা’নত।[মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৬২।]
এই সম্পর্কে বুখারী শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসও এখানে উল্লেখযোগ্য। ইয়াযীদ ইবনে শরীফ বলেনঃ
******************************************************
হযরত আলী (রা) একদিন ‘আজুর’ নামক স্থানে মিম্বরের উপর দাঁড়াইয়া আমাদের সম্মুখে ভাষণ দিতেছিলেন। তাঁহার স্কন্ধে একখানি তরবারি ঝুলানো ছিল। উহার সহিত একটি ‘সহীফা’ ও লটকানো ছিল। তিনি বলিলেনঃ আল্লাহর শপথ, আমর নিকট পাঠযোগ্য কোন কিতাব- আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফার লিখিত জিনিস ব্যতীত- নাই। এই বলিয়া তিনি সহীফাখানি খুলিয়া ধরিলেন। তাহাতে উষ্ট্রের দাঁত রক্ষিত দেখিলাম এবং লিখিত দেখিলামঃ মদীনা ‘আইর’ নামক স্থান হইতে অমুক পাহাড় পর্যন্ত হেরেম। এই স্থানে যদি কেহ কোন বিদ’আত- ইসলাম-বহির্ভূতকাজ করে, তবে তাহার উপর আল্লাহ ফেরেশতা ও সমগ্র মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তাহার কোন অর্থব্যয় বা বিনিময় কবুল করিবেন ন। উহাতে আরো লিখিত ছিলঃ সকল মুসলিমের ‘যিম্মা’ এক, উহার জন্য তাহাদরে সকলেই চেষ্টা করিবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের সহিত কৃত ওয়াদা ভংগ করিবে, তাহার উপর আল্লাহর ফেরেশতা ও সমগ্র মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তাহার কোন অর্থব্যয় বা বদলা গ্রহণ করিবেন না।
উহাতে ইহাও লিখিত ছিল৬ ‘যে ব্যক্তি স্বীয় পৈতৃক সম্পর্ক ব্যতীত অপর কাহারো সহিত পৈতৃক সম্পর্ক স্থাপন করিবে, তাহার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সমগ্র মানুষের অভিশাপ। তাহার নিকট হইতে কোন অর্থব্যয় বা বদলা গ্রহণ করা হইবে না’।[বুখারী, শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৮৪।]
হযরত হুযায়ফা (রা) বর্ণিত অপর একটি হাদীসও এই প্রসঙ্গেই উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেনঃ
******************************************************
আমি হযরত আলী (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিলামঃআপনার নিকট আল্লাহর কিতাব লিখিত ওহী ব্যতীত ওহী’র আর কোন জিনিস আছে কি?
হযরত আলী ইহার জওয়াবে বলিলেনঃ
******************************************************
না, যে আল্লাহ বীজ দীর্ণ করেন ও মানুষকে সৃষ্টি করে, তাঁহার শপথ, আমি কুরআন ব্যতীত অহীর অপর কোন জিনিস জানি না। তবে জানি দুইিট জিনিস- একটি হইল বোধশক্তি, যাহা আল্লাহ তা’আলা এই কুরআন হইতে এক ব্যক্তিকে দান করেন; আর দ্বিতীয় জিনিস, যাহা এই সহীফায় লিখিত আছে।
হযরত হুযায়ফা (রা) জিজ্ঞাসা করিলেন৬ এই সহীফায় কি আছে? তখন হযরত আলী (রা) বলিলেনঃ ‘উহাতে দিয়ত’ বন্দীমুক্তির নিয়ম এবং কাফিরের বিনিময়ে কোন মুসলমানকে হত্যা করা হইবে না’ লিখিত আছে।[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, কিতাবুল জিহাদ পৃষ্ঠা ৪২৮। এই হাদীস হইতে জানা যায় যে, সহীফাখানিতে কতকগুলি হাদীস লিখিত ছিল এবং তাহাও ওহীরই অংশ। দ্বিতীয়ত কেবল কুরআনই ওহীলব্ধ জিনিস নহে, হাদীসও ওহীলব্ধ জিনিস।]
হযরত আলী (রা)- এর এই ভাষণ সম্পর্কই আর একটি বর্ণনারও উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বলেনঃ
******************************************************
আমরা নবী করীম (স)- এর নিকট হইতে কুরআন মজীদ ও এই সহীফায় লিপিবদ্ধ হাদীস ব্যতীত আর কিছুই লিখি নাই।[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫১।]
উপরে উল্লিখিত সমস্ত বর্ণনা ও আলোচনার সারকথা এই যে, হযরত আলী (রা) নবী করীম (স)-এর নিকট হইতে কুরআন মজীদ এবং হাদীস শরীফ লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন। উপরন্তু তিনি হাদীসের একটি সংকলনও তৈয়ার করিয়া লইয়াছিলেন। উহাতে কি ধরনের হাদীস লিখিত ছিল, তাহা উপরোল্লিখিত বিভিন্ন বর্ণনা হইতে জানা গিয়াছে। কিন্তু উহার সংখ্যা কত ছিল, তাহা কোথাও উল্লেখ করা হয় নাই।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেনঃ
******************************************************
রাসূল (স)-এর সাহাবীদের মধ্যে আমর অপেক্ষা অধিক কেহ রাসূলের হাদীস বর্ণনা করেন নাই । তবে আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আ’স অধিক বর্ণনা করিয়াছেন। ইহার কারণ এই যে, তিনি হাদীস লিখিয়া রাখিতেনঃ কিন্তু আমি লিখিতাম না।[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২। সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৬৭।]
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আ’স (রা) যে রাসূলের হাদীসমূহ লিখিয়া রাখিতেন, তাহা ইতিপূর্বে প্রমাণিত হইয়াছে। তবে হযরত আবূ হুরয়ারার নিজ সম্পর্কিত উক্তি তাঁহার প্রথম জীবনের জন্য প্রযোজ্য, জীবনের শেষভাগের জন্য নয়। কেননা তিনি প্রথম পর্যায়ে রাসূলের হাদীস লিখিয়া রাখিতেন না, তখন উহা লিখিয়া রাখার প্রয়োজন বোধ করিতেন না। তিনি যাহা শুনিতে পাইতেন, তাহা মুখস্থ করিয়া রাখাকেই যথেষ্ট মনে করিতেন। আর তিনি অপরের তুলনায় অধিক স্মরণশক্তিসম্পন্নও ছিলেন। তাঁহার শক্তি সম্পর্কে হাদীসে বলা হইয়াছেঃ
******************************************************
অপরে যাহা স্মরণ রাখিতে পারিতেন না, তাহা তিনি স্মরণ রাখিতে পারিতেন।[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২।]
হযরত আবূ হুরায়রার স্মরণশক্তি অধিক হওয়া সম্পর্কে তাঁহার নিজের জবানীতেই একটি ঘটনার উল্লেখ করা হইয়াছে। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হইয়াছে-একদিন নবী করীম (স) মজলিসে উপস্থিত লোকদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিলেনঃ
******************************************************
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাহার কাপড় বিছাইয়া দিয়া আমার এই হাদীস শ্রবণ করিবে, তাহার পর উহাকে নিজের বুকের সাথে মিলাইবে, সে যাহা শুনিবে, তাহার কোন কথাই সে কখনো ভুলিয়া যাইবে না।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেনঃ
******************************************************
এই কথা শুনিয়া আমি আমার স্কন্ধে রক্ষিত চাদরখানা বিছাইয়া দিলাম। রাসূল যখন তাহার কথা সম্পূর্ণ করিলেন, তখন চাদরখানাকে আমার বুকের সহিত লাগাইলাম। অতঃপর রাসূলের নিকট শোনা কোন হাদীসই আমি ভুলিয়া যাই নাই।[মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০২,*************]
স্মরণশক্তির এই প্রখরতা সত্ত্বেও তিনি শেষ পর্যন্ত হাদীস লিখিয়া রাখিতে শুরু করেন এবং তিনি বিপুল সংখ্যা হাদীস লিপিবদ্ধ করিয়া লন। তাঁহার লিখিত হাদীসের সংখ্যা ছিল পাঁছ সহস্রাধিক।[মুস্তাদরাক হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১১, ফতহুল বারী- ************* জামে’ বায়ানুল ইলম – ইবনে আবদুল বার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৪।]
হযরত আবূ হুরায়রার নিকট হাদীস শিক্ষাপ্রাপ্ত হাসান ইবনে আমর ইবনে উমাইয়া জমরী একদিন তাঁহাকে (আবূ হুরায়ারাকে) একটি হাদীস মুখস্থ শোনান এবং বলেন, ‘ইহা আপনার নিকট হইতে শুনিয়াছে’। তখন আবূ হুরায়রা (রা) বলিলেনঃ আমার নিকচ হইতে শুনিয়া থাকিলে উহা নিশ্চয়ই আমার নিকট লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। অতঃপর তিনি হাসানের হাত ধরিয়া নিজের ঘরে লইয়া গেলেন এবং তাঁহা লিখিত হাদীসসমূহের এক বিরাট স্তুপ দেখাইয়া বলিলেনঃ তোমার বর্ণিত হাদীসটি ইহাতে লিখিত রহিয়াছে।
হাসান বলেনঃ
******************************************************
তিনি (আবূ হুরায়রা) আমাকে বিপুল সংখ্যক কিতাব দেখাইলেন, উহাতে রাসূলের হাদীস লিখিত ছিল।[ফতহুল বারী গ্রন্হের ১ম খণ্ডের ১৮৪ পৃষ্ঠায় লিখিত রহিয়াছেঃ হযরত আবূ হুরায়রা কর্তৃক সংগ্রহীত হাদীস বিপুল পৃষ্ঠায় ছড়াইয়াছিল, ইবনে ওহাব ইহা দেখিয়াছিলেন।]
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে প্রায় আটশত কিংবা ততোধিক সাহাবী ও তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [****************] ‘মুসনাদে আবী হুরায়রা’ নামক গ্রন্হখানি সাহাবীদের যুগেই সংকলিত হয়।[*********************]
হযরত আনাস (রা)- ও হাদীস লিখিয়া রাখিতেন। তিনি দশ বৎসর বয়সকালেই লিখিতে ও পড়িতে সক্ষম হইয়াছিলেন। তাঁহার পিতা তাঁহাকে রাসূলের খেদমতের জন্য পেশ করিয়া বলিয়াছিলেনঃ
******************************************************
হে রাসূল! এই আমার পুত্র, লিখিতে-জানা বালক।[****************]
তিনি রাসূলের খেদমতে ক্রমাগত দশ বৎসর কাল অতিবাহিত করেন। রাসূলের নিকট তিনি যাহা কিছু শুনিতেন, তাহা যে তিনি লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিবেন, তাহা আর বিচিত্র কি! সায়ীদ ইবন হেলাল বলেনঃ
******************************************************
আমরা আনাস ইবনে মালিক (রা)-কে হাদীস বর্ণনা করার জন্য শক্ত করিয়া ধরিলে তিনি একটি চোঙ বাহির করিয়া আনিতেন এবং বলিতেনঃ ইহা সেইসব হাদীস, যাহা আমি নবী করীম (স)- এর নিকট শুনিয়াছি এবং লিখিয়া লওয়ার পর ইহা তাঁহাকেই পড়িয়া শোনইয়াছি।[মুস্তাদরাক-হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭৩।]
ইহা হইতে জানা গেল যে, হযরত আনাস (রা) রীতিমত হাদীস লিখিয়া রাখিতেন। শুধু নিজে নিজে লিখিয়াই স্তুপ করিতেন না বরং উহা রাসূলকে পড়িয়া শোনাইতেন এবং ভূল-ক্রটি সংশোধন করিয়া লইতেন।[***********]
তিনি তাঁহার পুত্রদেরও হাদীস লিখিয়া রাখিতে আদেশ করিতেন। বলিতেনঃ
******************************************************
হে পুত্রগণ! এই ইলমে হাদীস লিপিবদ্ধ করিয়া রাখ।[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৬৮।]
তিনি যখন বাহরাইনের শাসনকর্তা নিযুক্ত হইয়া তথায় গিয়াছিলেন, তখন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) তাঁহার নিকট একখানি হাদীস সংকলন প্রেরণ করিয়াছিলেন। উহার শুরুতে লিখিত ছিলঃ
******************************************************
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম- ইহা সাদকার বিধান, রাসূল (স) মুসলমানদের প্রতি ইহা নির্ধারিত করিয়াছেন এবং আল্লাহ তাঁহার রাসূলকে ইহারই আদেশ দান করিয়াছেন।[বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৫। আবূ দাউদ-১৫৬৭ ন’র হাদীস।]
হযরত আনাসরে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে এই সংকলনেরও যে বহু হাদীস রহিয়াছে, তাহাতে কোনই সন্দেহ নাই।
হযরত জাবির (রা)- ও হাদীসের একটি সংকলন সংগ্রহ করিয়াছিলেন।[*************]
হাসান বসরী ও কাতাদাহ প্রমুখ তাবেয়ী যুগের মুহাদ্দিসগণ এই সংকলন হইতেই হাদীস গ্রহণ ও বর্ণনা করিতেন। এতদ্ব্যতীত সুলায়মান ইবনূল কায়স আবূ যুবায়র, আবূ সুফিয়ান ও শা’বী প্রমুখ তাবেয়ী্ও হযরত জাবিরের এই সংকলন হইতেই হাদীস বয়ান করিতেন। আবূ সুফিয়ান হযরত জাবির হইতে যত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা সবই এই সহীফা হইতে গৃহীত।[**************]
হযরত জাবিরের এই হাদীস সংকলনের কথা প্রায় সকল মুহাদ্দিসই উল্লেখ করিয়াছেন। হাফেয যাহবী কাতাদাহ ইবিনে দুয়ামাতা সম্পর্কে ইমাম আহমদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেনঃ
******************************************************
কাতাদাহ বসরাবাসীদের মধ্যে অধিক স্মরণশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যাহাই শুনিতেন, তাহাই মুখস্থ করিয়া ফেলিতেন। একবার তাঁহার সম্মুখে হযরত জাবিরের হাদীস-সংকলন পাঠ করা হয় এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গেই তাহা সম্পূর্ণ মুখস্থ করিয়া লন।[**************]
কাতাদাহ নিজেই বলিতেনঃ
******************************************************
আমি সূরা বাকারা অপেক্ষা জাবিরের সহীফা অধিক মুখস্থ করিয়াছিলাম।[***************]
ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, হযরত জাবির (রা) হাদীসের এক সংকলন তৈয়ার করিয়াছিলেন এবং তাহাতে তাঁহার পরবর্তীকাল পর্যন্ত হাদীস শিক্ষার্থীগণ কর্তৃক রীতিমত পঠিত এবং তাহা হইতেই হাদীস বর্ণিত হইত।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-ও হাদীস লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিতেন। ফলে তিনি বিপুল সংখ্যক হাদীসের এক সংকলন তৈয়ার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তাঁহার ইন্তেকালের পর এই সংকলন তাঁহার পুত্রদের নিকট সংরক্ষিত ছিল। তাঁহার পুত্র আবদুর রহমান একখানি হস্তলিখিত হাদীস সংকলন দেখাইয়া বলিতেনঃ ‘আল্লাহর শপথ, ইহা আব্বাজানের হস্তলিখিত হাদীস সংকলন।[*************]
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা)-ও হাদীস লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। তাঁহার ইন্তেকালের পর এই হাদীস সংগ্রহখানি মীরাসী সূত্রে লাভ করেন তাঁহার পুত্র সালমান ইবনে সামুরা। ঐতিহাসিক ইবনে সিরীন বলেনঃ ‘সামুরার সংকলিত হাদীস গ্রন্হে বহুমূল্য ইলম সন্নিবেশিত রহিয়াছে।[****************]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) যে সব হাদীস শুনিতে পাইয়াছিলেন, তাহা সবই গ্রন্হকারে সংকলিত করিয়াছিলেন। তায়েফের কিছু লোক তাঁহার নিকট শুনিয়া শুনিয়া এই পূর্ণ গ্রন্হখানি নকল করিয়া লইয়া গিয়াছিল।[****************] তিনি চিঠিপত্র লিখিয়াও হাদীস প্রচার করিতেন।[আবু দাউদ, কিতাবুল আকযীয়া] তাঁহার ইন্তেকালের পর তাঁহার পুত্র আলী ইবনে আদুল্লাহ বহু সংখ্যক হাদীস সংকলন উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন।[***************] বর্ণিত হইয়াছেঃ
******************************************************
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) এক উট বোঝাই হাদীসগ্রন্হ রাখিয়া গিয়াছিলেন।[*************]
হযরত ইবনে আব্বাসের হাদীস লেখা সম্পর্কে নিম্নোক্ত বর্ণনা উল্লেখযোগ্য। আলকাতানী ‘তবাকাতে ইবনে সায়াদে’র সূত্রে আবূ রাফে’র স্ত্রী সালমা’র এই কথাটির উল্লেখ করিয়াছেনঃ
******************************************************
আমি ইবনে আব্বাসকে কিছু লেখার তখতি লইয়া তাহার উপর আবূ রাফে হইতে রাসূলের কাজকর্ম সম্পর্কে কোন কথা লিখিতে দেখিয়াছি।[*********************]
আল-কাতানী ইহাও লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
ইবনে আব্বাস আবূ রাফে’র নিকট আসিতেন। বলিতেনঃ রাসূলে করীম (স) অমুক দিন কি করিয়াছেন? …………. ইবনে আব্বাস সঙ্গে এমন একজন লোক লইয়া আসিতেন, আবূ রাফে যাহা বলিতেন সে লিখিয়া লইত।[****************]
হযরত ইবনে আব্বাসের লিখিত হাদীস সম্পদ যে কত বিরাট ছিল, তাহা নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি হইতে অনুমান করা যায়। ইমাম মূসা ইবনে আকাবা বলেনঃ
******************************************************
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের গোলাম কারীব আমাদের সম্মখে তাঁহার (ইবনে আব্বাসের ) লিখিত হাদীস গ্রন্হসমূহের এক উষ্ট্রবোঝাই সম্পদ পেশ করে।[***************]
হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) হযরত মুয়াবিয়র (রা)-কে তাঁহার অনুরোধক্রমে বহুসংখ্যক হাদীস লিখাইয়া দিয়াছিলেন।[সহীহ বুখারী শরীফ,*********] ইমাম বুখারী (র) এই সম্পর্কে নিম্নোক্ত বর্ণনার উল্লেখ করিয়াছেনঃ
******************************************************
মুগীরা ইবনে শু’বার লেখক অররাদ বলেনঃ মুগীরা ইবন শু’বা মুয়াবিয়া (রা)-র প্রতি লিখিত এক কিতাবে (পত্রে) আমার দ্বারা (অনেক হাদীস) লিখিয়াছিলেন।[সহীহ বুখারী শরীফ, ***********]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রা) নবী করীম (স)-এর ইন্তেকালের পর অপর একখানি হাদীস সমষ্টি তৈয়ার করেন। ঐতিহাসিকদের এক বর্ণনায় জানা যায়, স্বয়ং নবী করীম (স)-ই তাহা করার জন্য তাঁহাকে নির্দেশ দিয়াছিলেন।[******************] উহার নাম ছিল ‘সহীফায়ে ইয়ারমুক।[******************]
হযরত সায়াদ ইবনে উবাদা আনসারীও হাদীসের একখানি সহীফা সংকলন করিয়াছিলেন। তাঁহার পুত্র এই ‘সহীফা’ হইতেই হাদীস বর্ণনা করিতেন।[***************] ইমাম বুখারী বলেনঃ
******************************************************
এই সহীফাখনি আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফার সহীফারই এক খণ্ড ছিল।[********************] তিনি নিজের হাতেই হাদীস লিখিতেন।
মোট কথা নবী করীম (স)-এর অনুমোদন, অনুমতি ও উৎসাহদানের ফলে সাহাবায়ে কিরাম ইসলামরে এই মহামূল্য সম্পদ-ইলমে হাদীস-সংরক্ষণ, লিখন ও সংকলনের জন্য সর্বাত্মকভাবে তৎপর হইয়াছিলেন। তদানীন্তন সমাজে ইলমে হাদীসের চর্চা একমাত্র পরকালীন সওয়ার লাভের উপায় হিসাবে করা হইত না, সামাজিক মর্যদা লাভ, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, অন্তর্নিহিত প্রতিভার বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যেও তখন ইহা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়রূপে গণ্য ছিল। এই কারণে নবী করীম (স)-এর অসংখ্য অপরিমেয় বাণী তাঁহার তৈরী করা সর্বাদিক বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী ও আল্লাহ ভীরু সাহাবাদের দ্বারা চিরদিনের জন্য সংরক্ষিত হয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আ’স বলেন, আমি অল্প বয়সে সাহবাদের জিজ্ঞাসা করিয়াছিলামঃ
******************************************************
আপানারা রাসূলের হাদীস কেমন করিয়া বর্ণনা করেন? আপনারাতো শুনিয়াছেন, যাহা তিনি বলিয়াছেন। অথচ আপনারা রাসূলের হাদীসেই নিমগ্ন ছিলেন?
এই কথা শুনিয়া তাঁহারা হাসিয়া উঠিলেন। বলিলেনঃ ‘হে আমাদের ভাই-পুত্র, আমার তাঁহার নিকট হইতে যাহাই শুনিতাম, তাহা আমাদের নিকট কিতাবে লিখিত রহিয়াছে।[তিবরানী, কবীর-এবং *********************]
এই ঘটনা হইতে প্রমাণিত হয় যে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর যখন অল্প বয়সের ছিলেন, তখনো সাহাবায়ে কিরাম হাদীস লিখিতেন। ইহা ইসলামী মদীনার প্রাথমিক যুগের কথা।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) মাহমুদ ইবনে রবী’র নিকট হযরত উৎবান ইবনে মালিক বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীস শ্রবণ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ
******************************************************
হাদীসটি আমার খুবই মনঃপুত হয়।
তখন তিনি তাঁহার পুত্রকে বলিলেনঃ **********- ‘ইহা লিখিয়া লও’। তখন ইহা লিখিত হয়।[***************]