তৃতীয় শতকের হাদীস সমৃদ্ধ শহর
তৃতীয় হিজরী শতকে ইলমে হাদীসের অপূর্ব উৎকর্ষ সাধিত হয়। মুসলিম জাহানের প্রায় সব কয়টি বড় বড় শহরেই তখন- শহর হইতে দূরবর্তী গ্রামে পর্যন্ত হাদীসের ব্যাপক চর্চা ও শিক্ষাদান হইতেছিল। তন্মধ্যে কতকগুলি শহর ছিল হাদীসের সর্বাপেক্ষা বড় কেন্দ্র। তথায় স্থানয়ভাবে যেমন বিপুল সংখ্যক মুহাদ্দিস হাদীস প্রচার করিতেন, অনুরূপভাবে হাদীস অনুসন্ধানকারী ও সংগ্রহক মুহাদ্দিসগণ এই সব শহরে আগমন করিয়া হাদীস শ্রবণ করিতেন ও তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া লইতেন। এই সময় মুহাদ্দিসগণ হাদীস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যেসব শহর ও স্থান পরিভ্রমন করিয়াছেন, সে সবের সংখ্যঅ অন্যূন পঞ্চাশ হইবে। হাফেয যাহবী এই শহর ও স্থানসমূহের নাম এবং উহাদের বিবরণ উল্লেখ করিয়া একখানি স্বতন্ত্র গ্রন্হ রচনা করিয়াছেন। উহার নাম হইলঃ
********************- হাদীস- সমৃদ্ধ শহরসমূহ।
এই হাদীস-কেন্দ্রসমূহের মধ্যে কয়েকটি শহর আবার অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই গুলির নাম ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক ইমাম ইবনে তায়মিয়া লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
এই হাদীস-কেন্দ্রসমূহের মধ্যে কয়েকটি শহর আবার অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই গুলির নাম ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক ইমাম ইবনে তায়মিয়া লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
মক্কা-মদীনা, কূফা-বসরা ও সিরিয়া – এই পাঁচটি শহর ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাদপীট; এইসব শহর হইতেই নবীর প্রচারিত জ্ঞান- ঈমান, কুরআন ও শরীয়াত সম্পর্কিত ইলম-এর ফল্গুধারা উৎসারিত হইয়াছে।[********************]
আমরা এখানে এই পাচঁটি শহর সম্পর্কে বিবরণ পেশ করিতে চাহি।
মদীনা
মদীনা বিশ্বনবীর কর্মজীবনের শেষ ভাগের কেন্দ্রস্থান দারুল হিজরাত; নবুয়্যাতী ইলম- এর আকর ও উৎস হইবার গৌরব কেবলমাত্র এই শহরের ভাগ্যলিপি। এ কারণে এই শহরের অপর নাম হইতেছে দারুস-সুন্নাত এবং ইহা যে খুবই উপযুক্ত নাম তাহাতে কোনই সন্দেহ থাকিতে পারে না।[********************] নবী করীম (স)-এর সময় হইতে হযরত আলী (রা)-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত ইহাই ছিল সমগ্র মসলিম জাহানের জ্ঞান ও কর্মের কেন্দ্রস্থল। উত্তরকালে ইমাম মালিক (র)-এর সময় পর্যন্ত ইহার এই মর্যাদা অক্ষুণ্ন ছিল। শেষ পর্যন্ত এই শহরের অধিবাসী ছিলেন নাফে; ইবরাহীম ইবনে সায়াদ; সুলায়মান ইবনে বিলাল ও ইসমাঈল ইবনে জাফর। [********************] তাঁহাদেরও পরে ছিলেন হাফেয আবূ মুসয়িব যুহরী, হাফেয ইবরাহীম ইবনুল মুসযির এবং হাফেয ইসহাক ইবনে মুসা আল-আনাসারী।
হাফেয আবূ মুসয়িব যুহরী সম্পর্কে হাফেজ যাহবী লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য একজন হাদীস বর্ণনাকারী, মদীনাবাসীদের জন্য হাদীসের উস্তাদ, বিচারপতি এবং মুহাদ্দিস।[********************]
তিনি ১৫০ হিরজী সনে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এবং ২৪২ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন। ইমাম নাসায়ী ব্যতীত সিহাহ-সিত্তার অপর পাঁচজন প্রণেতারই তিনি ওস্তাদ ছিলেন।
হাফেজ ইবরাহীম সম্পর্কে যাহবী লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
হাদীসের ইমাম বড় মুহাদ্দিস এবং নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী।
তিনি ইমাম বুখারী ও ইমাম নাসায়ীর উস্তাদ ছিলেন। হিজরী ২৩৬ সনে মদীনায় ইন্তেকাল করেন।[********************] হাফেজ ইসহাক সম্পর্কে যাহবী বলিয়াছেনঃ
******************************************************
ফিকাহবিদ, হাদসের হাফেজ এবং নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী।
তিনি ইমাম মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাযাহর হাদসের ওস্তাদ ছিলেন। ২৪৪ সনে তাঁহার ইন্তেকাল হয়।[********************]
এই তিনজনই হাদীসের বড় হাফেজ ও উস্তাদ ছিলেন। তাঁহাদের ছাড়াও বাকর ইবনে আবদুল ওহহাব মাদানী (মৃঃ ২৫০ হিঃ) হাসান ইবনে দাউদ (মৃঃ ২৪৭ হিঃ) ও মুহাম্মদ ইবনে উবায়দ মাদানী উল্লেখযোগ্য মুহাদ্দিস ছিলেন।
মক্কা
এই শহরেই রাসূলে করীম (স)-এর প্রতি ওহী নাযিল হইতে শুরু হইয়াছিল। এখানেই তাঁহাকে নবী ও রাসূলরূপে নিয়োজত নিয়োজিত করা হয়। অতঃপর নবী করীম (স) দীর্ঘ তেরোটি বৎসর প্রাণন্তকর সংগ্রাম ও দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়া এই শহরেই অতিবাহিত করিয়াছেন। সাহাবীদের যুগে এখানে ইলমে হাদীসের চর্চা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। সাহাবীদের শেষ যুগ এবং তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনের আমলে এখানে বিশিষ্ট মুহাদ্দিসের আবাসকেন্দ্র ছিল। মুজাহিদ, আতা, সায়ীদ ইবনে যুবাইর, ইবনে আবূ মূলাইকা এখানেই বসবার করিতেন ও হাদীস লিক্ষাদানের কাজ করিয়াছেন। উত্তরকালে এখানে আবদুল্লাহ ইবনে আবূ নযীহ, ইবনে কাসিম, হানযালা ইবনে উয়াইনা, আবূ সুফিয়ান, ইবনে জুরাইজ এবং মুসলিম জঞ্জী, ফুযায়ল ইবনে উয়াইন, আবূ আবদুর রহমান মূকরী, আজরাকী, হুমাইদী ও সায়ীদ ইবনে মনসুর প্রমুখ খ্যাতনামা মুহাদ্দিস বসবাস করেন।[********************]
তৃতীয় হিজরী শতকে মক্কা শহরে ইলমে হাদীসের চর্চা যদিও মদীনার মত ব্যাপক ছিল না, তথাপি হাদীস প্রদীপ তখনো তথায় প্রজ্বলিত ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। এই শতকে তথায় বেশ কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস জীবিত থাকিয়া হাদীস শিক্ষাদান ও প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁহারা হইতেছেনঃ
১। হাফেজ হালওয়ানী ইমাম আবূ মুহাম্মদ হাসান ইবন আলী ইবনে মুহাম্মদুল খাল্লাল। শেষ জীবন তিনি মক্কাতেই অতিবাহিত করেন। তিনি ‘মুহাদ্দিসে মক্কা’ নামে প্রখ্যাত হইয়াছিলেন। হাফেজ যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি হাদীসের গ্রন্হ সংকলন করিয়াছেন এবং এজন্য বহু কষ্ট ও শ্রম স্বীকার করিয়াছেন।
ইবনে আদী উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি ‘কিতাবুস সুনান’ নামে হাদীসের একাখানি গ্রন্হ সংকলন করিয়াছিলেন। ২৪২ হিজরী সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।[********************]
২। হাফেজ যুবায়র ইবনে বাক্কার- আবূ আবদুল্লাহ ইবনে আবূ বকর কুরায়শী। হাফেজ যাহবী তাঁহার সম্পর্কে আলোচনা শুরু করিয়াছেন এই বলিয়াঃ
******************************************************
হাদীসের ইমাম, হাফেজ, নসব বিশেষজ্ঞ ও মক্কার বিচারপতি।
তিনি ইমাম ইবনে মাজাহর ওস্তাদ। ২৫৬ হিজরীতে তিনি মক্কাতেই ইন্তেকাল করেন।[********************]
৩। হাফেয সালাম ইবনে শুবাইব- আবূ আবদুর রহমান আল-হুজুরী আল-মাসময়ী। আসলে তিনি ছিলেন নিশাপুরের অধিবাসী। পরে তিনি স্থায়ীভাবে মক্কায় বসবাস শুরু করেন। আবূ নয়ীম ইসফাহানী তাঁহার সম্পর্কে বলেনঃ
******************************************************
তিনি অন্যতম নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী, বহু ইমাম ও প্রথম পর্যায়ের লোকেরা তাঁহার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
হাকেম লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি মক্কাবাসীদের মুহাদ্দিস, তাঁহার সততা ও ইলমের গভীরতা সম্পর্কে সকলেই একমত।
তিনি ২৪৬ হিজরী সনে ইন্তোকল করেন।[********************]
৪। হাফেজ ইয়াকুব ইবনে হুমাইদ- প্রথমে মদীনার বাসিন্দা ছিলেন, পরে মক্কায় বসবাস করিতে থাকেন। হাফেজ যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
হাদীসের ইমাম, পারদর্শী মুহাদ্দিস, মদীনার আলিম, মক্কায় অবস্থানকারী।
ইমাম বুখারী তাঁহার ছাত্র। ২৪১ হিজরী সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
এই চারজন ছিলেন হাদীসের হাফেজ। এতদ্ব্যতীত হাদীসের শিক্ষক শায়খ ছিলেন অনেক।
কূফা
ঐতিহাসিক ইবনে সায়াদ কূফা নগরের হাদীস-জ্ঞানমূলক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন প্রসংগে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
গাছের তলায় মৃত্যুর জন্য বায়’আত গ্রহণকারী তিনশতজন সাহাবী ও বদর যুদ্ধে যোগদানকারীদের মধ্য হইতে সত্তরজন সাহাবী এই কূফা নগরে অবস্থান করিতেন।[********************]
কিন্তু হাফেজ আবূ বাশর দুলাবী কাতাদা হইতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে উদ্ধৃত করিয়াছেনঃ
******************************************************
কূফা নগরে নবী করীম (স)-এর এক হাজার পঞ্চাশজন সাহাবী আগমন করেন। এতদ্ব্যতীত বদর যুদ্ধে যোগদানকারীদের মধ্য হইতে চব্বিশজন সাহাবীও আগমন করিয়াছিলেন।[********************]
এই শহরে হাদীসের ব্যাপক শিক্ষাদান ও চর্চা হইত। ইবনে শীরীন তাবেয়ী বলেনঃ
******************************************************
আমি যখন কূফা আগমন করি, তখন সেখানে চার হাজার হাদীস শিক্ষার্থী শিক্ষায় নিয়োজিত ছিল।[********************]
হাদীসের অধ্যায়ভিত্তিক সংকলন এই শহরেই সর্বপ্রথম শুরু হয়। সহীহ হাদীসের প্রথম সমষ্টি এইখানেই গ্রন্হাবদ্ধ হয়। ইমাম আবূ হানীফা (র) এই শহরেরই অধিবাসী ছিলেন বলিয়া হাদীসের ভিত্তিতে ফিকাহর জন্ম ও উৎকর্ষ সাধিত হইয়াছিল এই শহরের পরিবেশের মধ্যে। এই শহরে হাদীসের হাফেজ আবূ বকর ইবনে আবূ শায়বা বসবার করিতেন। হাফেজ যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
আবূ বকর হাদীসের হাফেজ, অতুলনীয়, দৃষ্টান্তহীন ও নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী এবং বিশেষ দক্ষতারসম্পন্ন ব্যক্তি।[********************]
ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবূ দাঊদ ও ইবনে মাজাহ তাঁহার বিশিষ্ট ছাত্র ও শাগরিদ। তাঁহাদের হাদীস গ্রন্হসমূহে তাঁহার নিকট হইতে গৃহীত বহুসংখ্যক হাদীস সন্নিবেশিত রহিয়াছে।[********************] ইমাম আবূ জুরয়া তাঁহার সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ
******************************************************
ইবনে আবূ শায়বা অপেক্ষা হাদীসের অধিক মুখস্থকারী আমি আর কাহাকেও দেখি নাই।[********************]
তিনি ২৩৫ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন। তিনি তাঁহার সংকলিত কয়েকটি গ্রন্হ স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে রাখিয়া গিয়াছেন।
শায়খূল ইসলাম আশাজ্জ আবূ সায়াদ আবদুল্লাহও এই শহেই বাস করিতেন। তাঁহারই নিকট হইতে আবূ বকর ইবনে আবূ দাঊদ এক মাসে ত্রিশ সহস্র হাদীস লিখিয়া লইয়াছিলেন। ইমাম ইবনে মাজাহও তাঁহার গ্রন্হে তাঁহার নিকট হইতে গৃহীত বহু হাদীস উদ্ধৃত করিয়াছেন। আল্লামা যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
আশাজ্জ হাদীসের ইমাম, মুসলামনদের নেতা, হাদীসের হাফেজ, কুফার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, কুরআনের তাফসীর ও অন্যান্য গ্রন্হাবলীর রচয়িতা।
সিহাহ সিত্তার সব কয়জন প্রণেতাই হাদীসে তাঁহার ছাত্র। তিনি ২৪৭ হিজরী সনে নব্বই বছরেরও বেশী বয়সে ইন্তেকাল করেন।[********************]
হাদীসের হাফেজ উসমান ইবনে আবূ শায়াবাহও এই শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন। তিনি উপরোল্লিখিত আবূ বকর ইবন আবূ শায়বার বড় ভাই। হাফেজ যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি তাঁহার ভাই আবূ বকরের মতই একজন শ্রেষ্ঠ হাদীসবিদ ও হাদীসের ইমাম।[********************]
‘দুররাতুল ইরাক’ (ইরাক-শিরোমণি) হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর কূফারই অধিবাসী ছিলেন। আলী ইবনুল হুসাইন ইবনুল যুনাইদ বলিয়াছেনঃ
******************************************************
‘তিনি ছিলেন জ্ঞান, বুদ্ধি, সুন্নাত ও পরহেযগার সমন্বয়, কূফা নগরে তাঁহার কোন দৃষ্টান্ত দেখিতে পাই নাই।[********************]
ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ইমাম আবূ দাঊদ ও ইবনে মাজা প্রমুখ সিহাহ প্রণেতাগণ তাঁহার ছাত্র। মুসলিম শরীফে তাঁহার সূত্রে ৫৩৬টি হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে। ইবনে মাজা গ্রন্হেও তাঁহার নিকট হইতে বহু হাদীস গৃহীত ও উল্লিখিত হইয়াছে।[********************]
আবু কুরাইব, মুহাদ্দিসে-কূফা কূফা নগরের প্রখ্যাত হাদীসের হাফেজ ছিলেন। সিহাহ-সিত্তাহ প্রণয়নকারী সব কয়জন মুহাদ্দিসই তাঁহার ছাত্র ছিলেন। ইবনে উকদাহ ইলমে হাদীসে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি বলিয়াছেনঃ কূফা নগরে আবূ কুরাইব হইতে তিন লক্ষ হাদীস প্রচারিত হইয়াছে। কেবল মূসরা ইবনে ইসহাকই তাঁহার নিকট হইতে এক লক্ষ হাদীস গ্রহণ করিয়াছিলেন। বুখারী শরীফে তাঁহার সূত্রে ৭৫টি এবং মুসলিম শরীফে ৫০০ টি হাদীস গৃহীত হইয়াছে। তিনি ২৪৩ হিজরী সনে প্রায় ৮৭ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন।[********************]
শায়খুল কূফা হান্নাদও কূফারই একজন বড় মুহাদ্দিস ছিলেন। হাফেজ যাহবী তাঁহা উচ্চ প্রশংসা করিয়াছেন এবং হাদীসের ইলম ও তাকওয়ায় তাঁহার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করিয়াছেন। সিহাহ সিত্তার সব কয়জন প্রণেতাই তাঁহার নিকট হাদীস শিক্ষালাভ করিয়াছেন। তিনি ২৪৩ সনে ৯১ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন।[********************]
হাফেজ ওলীদ ইবনে শুজা কূফার বিখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন। ইমাম মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ তাঁহার ছাত্র ছিলেন। ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন বলিয়াছেনঃ তাঁহার নিকট সিহাহ- নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সূত্রে বর্ণিত এক লক্ষ হাদীস সংগৃহীত ছিল। হাফেজ যাহবী তাহাকে ******************** ‘হাদীসের বড় হাফেজ ও সত্যপ্রিয় মুহাদ্দিস’ বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন। তিনি ২৪৩ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন।[********************]
হাফেজ হারূন ইবনে ইসহাক আল-হামদানী কূফার মুহাদ্দিসদের একজন ছিলেন। তিনি ছিলেন ইমাম বুখারী, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ প্রমুখ গ্রন্হ প্রণেতাদের ওত্তাদ। তিনি ২৫৮ সনে ইন্তোকল করেন।[********************]
এই কয়জন শ্রেষ্ট ও প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ছাড়াও হাদীসজ্ঞানে বহু ধারক, শিক্ষক ও প্রচারক তৃতীয় শতকে কূফা নগরে অবস্থান করিতেছিলেন। সিহাহ-সিত্তার কোন কোন কিতাবে বিশেষ করিয়া ইবনে মাজাহ শরীফে তাঁহাদের নিকট হইতে বহু হাদীস গ্রহণ করা হইয়াছে।
বসরা
হিজরী তৃতীয় শতক পর্যন্ত এই শহর ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র রূপে পরিগণিত ছিল। প্রথম দিকে হযরত আবূ মুসা আশআরী হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন, হযরত ইবনে আব্বাস ও আরো বহু সংখ্যক সাহাবী এই শহরে বসবাস করিতেন। সর্বশেষ হযরত আনাস (রা)-ও এইখানে আসিয়া বসবাস শুরু করিয়াছিলেন। তাবেয়ীদের মধ্যে হাসানুল-বসরী, ইবনে শীরীন, আবূল আলীয়া এবং তাঁহাদের পরে কাতাদাহ, আইয়ূব, সাবেতুল বানানী, ইউনুস, ইবনে আউন আর তাঁহাদের পরে হাম্মাদ ইবনে সালমাহ, হাম্মাদ ইবনে যায়দ এবং তাঁহাদের ছাত্র মুহাদ্দিসগণ এই শহরেই জীবন অতিবাহিত করেন।[********************]
বসরা নগরে এত বিপুল সংখ্যক মুহাদ্দিসের সমাবেশ হইয়াছিল যে, হাফেজ মুসলিম ইবনে ইবরাহীম বসরী বলেনঃ
******************************************************
আমি আটশত হাদীসের ওস্তাদের নিকট হইতে হাদীস লিখিয়াছি অথচ সেজন্য আমাকে একটি পুল ও পার হইতে হয় নাই।[********************]
তৃতীয় শতক পর্যন্ত বসরায় হাদীসের যেসব হাফেজ ও উস্তাদ বর্তমান ছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে প্রধান কয়েকজনের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখানে উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
১। হাফেজ তহহান- হাসান ইবনে মুদরাক ইবনে বশীর আস-সদূসী। তিনি ইমাম বূখারী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহর উস্তাদ। তাঁহার সম্পর্কে ইবনে আদী বলিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি বসরা নগরের বিশিষ্ট হাফেজে হাদীসগণের অন্যতম ছিলেন।[********************]
২। হাফেজ যায়দ ইবনে আখজাম- আবূ তালিব তায়ী আল-বসরী। ইমাম মুসলিম ব্যতীত সিহাহ- সিত্তাহ প্রণেতা অপর কয়জন মুহাদ্দিসেরই তিনি উস্তাদ ছিলেন। হাফেজ যাহবী তাঁহাকে— ‘হাদীসের হাফেজ ও ইমাম’ বলিয়া উল্লেক করিয়াছেন।[********************]
৩। হাফেজ আব্বাস আনরবী। আল্লামা যাহভী তাঁহাকে – ******************** হাদীসের লব্ধপ্রতিষ্ঠ হাফেজ এবং ইমাম বলিয়া উল্লেখ করিাছেন। সিহাহ-সিত্তাহ প্রণেতাগণ তাঁহার নিকট হইতে হাদীস গ্রহণ ও নিজ নিজ গ্রন্হে উদ্ধৃত করিয়াছেন।[********************]
৪। হাফেজ আব্বাস বুহরানী ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আবূ হাবীব আল বসরী। হাফেজ যাহবী তাঁহাকে ******************** বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে, তিনি হাদীসের উচ্চতম সূত্র ও হাদীস সম্পর্কে গভীর প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। অকীহ ইবনুল জাররাহ, ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদুল কাত্তান, সুফিয়া ইবনে উয়াইনা ও আবদুর রাযযাক প্রমুখ বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ তাঁহার নিকট হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন। তিনি যখন বুহরান হইতে হামদান আগমন করেন তখন তিনি নিজস্ব বহু সংখ্যক হাদীস সংকলন হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। হামাদান, বাগদাদ ও ইসফাহান প্রভৃতি স্থানসমূহে তিনি হাদীস শিক্ষা দিতেন। তিন ২৫৮ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন।[********************]
৫। হাফেজ বিদয়া আবদুল্লাহ ইবনে ইসহাক আবূ মুহাম্মদ আল জাওহারী। তিনি ইমাম আবূ হানীফার প্রখ্যাত ছাত্র। ইমাম আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবেন মাজাহ- তাঁহারা সকলেই তাঁহার নিকট হইতে হাদীস শিক্ষা লাভ করিয়াছেন। তিনি ছিলেন হাদীসের একজন বিখ্যাত হাফেজ। ২৫৮ হিজরী সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।[********************]
৬। হাফেজ আকাবা ইবনে মুকাররম ইবনে আফলাহ হাদীসের বিখ্যাত হাফেজ ছিলেন।[********************] ইমাম মুসলিম, আবূ দাঊদ , তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ হাদীসে তাঁহার প্রসিদ্ধ ছাত্র ছিলেন। ২৪৩ সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।[********************]
৭। হাফেজ উমর ইবনে শিবাহ ইবনে উবাইদাহ আল-বসরী। হাফেজ যাহবীর ভাষায় তিনি ছিলেন ******************** হাদীসের বড় হাফেজ, বড় বিজ্ঞ আলিম, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী। ইবনে মাজাহ হাদীসে তাঁহার বিশিষ্ট ছাত্র ছিলেন। ২৬২ সনে ৮৯ বৎসর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
৮। হাফেজ আমার ইবনে আলী ফাল্লাস। হাফেজ যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেন ******************** হাদীসের বড় হাফেজ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। হাদীসে সিহাহ-সিত্তাহ প্রণেতা সব কয়জন মুহাদ্দিসই তাঁহার ছাত্র। ২৪৯ সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।[********************]
৯। ইমাম আবূ বকর মুহাম্মদ ইবনে বাশার ইবনে উসমান আল বসরী। সিহাহ-সিত্তাহ সংকলক সবকয়জন মুহাদ্দিসই তাঁহার ছাত্র। তিনি ২৫২ সনে ইন্তেকাল করেন। বুখারী শরীফে ২০৫ ও মুসলিম শরীফে ৪০৬টি হাদীস তাঁহার নিকট হইতে গৃহীত হইয়াছে।[********************]
১০। হাফেজ মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না। তিনি হাদীসের বড় হাফেজ ছিলেন। হাফেজ যাহবী তাঁহাকে ******************** হাদীসের হাফেজ, অকাট্য প্রামাণ্য মর্যাদাসম্পন্ন ও বসরার মুহাদ্দিস বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি সিহাহ-সিত্তাহ গ্রন্হাবলীর সবকয়জন মুহাদ্দিসেরই উস্তাদ। বুখারী শরীফে তাঁহার বর্ণিত ১০৩ ও সহীহ মুসলিম-এ ৭০০টি হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে। ইবনে মাজাহ গ্রন্হে তাঁহার নিকট হইতে বহু হাদীস গ্রহণ করা হইয়াছে।[********************]
১১। হাফেজ মুহাম্মদ বুহরানী- আবূ আবদুল্লাহ ইবনে মা’মর আল বসরী। তিনি হাদীসের প্রখ্যাত হাফেজ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছিলেন। সিহাহ-সিত্তাহর সংকলক সকলেই তাঁহার নিকট হইতে হাদীস গ্রহণ করিয়াছেলেন।[********************]
১২। হাফেজ নসর ইবনে আল- আবূ আমর আল-আযদী আল বসরী। তিনি সিহাহ-সিত্তাহর সবকয়জন গ্রন্হ প্রণতারই উস্তাদ ছিলেন। খলীফা মুস্তায়ীন বিল্লাহ তাঁহাকে বিচারপতির পদে নিয়োগ করিতে চাহিলে তিনি আল্লাহর নিকট কাতর কণ্ঠে দোয়া করিলেনঃ
******************************************************
হে আল্লাহ ! তোমার নিকট আমার জন্য কোন কল্যাণ থাকিলে, আমাকে তোমার নিকট লইয়া যাও।
আল্লাহ তাঁহার দোয়া কবুল করিলেন। তিনি দোয়া করিয়া ঘুমাইয়া পড়িলেন, আর জাগ্রত হইলেন না। ২৫০ হিজরী রবিউল আউয়াল মাসের এই ঘটনা।[********************]
১৩। হাফেজ ইয়াহইয়া ইবনে হাকীম আবূ সায়ীদ আল বসরী। ইবনে মাজাহ শরীফে তাঁহার বর্ণিত বহু সংখ্যক হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে। আবূ দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ- এই তিনজন তাঁহার ছাত্র। তাঁহাকে ******************** নির্ভরযোগ্য ও সতর্ক হাফেজে হাদীন বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে।[********************]
এই শতকে তাঁহাদের ছাড়া আরো বহু খ্যাতনামা মুহাদ্দিস বসরা নগরে বর্তমান ছিলেন।
বাগদাদ
আব্বাসী বাদশাহদের শাসন আমলে বাগদাদ শহর মুসলমানদের তাহযীব তমদ্দুন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রধান কেন্দ্র ছিল। হাফেজ নিশাপুরী এই শহর সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
এই শহর হাদীস ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র, এখানে বহু সংখ্যক মুহাদ্দিস ও বিজ্ঞ সুধী ব্যক্তি বসবাস করিতেন।[********************]
বাগদাদে কোন সাহাবীর ইন্তেকাল হইয়াছে বলিয়া জানা যায় নাই। তবে তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনের এক বড় জামাআত এখানে বসবাস করিয়াছেন এবং এই শহরেই তাঁহারা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়াছেন।[********************] এই শহরে বেশ কয়েকজন বড় বড় হাদীসবিদ অবস্থান করিতেন, ইমাম আবূ ইউসুফ (র) তাঁহাদের অন্যতম। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র) সর্বপ্রথম তাঁহার নিকট হাদীস শিক্ষা শুরু করেন।[********************]
ইমাম আসাদ ইবনে আমরও একজন বড় হাদীসবিদ এবং তিনি এই শহরে অবস্থান করিতেন। তাঁহার সম্পর্কে বলা হইয়াছেঃ******************************************************
‘রায় শহরের অধিবাসীদের মধ্যে ইমাম আবূ হানীফা (র)-র পরে ইমাম আসাদ অপেক্ষা অধিক সংখ্যক হাদীসের ধারক আর কেহ ছিল না।[********************]
বাগদাদে হাদীসের ব্যাপক শিক্ষাদান ও চর্চা হইত। এক-একজন মুহাদ্দিসের সম্মুখে হাজার হাজার ছাত্র হাদীস শিক্ষার উদ্দেশ্যে সমবেত হইত।
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র) এই শহরেরই অধিবাসী ছিলেন।[********************] ইমাম আবূ সওর (মৃঃ ২৪০ হিঃ), ইমাম দাউদ যাহেরী (মৃঃ ২৭০ হিঃ) ও ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জরীর তাবেরী (মৃতঃ ৩১০ হিঃ) বাগদাদেরই অধিবাসী ছিলেন। ইমাম তাবারীর বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর এই শহরেই লিখিত হয়।[********************]
দামেশক
দামেশক উমাইয়া খলীফাদের রাজধানী, সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত এক সভ্যতামণ্ডিত শহর। সিরিয়ায় এক সময় দশ সহস্র সাহাবী অবস্থান করিতেন। ঐতিহাসিক ইবনে আসাকির লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
সিরিয়ায় দশ সহস্র লোক এমন ছিলেন, যহাদের চক্ষু রাসূলে করীম (স)-কে দর্শনলাভে ধন্য হইয়াছিলেন।[********************]
পূর্বে এক স্থানে উল্লেক করা হইয়াছে, হযরত উমর ফারুক (রা) তাঁহার খিলাফতকালে হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল, উবাদাহ ইবনুস সামিত এবং আরো কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবীকে কুরআন ও হাদীসের ব্যাপক প্রচার ও শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় প্রেরণ করিয়াছিলেন। সিরিয়ায় জনগণ প্রথমত তাহাদের নিকট হইতেই কুরআন ও হাদীস শিক্ষা লাভ করেন এবং-
******************************************************
তাহাদের নিকট ও সূত্র হইতেই সমগ্র মুসলমানের নিকট কুরআন ও হাদীসের ইলম পৌঁছায়।[********************]
উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিক –এর শাসনকালে দামেশকে ইসলামী ইলমের ব্যাপক চর্চা হইত। তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনের সময়ও এখানে বহু সংখ্যক মুহাদ্দিস ও ফিকাহবিদ বর্তমান ছিলেন। হাফেজ যাহবী এই কথার উল্লেখ করার পর লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
দামেশক কুরআন-হাদীস ও ফিকাহর কেন্দ্রস্থল। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম হিজরী শতকে এখানে ইলমে হাদীসের চর্চা অনেকখানি হ্রাস পায়।[********************]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফিকাহবিদ ইমাম আওযায়ী এই শহরেরই অধিবাসী ছিলেন। হিশাম ও দহীম নামক দুইজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এখানে ছিলেন, তাঁহারা ব্যাপকভাবে হাদীসের দরস দিতেন। ইমাম ইবনে মাজাহ (র) এইসব দরসে শরীক হইয়াছেন এবং এখান হইতে তিনি বহু সংখ্যক হাদীস সংগ্রহ করিয়াছিলেন। ইমাম বুখারী, আবূ দাউদ ও নাসায়ীও তাঁহার ছাত্র। ২৪৫ হিজরী সনে হাফেজ দহীম ইন্তেকাল করেন এবং হিশাম দামেশকে ইন্তেকাল করেন।
আফ্রিকায় হাদীস চর্চা
মিসর
মিসর হাদীস চর্চা ও শিক্ষা প্রচারের দিক দিয়া এই যুগে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। এখানে অন্যূন তিনশত সাহাবী আগমন করিয়াছেন। হাফেজ যাহবী লিখিয়াছেনঃ
সাহাবায়ে কিরামের একটি বিরাট জামা’আত এখানে আসিয়া ব্যাপকভাবে বসবাস শুরু করেন। তাবেয়ীদেন যুগে এখানে হাদীসের চর্চা হয়। পরে আমর ইবনুল হারিস, ইহাহইয়া ইবনে আয়ুব, হায়াত ইবন শুরাইহ, লইস ইবনে সাআদ ও ইবনে লাহইয়ার যুগে হাদীস চর্চা পূর্বাপেক্ষা অধিক ব্যাপক রূপ পরিগ্রহ করে। ইবনে ওহাব, ইমাম শাফেয়ী, ইবনুল কাসেম এবং তাঁহাদের শাগরিদদের সময় পর্যন্ত এই চর্চা চলিতে থাকে।[********************]
হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয খলীফা নির্বাচিত হইয়া মিসরে হাদীসের ভিত্তিতে ফতোয়া দানের জন্য ইয়াযীদ ইবনে আবূ হুবাইবকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তিনিই সেখানকার লোকদিগকে হাদীস ও ফিকাহর সহিত পরিচিত ও উহার শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তোলেন। হাফেজ জালালুদ্দীন সুয়ূতী ইয়াযীদ ইবনে আবূ হুবাইব সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনিই মিসরে সর্বপ্রথম হাদীসের প্রকাশ ও প্রচার করেন এবং হালাল-হারামের মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেন। তাঁহার পূর্বে সেখানকার লোক পরকাল সম্পর্কে উৎসাহদান, যুদ্ধ ও ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসই বর্ণনা ও আলোচনা করিত।[********************]
এই যুগে মিসরে কয়েকজন বিশিষ্ট মুহাদ্দিস বর্তমান ছিলেন। তন্মধ্যে কয়েকজনের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখানে উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
১। হারমালা (জন্মঃ ১৬২ হিঃ মৃঃ ২৪৩ হিঃ)। হাফেজ যাহবী লিখিয়াছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে ওহাবের নিকট হইতে প্রায় এক লক্ষ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম মুসলিম ও ইবনে মাজাহ তাঁহার ছাত্র। আল্লামা তুজুদ্দীন সুবকী লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বিশিষ্ট হাদীসবিদ ও ইমাম ছিলেন।
২। রবী মুরাদী। মিসরের বড় মুহাদ্দিস ছিলেন (জন্মঃ ১৭৪ হিঃ মৃঃ ২৭০ হিঃ)। হাফেজ যাহবী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি ছিলেন হাদীসের হাফেজ, ইমাম এবং মিসর অঞ্চলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস।
ইমাম আবূ দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ তাঁহার ছাত্র ছিলেন। খলীলী তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তিনি নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী ও সর্বসম্মত মুহাদ্দিস।[********************]
৩। হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে রিমাহ ইবনে মুহাজির। তিনি হাদীসের বড় হাফেজ ছিলেন। ইমাম মুসলিম ও ইবনে মাজাহ ইলমে হাদীসে তাঁহার ছাত্র। ইবনে ইউনুস তাঁহার সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ
******************************************************
নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী ও লব্ধপ্রতিষ্ঠ মুহাদ্দিস।
ইমাম বুখারী তাঁহার নিকট হইতে হাদীস গ্রহণ করিয়াছেন। সহীহ মুসলিমে তাঁহার বর্ণিত ১৬১ টি হাদীস স্থান পাইয়াছে। সুনানে ইবনে মাজাহ কিতাবেও তাঁহার বহু সংখ্যক হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে।[********************]
৪। হাফেজ ইয়াহইয়া ইবনে সারেহ আল-কুরায়শী। তিনি হাদীসের বড় হাফেজ ছিলেন।
এতদ্ব্যতীত মিসর এলাকা ও আফ্রিকার অন্যান্য স্থানেও ব্যাপকভাবে হাদীস শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের কাজ চলে। প্রায় সকল স্থানেই দক্ষ ও ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন মুহাদ্দিসহণ এই মহান ব্রতে নিযুক্ত ছিলেন।