আসান ফেকাহ – ২য় খণ্ড
মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ ইসলাহী
অনুবাদ ও সম্পাদনায়ঃ আব্বাস আলী খান
দীর্ঘদিন থেকে ইলমে ফেকাহের উপর এমন একটি গ্রন্থের প্রয়োজন গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছিল যা হবে সংক্ষিপ্ত অথচ প্রত্যেক মুসলিমের জীবনের সর্ব দিকের প্রয়োজন মেটাবে। আল্লাহর শোকর মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ ইসলাহী কর্তৃক উর্দু ভাষায় রচিত আসান ফেকাহ আমাদের সে প্রয়োজন পূর্ণ করেছে।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক জনাব আব্বাস আলী খান কর্তৃক ভাষান্তর হওয়ায় বইটির অনুবাদ যথার্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ খণ্ডে সাওম, যাকাত ও হজ্জ নামে তিনটি অধ্যায় রয়েছে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে ইলমে ফিকাহের চারটি মত প্রচলিত রয়েছে, তাহলো হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী। এছাড়াও ভিন্ন একটি মতেরও অনুসারী রয়েছে যাঁরা উপরোক্ত চার মতের কারো অনুসরণ করেন না। তাঁরা সরাসরি কুরআন হাদীসের অনুসরণের পক্ষপাতী। তাঁরা সালাফী বা আহলে হাদীস নামে পরিচিত। উপরোক্ত সব মতই সঠিক। সব মতের ভিত্তিই কুরআন ও হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত। সকলেরই প্রচেষ্টা ছিল কুরআন ও হাদীসের সার্বিক অনুসরণ। উপরোল্লিখিত মতপার্থক্যের কারণে একে অন্যের উপর দোষারোপ করা একে অন্যক দীন থেকে খারিজ মনে করে মুসলিম উম্মার ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির প্রচেষ্টা কোনো মুখলেস হকপন্থীর কাজ হতে পারে না।
উপমহাদেশে সব মতের অনুসারীই রয়েছে। কিন্তু হানাফী মতের অনুসারীদের সংখ্যাই অধিক বিধায় মতপার্থক্য এড়িয়ে শুধুমাত্র হানাফী মতের উপর ভিত্তি করেই এ গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে। যাতে করে সাধারণ মুসলমান দ্বিধাহীন চিত্তে ও পূর্ণ নিশ্চিন্ততার সাথে নিজস্ব মাযহাবের অনুসরণ করতে পারে। তবে প্রায় ক্ষেত্রে আহলে হাদীসের অভিমতও সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
বিভিন্ন যুগে ওলামায়ে কেরাম কোনো কোনো মাসয়ালার ব্যাপারে ব্যাপক গবেষণার পর বিভিন্ন মতের সুপারিশ করেছেন এসব মতের যেটিকে সঠিক মনে করা হয়েছে তাও টিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে করে যে চায় প্রশস্ত অন্তকরণে তার উপরও আমল করতে পারে। এছাড়া মাসয়ালা মাসায়েলের সাথে সাথে ইবাদাত ও আমলের ফযীলত ও গুরুত্ব হাদীসের আলোকে বর্ণিত হয়েছে যাতে ইবাদাতের প্রতি অন্তরে জযবা পয়দা হয়।
আমাদের সাফল্য পাঠকদেরই বিচার্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার দীনের পূর্ণ অনুসরণের তাওফীক দিন। আমীন।
গ্রন্থপঞ্জি
আহকামের ফযীলত ও হেকমত সংক্রান্ত আলোচনায় নিম্নলিখিত গ্রন্থাবলীর সাহায্য নেয়া হয়েছেঃ
১. তাফসীরে নাসাফী ২. তাফসীরে খাযেন ৩. তাফসীরে বায়যাবী ৪. তরজমানু কুরআন-মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ৫. তাফহীমুল কুরআন-মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (র) ৬. তরজমা ও তাফসীর-মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানী ৭. সিহাহ সিত্তা ৮. মুয়াত্তা-ইমাম মালেক (র) ৯. রিয়াদুস সালেহীন ১০. আল-আদাবুল মুফরেদ ১১. হিসনে হাসীন ১২. মিশকাত ১৩. এহইয়াও উলুমদ্দীন ১৪. কাশফুল মাহজুব।
মাসায়েল ও আহকামগুলো ইজতেহাদী আলোচনা ছাড়া নিম্নোক্ত গ্রন্থাবলী থেকে উদ্বৃত করা হয়েছে এবং শুধু মাত্র সর্বসম্মত মতে সাধারণ্যে প্রযোজ্য মাসয়ালাগুলোই গ্রহণ করা হয়েছে।
১. হেদায়া ২. আইনুল হেদায়া-শরহে হেদায়া ৩. ফাতহুল কাদীর ৪. কুদুরী ৫. শরহে বেকায়া ৬. নূরুল ইয়াহ ৭. ফিকহুস সুন্নাহ ৮. ইলমুল ফিকাহ ৯. তালীমুল ইসলাম ১০. ইসলামী তালীম ১১. আলাতে জাদীদাহ কে শরয়ী আহকাম-মুফতী মুহাম্মদ শফী (র) ১২. রাসায়েল ও মাসায়েল-মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (র) ১৩. বেহেশতি জেওর ১৪. ফতোয়া-দারুল উলুম দেওবন্দ ইত্যাদি।
যাকাত অধ্যায়
যাকাতের বিবরণ
নামায ও যাকাত প্রকৃতপক্ষে গোটা দ্বীনের প্রতিনিধিত্বকারী দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। দৈহিক ইবাদাতে নামায সমগ্র দ্বীনের প্রতিনিধিত্ব করে।আর আর্থিক ইবাদাতে যাকাত সমগ্র দ্বীনের প্রতিনিধিত্ব করে। দ্বীনের পক্ষ থেকে বান্দার ওপরে যেসব হক আরোপ করা হয় তা দু প্রকারের। আল্লাহর হক এবং বান্দার হক। নামায আল্লাহর হক আদায় করার জন্যে বান্দাকে তৈরী করে এবং যাকাত বান্দাদের হক আদায় করার গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করে। আর এ দু প্রকারের হক ঠিক ঠিক আদায় করার নামই ইসলাম।
যাকাতের মর্যাদা
যাকাত ইসলামের তৃতীয় বৃহৎ রুকন বা স্তম্ভ। দ্বীনের মধ্যে নামাযের পরই যাকাতের স্থান। বস্তুত কুরআন পাকে স্থানে স্থানে ঈমানের পরে নামাযের এবং নামাযের পর যাকাতের উল্লেখ করা হয়েছে। যার থেকে একদিকে এ সত্য সুস্পষ্ট হয় যে, দ্বীনের মধ্যে নামায এবং যাকাতের মর্যাদা কতখানি। অপরদিকে এ ইংগিতও পাওয়া যায় যে, নামাযের পরে মর্যাদা বলতে যাকাতেরই। এ তথ্য নবী পাক (সাঃ) এর হাদীস থেকেও সুস্পষ্ট হয়ঃ
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বলেন, নবী (স) মায়ায বিন জাবাল (রা)কে ইয়ামেন পাঠাবার সময় নিম্নোক্ত অসিয়ত করেন: তুমি সেখানে এমন সব লোকের মধ্যে পৌছতেছ যাদেরকে কেতাব দেয়া হয়েছিল। তুমি সর্ব প্রথম তাদেরকে ঈমানের সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রাসূল। তারা যখন এ সত্য স্বীকার করে নেবে তখন তাদেরকে বলে দেবে যে, আল্লাহ রাত ও দিনের মধ্যে তাদের উপর পাঁচবার নামায ফরয করে দিয়েছেন। তারা এটাও মেনে নিলে তাদেরকে বল যে, আল্লাহ তাদের ওপর সাদকা (যাকাত) ফরয করেছেন। তা নেয়া হবে তাদের সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে এবং বণ্টন করা হয়ে তাদের মধ্যকার অক্ষম ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে। তারা একথাও যখন মেনে নেবে তখন যাকাত আদায় করার সময় বেছে বেছে তাদের ভালো ভালো মাল নেবে না এবং মাজলুমের বদদোয়া থেকে বেচে থাকবে। কারণ মাজলুম ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দার প্রতিবন্ধকতা থাকে না। (বুখারী, মুসলিম)
যাকাতের অর্থ
যাকাতের অর্থ পাক হওয়া, বেড়ে যাওয়া, বিকশিত হওয়া। ফেকার পরিভাষায় যাকাতের অর্থ হচ্ছে একটি আর্থিক ইবাদত। প্রত্যেক সাহেবে নেসাব মুসলমান তার মাল থেকে শরীয়াতের নির্ধারিত পরিমাণ মাল ঐসব লোকদের জন্যে বের করবে শরীয়াত অনুযায়ী যাকাত নেয়ার যারা হকদার।
যাকাত দিলে মাল পাক পবিত্র হয়। তারপর আল্লাহর মালে বরকত দান করেন। তার জন্যে আখিরাতে যাকাত দানকারীকে এতো পরিমাণ প্রতিদান ও পুরস্কার দেন যে, মানুষ তার ধারণাও করতে পারে না। এজন্যে এ ইবাদাতকে যাকাত অর্থাৎ পাককারী এবং বর্ধিত কারী আমল বলা হয়েছে।
যাকাতের মর্মকথা
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যখন মুমিন তার প্রিয় এবং পছন্দই মাল আল্লাহর পথে সন্তুষ্টচিত্তে ব্যয় করে তখন সে মুমিনের দিলে এক নূর এবং উজ্জ্বলতা পয়দা হয়। বস্তুগত আবর্জনা ও দুনিয়ার মহব্বত দূর হয়ে যায়। তারপর মনের মধ্যে একটা সজীবতা পবিত্রতা এবং আল্লাহর মহব্বতের প্রেরণা সৃষ্টি হয়। অতঃপর তা বাড়তেই থাকে। যাকাত দেয়া স্বয়ং আল্লাহর মহব্বতের স্বরূপ এবং এ মহব্বত বাড়াবার কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য উপায়ও।
যাকাতের মর্ম শুধু এই নয় যে, তা দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তের ভরণ পোষণ ও ধনের সঠিক বণ্টনের একটা প্রক্রিয়া পদ্ধতি। বরং তা আল্লাহ তায়ালার ফরজ করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। এছাড়া না মানুষের মন ও রূহের পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করণ সম্ভব আর না সে আল্লাহর মুখলেস ও মুহসেন সৎ বান্দা হতে পারে। যাকাত প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতের জন্য তার শোকর গুজারীর বহিঃপ্রকাশ। অবশ্যি আইনগত যাকাত এই যে, যখন সচ্ছল লোকের মালের এক বছর পার হয়ে যাবে তখন সে তার মাল থেকে একটা নির্দিষ্ট অংশ হকদারের জন্য বের করবে। কিন্তু যাকাতের মর্ম শুধু তাই নয়। বরঞ্চ আল্লাহ তায়ালা এ আমলের দ্বারা মুমিনের দিল থেকে দুনিয়ার সকল প্রকার বস্তুগত মহব্বত বের করে নিয়ে সেখানে তার আপন মহব্বত বসিয়ে দিতে চান। এভাবে তিনি তরবিয়াত দিতে চান যে, মুমিন আল্লাহর পথে তার মাল জাল সকল শক্তি ও যোগ্যতা কুরবান করে রূহানী শান্তি ও আনন্দ লাভ করুক। সব কিছু আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতার আবেগ প্রকাশ করুক যে, আল্লাহ তার ফযল করমে তার পথে জানমাল কুরবান করার তৌফিক তাকে দিয়েছেন। এজন্য শরীয়ত যাকাতের একটি আইনগত সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে বলেছে যে, এতোটুকু ব্যয় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। এতটুকু খরচ না করলেও ঈমানই সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তার সাথে সর্ব শক্তি দিয়ে এ প্রেরণাও দিয়েছে যে, একজন মুমিন যেন এতোটুকু ব্যয় করাকে যথেষ্ট মনে না করে। বরঞ্চ বেশী বেশী আল্লাহর পথে খরচ করার অভ্যাস যেন করে। নবী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর জীবন থেকেও এ সত্যই আমাদের সামনে প্রকটিত হয়।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী পাক (সাঃ) এর দরবারে হাজির হলো। সে নবীর কাছে সওয়াল করলো।তখন নবী (স) এর কাছে এতো সংখ্যক ছাগল ছিল যে, দু পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকা ছাগলে পরিপূর্ণ ছিল। নবী (স) ছওয়ালকারীকে সেই সব ছাগল দান করলেন। সে যখন তার কওমের কাছে ফিরে গেল তখন তাদেরকে বললো- লোকেরা তোমরা সব মুসলমান হয়ে যাও। মুহাম্মদ (সাঃ) লোকদেরকে এত বেশী দান করেন যে, অভাবগ্রস্ত হওয়ার আর কোন ভয় থাকে না। -(কাশফুল মাহযুব)
একবার হযরত হুসাইন (রাঃ) এর দরবারে এক ভিখারি এসে বললো- হে নবীর পৌত্র আমার চারশ দিরহামের প্রয়োজন। হযরত হুসাইন তখনি ঘর থেকে চারশ দিরহাম এনে তাকে দিয়ে দিলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন কাঁদছি এজন্য তার চাইবার আগে কেন তাকে দিলাম না। যার জন্য তাকে ছওয়াল করতে হলো। কেন এ অবস্থা হলো যে, সে ব্যক্তি আমার কাছে এসে ভিক্ষার জন্য হাত বাড়ালো? -(কাশফুল মাহযুব)
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, একবার বাড়িতে একটি ছাগল যবেহ হলো। নবী (স) ঘরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ছাগলের গোশত কিছু আছে কিনা। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুধু একটা রান বাকী আছে (আর সব বণ্টন হয়ে গেছে)। নবী বললেন, না বরঞ্চ ঐ রান ছাড়া আর যা কিছু আর যা কিছু বণ্টন হয়েছে তা আসলে বাকি রয়েছে। (যার প্রতিদান বা মূল্য আখিরাতে আশা করা যায়।(জামে তিরমিযি)
হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (রা) বলেন, নবী (স) তাকে বলেন, আল্লাহর ভরসা করে মুক্ত হস্তে তার পথে দান করতে থাক। গুণে গুণে হিসেব করে দেবার চক্করে পড়ো না যেন। গুণে গুণে আল্লাহর রাস্তায় দান করলে তিনিও গুণে গুণেই নিবেন। সম্পদ গচ্ছিত করে রেখো না। নতুবা আল্লাহও তোমার সাথে এ ব্যবহারই করবেন এবং অগণিত সম্পদ তোমার হাতে আসবে না। অতএব যতোটা হিম্মত কর খোলা হাতে আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন নবী (স) বলেছেন, আল্লাহর তার প্রত্যেক বান্দাকে বলেন, হে বনী আদম। আমার পথে খচর করতে থাক। আমি আমার অফুরন্ত ভাণ্ডার থেকে তোমাদেরকে দিতে থাকবো। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবু যার (রা) বলেন, একবার আমি নবী (স) এর দরবারে হাজির হলাম। তিনি তখন কাবা ঘরের ছায়ায় আরাম করছিলেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, কাবার রবের কসম। ওসব লোক ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন। বললাম, আমার না-বাপ আপনার জন্যে কুরবান হোক, বলুন তারা কে যারা ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন। ইরশাদ হলো, ঐসব লোক যারা পুঁজিপতি ও সচ্ছল। হা, তাদের মধ্যে ঐসব লোক ক্ষতি থেকে নিরাপদ যারা খোলা মনে সামনে পেছনে, ডানে বামে তাদের মাল আল্লাহর পথে খচর করছে। কিন্তু মালদারের মধ্যে এমনে লোকের সংখ্যা খুবই কম।-(বুখারী, মুসলিম)
যাকাত ব্যবস্থার উদ্দেশ্য
যাকাত ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে মুমিনের দিল থেকে দুনিয়ার মহব্বত ও তার মূল থেকে উৎপন্ন যাবতীয় ঝোপ ঝাড় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে আল্লাহর মহব্বত প৫য়দা করতে চায়। এটা তখনই সম্ভব যখন মুমিন বান্দা শুধু যাকাত দিয়ে সন্তুষ্টি থাকে না। বরঞ্চ যাকাতের সে প্রাণশক্তি নিজের মধ্যে গ্রহণ করার চেষ্টা করে এবং মনে করে আমার কাছে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর। সেসব তারই পথে খরচ করেই তার সন্তুষ্টি লাভ করা যেতে পারে। যাকাতের ঐ প্রাণশক্তি ও উদ্দেশ্য আত্মস্থ না করে না কেউ আল্লাহর জন্যে মহব্বত করতে পারে, আর না আল্লাহর হক জেনে নিয়ে তা পূরণ করার জন্য সজাগ ও মুক্ত হস্ত হতে পারে।
যাকাত ব্যবস্থা আসলে গোটা ইসলামী সমাজকে কৃপণতা সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ, মনে কঠিনতা এবং শোষণ করার সূক্ষ্ম প্রবণতা থেকে পাক পবিত্র করে। তার মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, ত্যাগ, দয়া দাক্ষিণ্য, নিষ্ঠা, শুভাকাঙ্ক্ষা, সহযোগিতা, সাহচর্য প্রভৃতি উন্নত ও পবিত্র প্রেরণার সঞ্চার করে এবং সেগুলোকে বিকশিত করে। এ কারণেই যাকাত প্রত্যেক নবীর উম্মতের ওপর ফরয ছিল। অবশ্য তার নেসাব এবং ফেকার হুকুম আহকামের মধ্যে পার্থক্য ছিল। কিন্তু যাকাতের হুকুম প্রত্যেক শরীয়াতের মধ্যেই ছিল।