সোনা চাঁদির নেসাব
চাঁদির নেসাব দুশ দিরহাম যার ওজন ছত্রিশ তোলা সাড়ে পাঁচ মাশা চাঁদি হয়। যার কাছে এ পরিমাণ চাঁদি থাকবে এবং তার ওপর এক বছর অতীত হবে তার যাকাত ওয়াজিব। তার কম ওজনের চাঁদির যাকাত ওয়াজিব নয়। (এ নেসাব মাওলানা আবদুশ শুকুর সাহেবের গবেষণালব্ধ (ইলমুল ফেকাহ দ্রঃ) মাওলানা আবদুল হাই ফিরিঙ্গী মহল্লীর গবেষণাও তাই। অবশ্যি কিছু আলেমের মতে চাঁদির নেসাব সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এটাই অধিক প্রচলিত।)
সোনার নেসাব বিশ তালাই মিসকাল যার ওজন পাঁচ তোলা আড়াই মাশা সোনা। (এ নেসাবও মাওলানা আবদুস শুকুর সাহেবের গবেষণার ফল (ইলমুল ফেকাহ) যা মাওলানা আবদুল হাই ফিরিঙ্গী মহল্লা সমর্থন করেন। অবশ্য সাধারণত এ ধারণা প্রচলিত আছে যে, সোনার নেসাব সাড়ে সাত তোলা। (বেহেশতী জেওর) যার কাছে এতো ওজনে সোনা হবে এবং তারপর এক বছর অতীত হবে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। তার কম ওজনের সোনার জন্যে যাকাত দিতে হবে না।
মুদ্রা ও নোটের যাকাত
সরকারী মুদ্রা, যে কোনো ধাতুর হোক না কেন এবং কাগজের নোট প্রভৃতির যাকাত ওয়াজিব। তাদের মূল্য তাদের ধাতব দ্রব্য অথবা কাগজ হওয়ার কারণে নয় বরং তাদের ক্রয় ক্ষমতার জন্যে আইন গত তাদের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। যার কারণে তা সোনা চাঁদির স্থলাভিষিক্ত। অতএব যার কাছে ৩৬ তোলা সাড়ে পাঁচ মাশা চাঁদির মূল্য মুদ্রা অথবা নোটের আকারে থাকবে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
যে মুদ্রার বাজারে প্রচলন নেই, অথবা খারাপ হয়ে গিয়েছ অথবা সরকার উঠিয়ে নিয়েছে- তার মধ্যে যদি কিছু পরিমাণে সোনা চাঁদি থাকে, তাহলে চাঁদি বা সোনার পরিমাণ অনুযায়ী তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
বিদেশী মুদ্রা যদি নিজ দেশে সহজেই আপন মুদ্রার সাথে বদল করা যায় তাহলে তার হুকুম নগদ মূল্যের মতো। যদি বদল করা না যায় তাহলে তার ওপর যাকাত এ অবস্থায় ওয়াজিব হবে যদি তার মধ্যে নেসাব পরিমাণ সোনা চাঁদি থাকে। সোনা চাঁদি না থাকলে যাকাত ওয়াজিব হবে না।
দিরহামের ওজনের যাচাই
যাকাত প্রসঙ্গে যে দিরহাম উল্লেখ করা হয়েছে তা বলতে এমন দিরহাম যার ওজন ২ মাশা দেড় রতি। নবী (স) এবং হযরত আবু বকর (রা) এর যমানায় দিরহাম বিভিন্ন ওজনের হতো। হযরত ওমর (রা) মনে করলেন দিরহাম বিভিন্ন ওজনের হওয়ার কারণে লোকের ভেতর পারস্পারিক কলহ সৃষ্টি হয় এবং যাকাতের ব্যাপারেও জটিলতা সৃষ্টি হয়। এজন্য তিনি প্রত্যেক ওজনের এক এক দিরহাম নিয়ে একত্র করে গলিয়ে নেন। এবং তিন ভাগ করে এক ভাগের ওজনেই করেন। তাতে চৌদ্দ কীরাত হয় এবং এ ওজনের ওপরে সাহাবায়ে কেরামের ইজমা হয়। তারপর সমস্ত আরবের এ ওজনের প্রচলন হয়। সে মোতাবেক শরীয়াতের দায়িত্ব পালন হতে থাকে। (বাহরুর রায়েক প্রভৃতি)
তাহারাত ও নাজাসাত (পবিত্রতা অপবিত্রতা) অধ্যায়ে যে দিরহামের কথা বলা হয়েছে তা এক মিসকাল অর্থাৎ দীনারের সমান। আল্লামা ইবনে আবেদ শামীম গবেষণা অনুযায়ী একশ যবে এক দীনার, চার যবে এক রতি এবং আট রতিতে এক মাশা হয়। এ হিসেব অনুযায়ী এক দীনারের ওজন তিন মাশা এক রতি হয়। এ গবেষণা অনুযায়ী আসান ফেকাহর প্রথম খণ্ডে আমরা এক দিরহামের ওজন ৩ মাশা ১ রতি লিখেছি।