হাদীস ও রাসূলের ইজতিহাদ
নবী করীম (স) হইতে বিশ্বমানব দুইটি জিনিস লাভ করিয়াছে। একটি হইতেছে কুরআন মজীদ আর দ্বিতীয়টি সুন্নাত। কুরআন সরাসরি আল্লাহর কালাম, আল্লাহর নিকট হইতেই ওহীর মারফতে নাযিল হইয়াছে। আর সুন্নাতেরও মূল উৎস হইতেছে ওহী। রাসূলে করীম (স) অনেক ক্ষেত্রে নিজেই ইজতিহাদ করিয়াছেন একথা সত্য; কিন্তু তাহাও ওহীবিহীন নহে। হয় উহার সহিত ওহীর সরাসরি সম্পর্ক রহিয়াছে, নয় উহা ওহী কর্তৃক সমর্থিত এবং অনুমতিপ্রাপ্ত। কাজেই রাসূলের ইজতিহাদকেও ইসলামের উৎস হিসাবে স্বীকার করিতে হইবে।
এই পর্যায়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর আলোচনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি এই বিষয়টির প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দান প্রসঙ্গে লিখিয়াছেনঃ
হাদীসের কিতাবসমূহে রাসূল (স) হইতে যেসব হাদীস বর্ণিত ও উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহা দুই প্রকারের। প্রথম প্রকারের হাদীস হইতেছে তাহা. যাহা রিসালাতের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে বলা হইয়াছে। কুরআনের আয়াতঃ
******************************************************
‘রাসূল তোমাদিগকে যাহা কিছু দিয়াছেন তাহা গ্রহণ কর, আর যাহা হইতে নিষেধ করিয়াছেন তাহা হইতে বিরত থাক’- এই বিশাল পর্যায়ে এই ধরনের হাদীস গণ্য। এই ধরনের হাদীসের এক ভাগ তাহা, যাহাতে পরকালের অবস্থা ও মালাকুতী জগতের বিস্ময়কর বিষয় সম্পর্কে বলা হইয়াছে। এইসব বিষয়ের ভিত্তি হইতেছে ওহী। হাদীসসমূহে যে ভাবে শরীয়াতের হুকুম-আহকাম বর্ণিত হইয়াছে, ইবাদাতের আরকান ও নিয়মাবলীর বিশ্লেষণ রহিয়াছে, জীবন প্রণালীর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা সম্পর্কিত ব্যাখ্যা ও উপদেশ রহিয়াছে, তাহা এই প্রথম পর্যায়ের প্রথম ভাগের হাদীস। প্রথম পর্যায়ের এই হাদীসসমূহের এব দ্বিতীয় ভাগের কিছু হাদীস ওহীবদ্ধ; আর কিছু রাসূলে করীমের নিজের ইজতিহাদ-ভিত্তিক। কিন্তু স্মরণ রাখিতে হইবে যে, রাসূলে করীমের ইজতিহাদও ওহীর সমপর্যায়ভুক্ত। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁহাকে ভূল ইজতিহাদ করিতে দেন নাই। তাঁহার ইজতিহাদ কখনো ভূল হইয়া গেলে সেই ভূলের উপর তাঁহাকে কায়েম থাকিতে দেন নাই। কোন প্রকার ভূল হইলে অনতিবিলম্বে আল্লাহর তরফ হইতে উহার সংশোধন ও বিশুদ্ধ হইয়া যাওয়া অপরিহার্য।[****************]
শাহ ওয়ালীউল্লাহ এই শেষ কথা কয়টি এই ভাষায় লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
এই প্রকারের হাদীসের কিছু অংশ ওহীমূলক, আর কিছু ইজতিহাদমূলক। তবে রাসূলে করীম (স)-এর ইজতিহাদও ওহীরই সমতুল্য। কেননা রাসূলের রায়কে ভূলের উপর স্থায়ী হইয়া থাকা হইতে আল্লাত তা’আল্অ তাঁহাকে রক্ষা করিয়াছেন।