উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ
একটু স্বস্তি লাভ করার এবং সফরের ক্লান্তি দূর হওয়ার পর রসূল সা. উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ শুরু করলেন। প্রথমে যে কাজটা শুরু করা হলো, তা ছিল মসজিদ নির্মাণ। দু’জন এতীম শিশুর পতিত জমি খরিদ করা হলো এবং হযরত আবু আইয়ূবই তার মূল্য দিয়ে দেন। এই জমিতে মসজিদে নববীর ভিত্তি স্থাপিত হলো। মসজিদ শুধু নামাযের স্থান হিসাবেই গুরুত্ব বহন করতো না, বরং ইসলামী রাষ্ট্র ও সভ্যতার কেন্দ্র ও উৎস হিসেবে গড়ে তলা হয়েছিল। একাধারে সরকারের দরবার, পরামর্শ কক্ষ, সরকারী অতিথি ভবন, গণপাঠাগার ও জাতীয় সম্মেলন ভবন হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছিল মসজিদে নববীকে। এই নির্মাণ কাজের বেলায়ও কোবার মত সাড়া জাগলো। এমন কোন মুসলমান থাকতে পারে কি, যে এই কাজে মনে প্রাণে অংশ গ্রহণ করেনি? স্বয়ং রসূল সা. পাথর ও কাঁদা তুলে আনছিলেন। এ দৃশ্য দেখে জনৈক সাহাবী আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠলেনঃ “আল্লাহর নবী যদি এ কাজে এমনভাবে আত্মনিয়োগ করেন, আর আমরা বসে বসে দেখতে থাকি, তাহলে আমাদের সমস্ত সৎকাজ বাতিল হয়ে যাবে।”
কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে কোন বাজে কথার বালাই ছিলনা। বরং রসূল সা. সহ সবাই একযোগে আওয়াজ তুলছিলেনঃ
********
“আখেরাতের সুখই প্রকৃত সুখ। তা না হলে জীবন নিরর্থক। হে আল্লাহ, আপনি আনসার ও মোহাজেরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।” (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড)
এই প্রেরণা ও দোয়াই ছিল মসজিদে নববী নির্মাণের আসল উপকরণ। মসজিদের সাথে সংলগ্ন একটা হুজরাও রসূল সা. এর জন্য তৈরী হয়ে গেল লতাপাতা ও মাটি দ্বারা। তিনি এই হুজরাতেই থাকতে আরম্ভ করলেন।
মদিনায় রসূল সা. এর আগমনের সাথে সাথে আপনা আপনি দাওয়াত সম্প্রসারিত হতে লাগলো। এই সাত মাসে ইসলামী আন্দোলন প্রত্যেক গৃহ ও প্রত্যেক গোত্র থেকে নিবেদিত প্রাণ সাথী সংগ্রহ করে ফেলেছিল। কেবল মাত্র আওস গোত্রের খাতমা, ওয়াকিফ, ওয়ায়েল ও উমাইয়ার পরিবারে শেরকের অন্ধকার অবশিষ্ট ছিল। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড)
দাওয়াতী কাজের বিস্তার ঘটানো ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গঠনমূলক কাজ। রসূল সা. ব্যক্তিগত দাওয়াত তো দিতেনই। কিন্তু যে ভাষণ দিয়ে তিনি সামষ্টিক দাওয়াতের সূচনা করেন তা ছিল নিম্নরূপঃ
“হে জনমণ্ডলী, নিজেদের জন্য সময় মত কিছু উপার্জন করে নাও। জেনে রাখ, তোমাদের সকলেরই একদিন মরতে হবে। প্রত্যেকেই নিজের লোকজনকে এমনভাবে রেখে যাবে যে, তাদের কোন অভিযোগ থাকবেনা। তারপর তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাকে এমনভাবে সম্বোধন করা হবে যে, মাঝখানে কোন দোভাষী থাকবেনা। জিজ্ঞাসা করা হবেঃ তোমার কাছে কি আমার রসূল পৌঁছেনি! এবং রসূল কি তোমার কাছে আমার বাণী পৌঁছায়নি? আমি কি তোমাকে সম্পদ ও অনুগ্রহ দেইনি? তাহলে তুমি নিজের জন্য কি সঞ্চয় করেছ? এরপর সে ডানে বামে তাকাবে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাবেনা। এরপর সামনের দিকে দৃষ্টি দেবে। কিন্তু জাহান্নাম ছাড়া কিছুই চোখে পড়বেনা। অতএব যার পক্ষে সম্ভব, সে যেন একটা খেজুরের বিনিময়ে হলেও নিজেকে দোজখের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। যে ব্যক্তি এতটুকুও পারেনা, সে যেন একটু ভালো কথা বলে হলেও আত্মরক্ষা করে। কেননা সৎকাজের প্রতিদান দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। তোমাদের ওপর নিরাপত্তা এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত নাযিল হোক।”
(সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড)
আর একটা সামষ্টিক ভাষণ নিম্নরূপ
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমি তাঁরই প্রশংসা করি। তাঁরই কাছে সাহায্য চাই। আমরা সবাই আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে এবং আমাদের কর্মের কূপ্রভাব থেকে আল্লাহর পানাহ চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়াত করেন তাঁকে কেউ বিপথগামী করতে পারেনা। আর তিনি যাকে হেদায়াত থেকে বঞ্চিত করেন, তার কোন পথ প্রদর্শক থাকেনা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক ও শরীক বিহীন আল্লাহ ছাড়া এবাদত ও আনুগত্য লাভের যোগ্য আর কেউ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কিতাবই সবোর্ত্তম বাণী। আল্লাহ যার অন্তরে কোরআনকে প্রিয় বানিয়েছেন, যাকে কুফরির পর ইসলামে প্রবেশ করিয়েছেন এবং যে ব্যক্তি অন্য সকল মানবরচিত বাণীর চেয়ে কোরআনকে বেশী পছন্দ করে, সে সাফল্যমণ্ডিত হবে। এ হচ্ছে সবোর্ত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী বাণী। আল্লাহ যা ভালোবাসেন তোমরা শুধু তাই ভালোবাসবে এবং আল্লাহকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসবে। আল্লাহর কাজে শৈথিল্য দেখিওনা এবং এর জন্য তোমাদের মন যেন কঠোর না হয়। যেহেতু আল্লাহ নিজের সৃষ্টি থেকে উত্তম জিনিসই মনোনীত করেন, তাই তিনি উত্তম কাজ, উত্তম বান্দা ও পবিত্রতম বাণী চিহ্নিত করেছেন। তিনি মানুষকে যা কিছু দিয়েছেন, তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম। কাজেই আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর। তার সাথে কাউকে শরীক করোনা। তার গযব থেকে এমনভাবে আত্মরক্ষা কর, যেমনভাবে করা উচিত। আল্লাহর সামনে সেই সব ভালো কথাবার্তাকে কার্যে পরিণত কর, যা তোমার মুখ দিয়ে বলে থাক। আল্লাহর রহমত দ্বারা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোল। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভংগ করলে অসন্তুষ্ট হন। তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।” (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড)
বিভিন্ন রেওয়ায়াত থেকে তাঁর বক্তৃতার যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা খুবই সংক্ষিপ্ত। রসূল সা. এর ভাষণ সাধারণত সংক্ষিপ্ত হতো। কিন্তু এর ভেতর কত সুদূর প্রসারী বক্তব্য সংযোজিত হয়েছে লক্ষ্য করুন। এতে বলতে গেলে যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। এতে ইসলামের দাওয়াতও রয়েছে, কোরআনের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, হালাল ও হারাম বাছবিচার করার তাগিদও দেয়া হয়েছে এবং আদর্শ ভিত্তিক ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
এই দুটো ভাষণ দেখলে বুঝা যায় যে, সামষ্টিক দাওয়াত কিভাবে দেয়া হতো। একদিকে মৌলিক আদর্শ দিকে আহ্বান জানানো হতো। অপর দিকে আদর্শেরই আলোকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সমাজকে পথনির্দেশিকা দেয়া হতো।
ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন
তৃতীয় পদক্ষেপ এবং সম্ভব রাজনৈতিক দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় কাজ ছিল এই যে, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মদীনার ইহুদী, মোশরেক ও মুসলমানদের মধ্যে একটা ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজনৈতিক ধরনের সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটা লিখিত চুক্তিনামা তৈরী করা হয়, যা একটা লিখিত সংবিধানের মত ছিল। একে যথার্থভাবেই পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান বলে অভিহিত করা হয়। আমি এখানে এ সংবিধানের ধারাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাইনা। তবে তার কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশের সার সংক্ষেপ তুলে ধরবো। এই লিখিত সাংবিধানিক চুক্তি দ্বারা রসূল সা. যা কিছু অর্জন করেন তা নিম্নরূপঃ
– মদিনার নবগঠিত সমাজে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইন মূল ভিত্তির গুরুত্ব অর্জন করে।
– রাজনৈতিক, আইনগত ও বিচারবিভাগীয় চূড়ান্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মুহাম্মাদ সা. এর হস্তগত হয়।
– এই সাংবিধানিক চুক্তির মাধ্যমে বিধিসম্মতভাবে ও আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী রাষ্ট্র গঠিত ও ইসলামী জীবন বিধান বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। [যে ব্যক্তি কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়, সে সব সময় সর্ব প্রথম নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের কথা চিন্তা করে। আরবের ইসলামী সংগঠন বাহ্যিক উপায় উপকরণ ও সহায় সম্পদের দিক দিয়ে কত রিক্ত হস্ত দেখুন। তা ছাড়া মদিনার অজানা অচেনা পরিবেশে এসে কতিপয় বাস্তু ভিটে হারা ব্যক্তির সমস্যা জর্জরিত অবস্থা দেখুন। তারপর লক্ষ্য করুন যে, কিভাবে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হল কত ত্বরিত গতিতে। কিভাবে কয়েক মাসের মধ্যে তার সংবিধানও চালু হয়ে গেল। ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে পরষ্পর বিরোধী জনতাকে এত শীঘ্র একটা সংগঠনের উপর ঐক্যবধ্য করা সত্যিই ইতিহাসের এক মহা বিস্ময়কর ঘটনা।]
সে যুগের পরিস্থিতির জটিলতার প্রতি লক্ষ্য করলে অনুমান করা যায় যে, এটা এক অসাধারণ কৃতিত্ব ছিল। এর পেছনে এক অতুলনীয় রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আলাপ-আলোচনার দক্ষতা সক্রিয় দেখতে পাওয়া যায়। এই সাংবিধানিক চুক্তি ও অন্যান্য চুক্তি ও লেনদেন থেকে আমরা জানতে পারি যে, রসূল সা. নিছক একজন সুফী দরবেশই ছিলেন না, বরং সামষ্টিক বিষয়গুলোকে সামাল দেয়া ও সূচারুভাবে সম্পন্ন করার বিশেষজ্ঞীয় দক্ষতা ও বিচক্ষণতার তিনি অধিকারী ছিলেন এবং এ সব দায়িত্ব সম্পাদনের পূর্ণ যোগ্যতা তিনি রাখতেন।
ভ্রাতৃত্ব ব্যবস্থা
মদিনার সমাজের তখন একটা বড় রকমের সমস্যা ছিল মোহাজেরদের পূনর্বাসন। লোকেরা একের পর এক ঘরবাড়ী ছেড়ে চলে আসছিল। মাত্র কয়েক হাজার অধিবাসী সম্বলিত ও এই মাঝারি পর্যায়ের জনপদে তাদেরকে ঠাঁই দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। বস্তুত এটা এমন একটা সমস্যা, যা ইতিহাসে যখনই দেখা দিকনা কেন, বিব্রতকর হয়ে দেখা দিয়ে থাকে। মদীনার সমাজ ও তার রাষ্ট্রপ্রধান যে দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে এ সমস্যার সমাধান করেছিলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোন নজীর নেই। কোন অর্ডিন্যান্স জারী করা হয়নি, কোন আইন চাপিয়ে দেয়া হয়নি, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ সরকারীভাবে বরাদ্দ করতে হয়নি, শরণার্থীদের সংখ্যা নির্ধারণ করে কোন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি এবং কোন বলপ্রয়োগ করা হয়নি। কেবল একটি নৈতিক আবেদন দ্বারা এত বড় জটিল সমস্যার সমাধান মাত্র কয়েক দিনে করে ফেলা হয়। বিশ্বনবী সা. আকীদা, আদর্শ ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে সত্যিকার অর্থে একটা নতুন ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে দেন এবং এক একজন আনসারীর সাথে এক একজন মোহাজেরের ভ্রাতৃত্বসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রত্যেক আনসারী নিজের সহায় সম্পদ ঘরবাড়ী, বাগবাগিচা ও ক্ষেতখামার অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিজ নিজ আদর্শিক সাথীকে দিয়ে দিচ্ছিলেন। কেউ কেউতো নিজের একাধিক স্ত্রীর মধ্য থেকে একজনকে তালাক দিয়ে তার দ্বীনী ভাই এর সাথে বিয়ে দিতে পর্যন্ত প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। অপরদিকে মোহাজেররা নিজেদেরকে এতদূর আত্মসম্ভ্রমী প্রমান করেন যে, তারা বলতেন, আমাদেরকে ক্ষেতখামার বা বাজার দেখিয়ে দাও, আমরা ব্যবসায় করে বা শ্রম খেটে জীবিকা উপার্জন করতে পারবো।
অবিবাহিত, বিশেষত উঠতি বয়সের যেসব মোহাজের সংসারী হওয়ার পরিবর্তে নিজেদেরকে ইসলামী শিক্ষা অর্জনে নিয়োজিত করতে চাইছিলেন, তাদের বাসস্থান ছিল ‘সুফফা’ অর্থাৎ মসজিদে নববীর একটা চত্বর। বিনির্মাণ কাজের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের রূপ নেয়। সুফফাবাসী সাহাবীদের অভিভাবক ছিল ইসলামী সমাজ। রসূল সা. স্বয়ং তাদের প্রয়োজন পূরনে মনোযোগী ও সক্রিয় থাকতেন।
আবার সেই দ্বন্দ্ব সংঘাত
এখানে আমি ইসলামের ইতিহাস ও নবী জীবনের ইতিহাসের (সীরাত) সমস্ত ধারাবাহিক ঘটনার উল্লেখ করতে ইচ্ছুক নই। সংক্ষেপে শুধু দেখাতে চেয়েছি যে, ইসলামী আন্দোলনের প্রজন্ম মক্কা থেকে মদিনায় এসে কিভাবে নবতর প্রজন্মের জন্ম দিতে থাকে। পরিবেশ কেমন ছিল এবং একটা কার্যকর শক্তির আগমনে সেই পরিবেশে কী ধরণের নতুন তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। একটা ঘুমন্ত সমাজকে সত্যের সৈনিকরা কিভাবে এগিয়ে এসে জাগিয়ে দেয় এবং তার চরিত্র গঠনে এক কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। ইতিবাচক ভূমিকা সামনে আসার সাথে সাথেই কোন না কোন নেতিবাচক ভূমিকারও আবির্ভাব ঘটা ঐতিহাসিক নিয়ম অনুসারে অনিবার্য ছিল। গঠনমূলক তৎপরতার পাশাপাশি একটা নাশকতামূলক শক্তির সক্রিয় হয়ে উঠাটা ছিল প্রাকৃতিক বিধির অবধারিত লিখন। সত্য যখন ময়দানে সক্রিয় হয় তখন বাতিলের ময়দানেও তৎপরতা শুরু হয়ে যাওয়া অনিবার্য। নায়কের সাথে সাথে খলনায়কের আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। মদীনায় যে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল, তা দেখে শয়তান নিদারুণ অস্থিরতা ও অস্বস্তি বোধ করছিল। সে নিজের কিছু একনিষ্ঠ কর্মীকে মাঠে নামাতে চাইছিল। কিন্তু খলনায়ক সে পেয়েও গেল এবং তাদেরকে সে মঞ্চে এনে হাজির করলো। ইসলামী আন্দোলন মক্কায় পড়েছিল হযরত ইবরাহীমের তথাকথিত অনুসারীদের কবলে, আর মদিনায় সম্মুখীন হলো হযরত মূসার পবিত্র আলখেল্লা গায়ে দেয়া কুচক্রীদের। ইসলামী আন্দোলনের সাথে পবিত্র কা’বার মুতাওয়াল্লীরা যে আচরণ করেছিল, বাইতুল মাকদাসের অনুসারীরাও সেই একই আচরণ করতে আরম্ভ করলো।