নতুন চাঁদ দেখার পর রোযা
হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা) বলেন, নবী (স) নতুন চাঁদ দেখলে, বলতেন:
********** আরবী ************
আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, হে আল্লাহ এ চাঁদকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ঈমান ও ইসলামের চাঁদ হিসেবে উদিত কর। যে কাজ তোমার পছন্দনীয় এবং প্রিয় সে কাজের তাওফিক আমাদেরকে দাও। হে চাঁদ! তোমার এবং আমাদের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ। (তিরমিযি ও দারেমী)
রোজার প্রকারভেদ ও তার হুকুম
রোজা ছয় প্রকার-যার বিস্তারিত বিবরণ ও হুকুম জানা জরুরী।
(১) ফরজ, (২) ওয়াজিব, (৩) সুন্নাত, (৪) নফল, (৫) মাকরূহ, (৬) হারাম।
১. ফরজ রোযা- বছরে শুধু রমজানের রোজা (৩০ বা ২৯চাদ অনুযায়ী) মুসলমানদের উপর ফরজ। কুরআন ও হাদীস থেকে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। মুসলিম উম্মত আর গোটা ইতিহাসে বরাবর এর উপর আমল করে এসেছে। যে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার অস্বীকার করবে সে কাফের হবে এবং ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হবে। আর বিনা ওজরে রোজা ত্যাগ করলে ফাসেক ও কঠিন গোনাহগার হবে। রমজানের রোজা কোন কারণে বা অবহেলা করে করা না হলে তার কাযা করাও ফরজ। এ ফরজ কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, যখনই সুযোগ হবে করতে হবে। বরঞ্চ যথা শীঘ্র করা উচিত।
২. ওয়াজিব রোজা– মানতের রোজা, কাফফারার রোজা ওয়াজিব।কোন নির্দিষ্ট দিনে রোজ রাখার মানত করলে সেই দিনে রোজা রাখা জরুরী। দিন নির্দিষ্ট না করলে যে দিন ইচ্ছা করা যয়। বিনা কারণে বিলম্ব করা ঠিক নয়।
৩. সুন্নাত রোজা– যে রোজা নবী (স) স্বয়ং করেছেন এবং করতে বলেছেন তা সুন্নাত। তা রাখার বিরাট সওয়াব রয়েছে। কিন্তু তা সুন্নাতে মুয়ক্কিদাহ নয় এবং না করলে গোনাহ হবে না। সুন্নাত রোজা নিম্নরূপ:
- আশুরার রোজা।অর্থাৎ মুহররমের নয় তারিখ এবং দশ তারিখে দুটি রোজা।
- আরাফার দিনের রোজা। অর্থাৎ যুলহজ্জের নয় তারিখে রোজা।
- আইয়াম বীযের রোজা। অর্থাৎ চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা।
৪. নফল রোজা– ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত বাদে সব রোজা নফল বা মোস্তাহাব। নফল রোজা এমন যে, তা নিয়মিত করলে বিরাট সওয়াব পাওয়া যায়। যেমনঃ
- শাওয়াল মাসের ছটি রোজা।
- সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজা।
- শাবানের ১৫ই তারিখের রোযা।
- যুলহজ্জ মাসের প্রথম আট রোজা।
৫. মাকরূহ রোজা-
- শুধু শনি অথবা রবিবার রোজা রাখা।
- শুধু আশুরার দিন রোজা রাখা।
- স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে রোজ রাখা।
- মাঝে কোন দিন বাদ না দিয়ে ক্রমাগত রোজা রাখা যাকে সাওমে ভেসাল বলে।
৬. হারাম রোজা-বছরে পাঁচদিন রোজা রাখা হারাম।
- ঈদুল ফিতরের দিন রোজা ।
- ঈদুল আযহার নে রোজা।
- আইয়ামে তাশরীকে রোজা রাখা অর্থাৎ ১১ই, ১২ই, ১৩ই যুলহাজ্জ তারিখে রোজা রাখা হারাম।
রোজার শর্তাবলী
রোজার শর্ত দুইপ্রকার:
- রোজা সহীহ হওয়ার শর্ত।
- রোজা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত।
রোজা ওয়াজিব হওয়ার জন্য যেসব জিনিষের প্রয়োজন তাকে শারায়াতে সিহহাত বলে এবং হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তাকে শারায়াতে অযুব বলে।
রোজা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
১. ইসলাম।কাফেরের উপর রোজা ওয়াজিব নয়।
২. বালেগ হওয়া। নাবালেগের উপর রোজা ওয়াজিব নয়।
অবশ্যি অভ্যাস সৃষ্টি করার জন্য নাবালেগ ছেলেমেয়েদের উপর রোজা রাখতে বলা উচিৎ। যেমন নামাজ পড়বার অভ্যাস করবার তাগিদ হাদীসে করা হয়েছে। তেমনি রোজা রাখবার জন্যও প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। যারা ক্ষুধা তৃষ্ণা সহ্য করতে পারে তাদেরকেই শুধু রোজা রাখতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ভালো নয়।
৩. রমজানের রোজা ফরজ হওয়া সম্বন্ধে জানা থাকা।
৪. মাযুর বা অক্ষম না হওয়া। অর্থাৎ এমন কোন ওজর না থাকা যাতে রোজা না থাকার অনুমতি রয়েছে, সফর, বার্ধক্য, রোগ, জিহাদ, ইত্যাদি।
রোজা সহীহ হওয়ার শর্তাবলী
১. ইসলাম। কাফেরের রোজা সহীহ নয়।
২. মহিলাদের হায়েজ নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া।
৩. নিয়ত করা। অর্থাৎ মনে মনে রোজা রাখার ইরাদা করা। রোজা রাখার ইরাদা ছাড়া কেউ সারাদিন যদি ঐসব জিনিস থেকে বিরত থাকে যার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তাহলে তার রোজা হবে না।