মুলতাযেম ও তার দোয়া
মুলতাযেম বায়তুল্লাহর ও দেয়ালের সে অংশকে বলে যা কাবার দরজা এবং হিজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এ প্রায় ছফুটের অংশ এবং দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এর সাথে দেহ বুক ও মুখ লাগিয়ে বিনয় ও নম্রতার সাথে ও কাতর কণ্ঠে দোয়া করা হজ্জের একটি মসনুন আমল । তাওয়াফ শেষ করার পর মুলতাযেমের সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ হওয়া ও দোয়া করা বিশেষ করে এমন এক অনুভূতি ও ভাবাবেগ সৃষ্টি করে যে, এটা বায়তুল্লাহ থেকে বিদায় হওয়ার এক বেদনা দায়ক মুহূর্ত।
হযরত আমর ইবনে শোয়াইব বলেন, আমার পিতা শুয়াইব বর্ণনা করেছেন, আমি আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আমর আল আস (রা) এর সাথে তাওয়াফ করার সময় কিছু লোক কে বায়তুল্লাহর সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ দেখলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমেরকে বললাম, আমাকে একটু ঔ জায়গায় নিয়ে চলুন। লোকদের সাথে আমরাও বায়তুল্লাহর সাথে আলিঙ্গন করি। তিনি বললেন আউযুবিল্লাহে মিনশ শায়তানির রাজিম। তারপর যখন তিনি তাওয়াফ শেষ করলেন তখন হিজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মধ্যবর্তী বায়তুল্লাহের ঐ অংশের সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে বললেন, আল্লাহর কসম এটা ঐ স্থান যার সাথে নবী (স) কে আলিংগনাবস্থায় দেখেছি। (বায়হাকী)
আবু দাউদের বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ বিন আমের (রা) হিজরে আসওয়াদ এবং বাবে কাবার মাঝে দাড়িয়ে গেলেন এবং আপন বক্ষ মুখ মণ্ডল ও দুহাত প্রসারিত করে কাবার দেওয়ালে রাখলেন এবং বললেন নবী (স) এমন করতে দেখেছি। (আবু দাউদ)
মুলতাযেমের দোয়া সম্পর্কে নবী (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিপদাপন্ন হয়ে এখানে দোয়া চাইবে সে অবশ্যই নিরাপদ হবে। (আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ)
মুলতাযেমের সাথে দেহ আবিষ্ট করে প্রথমে নিম্নের দোয়া পড়বে। তারপর দ্বীন দুনিয়ার জায়েজ মনস্কামনা পূরণের দোয়া করবে:
*******আরবী*********
আয় আল্লাহ! প্রশংসার হকদার তুমিই, এমন প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা যার দ্বারা তোমার নিয়ামতের কিছু হক আদায় হতে পারে। আর এ সব নিয়ামতের উপর কিছু এহসান কিছু এনামের কিছু বিনিময় হতে পারে। আমি তোমার প্রশংসা করছি তোমার ঐসব গুণাবলীর সাথে যা আমার জানা আছে আর যা আমার জানা নেই। আমি তোমার প্রশংসা করছি তোমার ঐসব নিয়ামতের সাথে যা আমার জানা আছে আর যা আমার জানা নেই। সকল অবস্থায় আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। আয় আল্লাহ! দরুদ ও সালাম মুহাম্মদ (স) এর উপরে এবং মুহাম্মদের বংশধরের উপর। আয় আল্লাহ! মরদূদ শয়তান থেকে তোমার পানাহ চাই এবং প্রত্যেক অনিষ্ট থেকে আমাকে আশ্রয় দাও।তুমি যা কিছু আমাকে দিয়েছ তার উপর সন্তুষ্ট থাকতে দাও। আমার জন্য তাতে বরকত দাও। আয় আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার সম্মানিত মেহমানদের মধ্যে শামিল কর। আর তুমি আমাকে সোজা পথে চলবার তাওফীক দাও, রাব্বুল আলামীন, যতক্ষণ না আমি তোমার সাথে মিলিত হই।
দোয়া কবুলের স্থানসমূহ
হজ্জের সময় প্রত্যেক আমল করতে গিয়ে যিকর তসবীতে মশগুল থাকা এবং প্রত্যেক স্থানে বেশী করে দোয়া করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে অধিক পরিমাণ দোয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। হযরত হাসান বসরী যখন মক্কা থেকে বসরায় ফিরে যাচ্ছিলেন তখন মক্কাবাসীদের নিকট একখানা পত্র লেখেন। তাতে তিনি মক্কায় অবস্থানের গুরুত্ব ও ফযিলত বয়ান করেন এবং বিশেষ করে বলেন যে, নিম্নের এগারটি স্থানে বিশেষভাবে মুমিনের দোয়া কবুল হয়ঃ
১. মুলতাযেমের সাথে দেহ মন আবিষ্ট করে দোয়া করা। নবী (স) বলেন, মুলতাযেম এমন এক স্থান যেখানে দোয়া কবুল হয়। এখানে বান্দাহ যে দোয়াই করে তা কবুল হয়।
২. মিযআবের নিচে।
৩. পাক কাবার ভিতরে।
৪. যমযমের নিকটে।
৫. সাফা-মারওয়ায়।
৬. সাফা-মারওয়ায় যেখানে দৌড়ে চলতে হয়।
৭. মাকামে ইবরাহীমের নিকটে।
৮. আরাফাতের ময়দানে।
৯. মুযদালফায়ে।
১০. মিনায়।
১১. জুমরাতের পাশে।