রোজার ফরয
রোজার মধ্যে সুবহে সাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকা ফরজ।
১. কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
২. কিছু পান করা থেকে বিরত থাকা।
৩. যৌন বাসনা পূর্ণ করা থেকে বিরত থাকা।
যৌনবাসনা পূরণের মধ্যে ঐসব যৌন সম্ভোগ শামিল যার দ্বারা বীর্যপাত হয়, তা স্ত্রী সংগমের দ্বারা হোক বা যে কোন মানুষ, পশু প্রভৃতির সাথে যৌন ক্রিয়ার দ্বারা হোক। অথবা হস্তমৈথুনের দ্বারা হোক। মোটকথা এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্যি আপন স্ত্রীকে দেখা আদর করা, জড়িয়ে ধরা অথবা চুমু থেকে বিরত থাকা ফরজ নয়। কারণ তাতে বীর্যপাত হয় না।
রোযার সুন্নাত ও মোস্তাহাব
১. সিহরীর ব্যবস্থা করা সুন্নাত, কয়েকটি খেজুর হোক বা এক চুমুক পানি হোক।
২. সিহরীর সময় খাওয়া মোস্তাহাব।সুবহে সাদিক হতে যখন সামান্য বাকি।
৩. রোজার নিয়ত রাতেই করে নেওয়া মোস্তাহাব।
৪. ইফতার তাড়াতাড়ি করা মোস্তাহাব। অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার পর অথবা বিলম্ব না করা।
৫. খুরমা খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা মোস্তাহাব।
৬. গীবত, চোগলখুরী, মিথ্যা বল, রাগ এবং বাড়াবাড়ি না করা সুন্নাত। এ কাজ অবশ্যি অন্য সময় করাও ঠিক নয়। কিন্তু রোজার সময় তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা বেশী করে করা উচিৎ।
কি কি কারণে রোজা নষ্ট হয়
রোযা অবস্থায় তিনটি বিষয় থেকে দূরে থাকা ফরয, যথাঃ
(১) কিছু না খাওয়া (২) কিছু পান না করা এবং (৩) যৌনবাসনা পূর্ণ না করা। এসব থেকে বিরত থাকা ফরয।
অতএব উপরোক্ত তিনটি ফরযের খেলাপ কাজ করলেই রোযা নষ্ট হয়। যেসব জিনিস রোযা নষ্ট করে তা আবার দু প্রকার। এক – যার দ্বারা শুধু কাযা ওয়াজিব হয়। দুই-যার দ্বারা কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়।
কাফফারা ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে কিছু নীতিগত কথা
১. কোনো কিছু ইচ্ছা করে পেটে প্রবেশ করালে এবং তা উপকারী হওয়ার ধারণাও যদি থাকে, তা খাদ্য হোক, ঔষধ হোক অথবা এমন কাজ হোক যার আস্বাদ সংগম ক্রিয়ার মতো, তাহলে এসব অবস্থায় কাযা এবং কাফফারা দুই ওয়াজিব হয়।
২. কোনো কিছু যদি আপনা আপনি পেটের মধ্যে চলে যায়, তার উপকারী হওয়ার ধারনাও না থাকে, অথবা এমন কোনো কাজ করা হলো যার আস্বাদ সংগম ক্রিয়ার মতো নয়, তাহলে শুধু মাত্রা কাযা ওয়াজিব হবে।
৩. শুধু রমযানের রোযা নষ্ট হলেই তার কাফফারা ওয়াজিব হয়, রমযান ছাড়া অন্য রোযা নষ্ট হলে তার কাফফারা ওয়াজিব হবে না, তা ভুলক্রমে নষ্ট হোক অথবা ইচ্ছা করে নষ্ট করা হোক।
৪. রমযানের কাযা রোযা নষ্ট হলে তার কাফফারা ওয়াজিব হবে না, শুধু রমাযান মাসে রোযা নষ্ট হলে কাফফারা ওয়াজিব হবে।
৫. যাদের মধ্যে রোযা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া যায় না, তাদের রোযা নষ্ট হলেও কাফফারা ওয়াজিব হবে না। যেমন, মুসাফিরের রোযা, হায়েয নেসাফ ওয়ালী মেয়েদের রোযা। যদিও মুসাফির এবং হায়েয নেফাস ওয়ালী মেয়েলোক রোযার নিয়ত সফর শুরু করার আগে এবং হায়েয নিফাস হওয়ার আগে করে থাকে।
৬. যে কোনো কাজ যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে যায়, যেমন ভুল করে কেউ কিছু খেয়ে নিলো, অথবা যৌন ক্রিয়া করলো, অথবা কুল্লি করতে হঠাৎ পানি গলার ভেতর চরে গেল, অথবা কেউ জবরদস্তি করে যৌন ক্রিয়া করালো তাহলে এসব অবস্থায় কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
৭. যৌনক্রিয়ায় ক্রিয়াকারী এবং যার ওপর কারা হলো এ উভয়ের জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া শর্ত নয়। উভয়ের মধ্যে যে জ্ঞানসম্পন্ন এবং স্বেচ্ছায় এ কাজ করবে তার কাফফারা ওয়াজিব হবে। নারী জ্ঞানসম্পন্ন হলে কাফফারা তাকে দিতে হবে পুরুষকে নয়। আবার পুরুষ জ্ঞানসম্পন্ন হলে তাকে কাফফারা দিতে হবে, মাথা খারাপ পাগল মেয়ে মানুষের ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
৮. কোনো মেয়েলোক নাবালক ছেলে দ্বারা যৌন ক্রিয়া করে নিলে অথবা কোনো পাগলের দ্বারা, তার ওপর কাযা ও কাফফারা দুটিই ওয়াজিব হবে।
৯. রমযানে রোযার নিয়ত ব্যতিরেকে কেউ খানা-পিনা করলে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না, শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। কাফফারা তখনই ওয়াজিব যদি রোযার নিয়ত করার পর তা নষ্ট করে।
১০. কোনো সন্দেহের কারণে কেউ রোযা নষ্ট করলে কাফফারা দিতে হবে না।