রোযার ফযিলত
নবী (স) বলেন, প্রত্যেক নেক আমলে প্রতিদান দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু আল্লাহ এরশাদ হচ্ছে, রোযার ব্যাপারটাই অন্য রকম। তাতো আমার জন্য নির্দিষ্ট। আমি স্বয়ং তার প্রতিদান দেব। বান্দা আমার জন্যে তার যৌনবাসনা ও খানাপিনা বন্ধ রাখে। রোযাদারের জন্যে দুটি আনন্দ, একটা হচ্ছে ইফতারের সময় যখন সে এ আবেগ উল্লাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহর নিয়ামত উপভোগ করতে থাকে যে, আল্লাহ তাকে একটা ফরয আদায় করার তাওফিক দান করেছেন।
দ্বিতীয় আনন্দ আপন পরওয়ারদেগারের সাথে মিলিত হওয়ায় যখন সে আল্লাহর দরবারে সাক্ষাতের অনুমতি লাভ করবে এবং দীদার লাভ করে চক্ষু শীতল করবে।
রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধি থেকেও উৎকৃষ্টতর। রোযা গোনাহ থেকে আত্মরক্ষার ঢাল স্বরূপ। তোমাদের মধ্যে কেউ রোযা রাখলে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা ও হৈ হাংগামা থেকে দূরে থাকে। যদি কেউ গালিগালাজ করতে থাকে অথবা ঝগড়া করতে আসে, তাহলে তার মনে করা উচিত যে, সে রোযা আছে। (বুখারী, মুসলিম)
নবী (স) আরও বলেন, যে ঈমানের অনুভূতি এবং আখিরাতের সওয়াবের আশায় রোযা রাখে তা পূর্বের সব গোনাহ (সগীরা) মাপ করে দেয়া হয়। (বুখারী, মুসলিম)
রুইয়েতে হেলাল বা চাঁদ দেখার নির্দেশাবলী
১. শাবানের উনত্রিশ তারিখে রমযানের চাঁদ দেখার চেষ্টা করা মুসলমানদের ওয়াজিবে কেফায়া। (সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব যে, রমযানের চাঁদ দেখার ব্যবস্থা তারা করবে। গোটা সমাজ যদি এর গুরুত্ব অনুভব না করে এবং বিষয়টিকে অবহেলা করে তাহলে সকলেই গোনাহগার হবে) পঞ্জিকা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে রোযা রাখা এবং চাঁদ দেখা থেকে বেপরোয়া হওয়া কিছুতেই জায়েয নয়। এমনকি যারা গণনা শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ এবং নেক ও পরহেজগার, তাদেরও নিজের হিসেবের ওপর আমল করা জায়েয নয়। নবী (স) বলেন, চাঁদ দেখা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা খতম কর। যদি ২৯ শাবান চাঁদ দেখা না যায় তাহলে শাবানের ত্রিশ দিন পূর্ণ কর। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
২. কোনো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চাঁদ দেখা মেনে নেয়া এবং তদনুযায়ী রোযা রাখা জায়েয নয়। যেমন একটা প্রবাদ আছে যেদিনটি রজব মাসের ৪ঠা সে দিনটি রমযানের পয়লা এবং বারবার এটা পরীক্ষা করা হয়েছে।
৩. রজবের উনত্রিশ তারিখে চাঁদ দেখার চেষ্টা ও ব্যবস্থা করা মোস্তাহাব। কারণ রমযানের পয়লা তারিখ জানার জন্যে শাবানের তারিখগুলো জানা জরুরী। যেমন মনে করুন উনত্রিশ রজব চাঁদ উদয় হলো। কিন্তু লোকে তা দেখার কোনো ব্যবস্থা করেনি। তারপর ১লা শাবানকে ৩০শে রজব মনে করে হিসেব করতে থাকলো। এভাবে ৩০শে শাবান এসে গেল। কিন্তু আকাশে মেঘ অথবা ধুলাবালির কারণে চাঁদ দেখা গেল না। যেহেতু তা শাবানের ২৯ তারিখ মনে করা হচ্ছিল। এ জন্যে ১লা রমযানকে লোক ৩০শে শাবান মনে করে বসলো এর ফলে অবহেলার কারণে রমযানের একটা রোযা নষ্ট হয়ে গেল।
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, নবী (স) শাবান মাসের দিনগুলো ও তারিখগুলো যেমন চিন্তা ভাবনা ও হিসেবে করে মনে রাখতেন, অন্য কোনো মাসের তারিখ এতো যত্ন সহকারে মনে রাখতেন না, তারপর তিনি রমযানের চাঁদ দেখে রোযা রাখতেন। (আবু দাউদ)
৪. যে ব্যক্তি স্বচক্ষে রমযানের চাঁদ দেখবে, তার কর্তব্য হচ্ছে বস্তির সকল লোক অথবা মুসলমানদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়া তা সে পুরুষ হোক বা নারী হোক।
৫. পশ্চিম আকাশ চাঁদ ওঠার স্থান যদি পরিষ্কার হয়, তাহলে এমন অবস্থায় শুধুমাত্র দুজন দীনদার লোকের সাক্ষ্যে রমযানের চাঁদ ওঠা প্রমাণিত হবে না আর না ঈদের চাঁদ প্রমাণিত হবে। এ অবস্থায় অন্তত এতজন লোকের সাক্ষ্য দরকার যাতে করে তাদের কথায় চাঁদ ওঠা সম্পর্কে নিশ্চয়তা লাভ করা যায়।
৬. চাঁদ ওঠার স্থান পরিষ্কার না হলে রমযানের নতুন চাদের প্রমাণের জন্যে শুধু একজনের সাক্ষ্যই যথেষ্ট তা সে পুরুষ হোক বা নারী। তবে নিম্নে শর্তে:
ক) সাক্ষ্যদাতা বালেগ, জ্ঞান সম্পন্ন এবং দীনদার মুসলমান হতে হবে।
খ) তাকে বলতে হবে যে, সে নিজ চক্ষে চাঁদ দেখেছে।
৭. আকাশ পরিষ্কার হলে ঈদের নতুন চাঁদের জন্যে একজনের সাক্ষ্য যথেষ্ট নয় সে যেমন ধরনের বিশ্বস্ত লোক হোক না কেন। ঈদের চাঁদের জন্যে প্রয়োজন দুজন দ্বীনদার মুত্তাকী পুরুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা অথবা একজন দ্বীনদার পুরুষ এবং দুজন দ্বীনদার নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা। যদি চারজন স্ত্রীলোক সাক্ষ্য দেয় যে তারা চাঁদ দেখেছে তথাপি তার দ্বারা ঈদের চাঁদ প্রমাণিত হবে না।
৮. যেখানে কোনো মুসলমান কাযী অথবা শাসক নেই, সেখানকার মুসলমানদের উচিত নিজেরাই চাঁদ দেখার ব্যবস্থা করবে, তার প্রচার করবে এবং তদনুযায়ী কাজ করবে।
৯. সারা শহরে একথা ছড়িয়ে পড়লো যে, চাঁদ দেখা গেছে, কিন্তু বহু অনুসন্ধানের পরেও এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া গেল না যে একথা স্বীকার করবে, সে নিজে চাঁদ দেখেছে। এ অবস্থায় চাঁদ ওঠা প্রমাণিত হবে না।
১০. যদি এমন ব্যক্তি রমযানের চাঁদ দেখেছে বলে বলা হচ্ছে যার সাক্ষ্য শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। এবং সে ছাড়া আর কেউ চাঁদ দেখেনি, তাহলে তার কথায় শহর বা বস্তির লোক রোযা রাখবে না। কিন্তু সে অবশ্যই রোযা রাখবে তার রোযা রাখা ওয়াজিব। তারপর তার ত্রিশ রোযা হয়ে গেলে এবং ঈদের চাঁদ দেখা গেল না, তখন সে ৩১ রোযা করবে এবং বস্তির লোকের সাথে ঈদ করবে।
১১. কোনো কারণে কোনো জায়গায় চাঁদ দেখা গেল না এবং অন্য স্থান থেকে চাঁদ দেখার খবর এল। যদি সে খবর শরীয়াতের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে তার দ্বারা রমযানের চাঁদও প্রমাণিত হবে। এবং ঈদের চাঁদও। মুসলমান দায়িত্বশীলদের প্রয়োজন হবে যে, তারা এসব খবর যাচাই করে দেখবে এবং শরীয়াত মুতাবেক যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে শহরে তার পাবলিসিটি করার এন্তেযাম করবে।
১২. দুজন নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত লোকের সাক্ষ্য দানে চাঁদ দেখা যদি প্রমাণিত হয় এবং সে অনুযায়ী লোক রোযা রাখে, কিন্তু ৩০ রোযা পুরো হওয়ার পর ঈদের চাঁদ দেখা গেল না, তাহলে ৩১শে দিনে ঈদ করবে। সেদিন রোযা জায়েয হবে না।