জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ সা.

অন্তর্গতঃ uncategorized, সীরাত ও ইতিহাস
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. আগমনের উদ্দেশ্য আহ্বান এবং ঐতিহাসিক অবস্থান
    1. আগমনের উদ্দেশ্য আহ্বান এবং ঐতিহাসিক অবস্থান
    2. মানব জাতির ত্রাণকর্তা
    3. আবির্ভাবের স্থান কাল মানবীয় উপাদান
    4. বিপ্লবী কালেমা
    5. সমাজ সংস্কারে রসূল সা. এর লক্ষ্য
    6. একটি দীন একটি আন্দোলন
    7. জীবনের অবিভাজ্য পুর্নাঙ্গতা
    8. বিপ্লবের প্রাণশক্তি
    9. নতুন মানুষ
    10. বিশ্বনবীর অসাধারণ আত্মত্যাগ
    11. আমাদের অবস্থান কোথায়?
    12. সীরাত অধ্যয়নের দৃষ্টিভংগি
    13. পাশ্চাত্য জগতের উদ্দেশ্যে
    14. এই গ্রন্থটি প্রসংগে দুটি কথা
  2. এক নজরে ব্যক্তিত্ব
    1. এক ঝলক
    2. একটা সামগ্রিক ছবি
    3. পোশাক
    4. বেশভূষা ও সাজ সজ্জা
    5. চলাফেরা
    6. কথা বার্তা
    7. বক্তৃতা
    8. সাধারণ সামাজিক যোগাযোগ
    9. ব্যক্তিগত জীবন
    10. পানাহার
    11. ওঠাবসা ও শয়ন
    12. মানবীয় প্রয়োজন
    13. প্রবাস
    14. আবেগ ও অনুভূতি
    15. রসিকতা
    16. বিনোদন
    17. কয়েকটি চমৎকার অভিরুচি
    18. স্বভাব চরিত্র
  3. মক্কীযুগে মানবতার বন্ধু সা. : তীব্র বিরোধীতার মুখোমুখী
    1. এই সেই যুবক
    2. কোরায়েশদের বিরোধিতার কারণ
    3. ঘোর অন্ধকারে কয়েকটা আগুনের ফুলকি
    4. দাওয়াতের প্রথম যুগঃ গোপন প্রচার
    5. প্রকাশ্য দাওয়াত
    6. উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি
    7. অপপ্রচার
    8. কূটতর্ক
    9. যুক্তি
    10. সন্ত্রাস ও গুন্ডামী
    11. ইসলামী আন্দোলনকে সহায়হীন করার অপচেষ্টা
    12. নেতিবাচক ফ্রন্ট
    13. বিরূপ প্রতিক্রিয়া
    14. সাহিত্য ও গান বাজনার ফ্রন্ট
    15. আপোষের চেষ্টা
    16. সহিংসতার চরম রূপ
    17. আবিসিনিয়ায় হিজরত
    18. হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহন
    19. আর এক ধাপ অগ্রগতি
    20. হযরত হামযার ইসলাম গ্রহণ
    21. বয়কট ও আটকাবস্থা
    22. দূঃখের বছর
    23. তায়েফে ইসলামের দাওয়াত
    24. শুভ দিনে পূর্বাভাস
    25. বিদায় হে মক্কা!
  4. মাদানী অধ্যায়ে মানবতার বন্ধু সা. : ইতিহাসের পট পরিবর্তন
    1. মদিনার ভিন্নতর পরিবেশ
    2. ইসলামী আন্দোলন মদিনায়
    3. প্রথম আকাবার বায়য়াত
    4. দুই নেতার ইসলাম গ্রহণ
    5. আকাবার দ্বিতীয় বায়য়াত
    6. মদিনায় আন্দোলনের নতুন জোয়ার
    7. আন্দোলনের নতুন কেন্দ্র
    8. মদিনাঃ প্রতীক্ষার মূহুর্ত
    9. উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ
    10. আর একটা সামষ্টিক ভাষণ নিম্নরূপ
    11. ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন
    12. ভ্রাতৃত্ব ব্যবস্থা
    13. আবার সেই দ্বন্দ্ব সংঘাত
    14. ইহুদীদের ঐতিহাসিক অবস্থান ও ভূমিকা
    15. অসহিষ্ণু আচরণ
    16. কুতর্ক ও বাজে প্রশ্নের বাণ
    17. কেবলা পরিবর্তন
    18. অসভ্যপনা ও ইতরামি
    19. হাস্যকর দাবী
    20. ইহুদীদের শাইলকী কর্মকান্ড
    21. ইহুদীদের গড়া পঞ্চম বাহিনী
    22. অপপ্রচারমূলক তৎপরতা
    23. পদলোভের অভিযোগ
    24. সর্বসম্মত ধর্মীয়প্রতীক সমূহের অবমাননার অভিযোগ
    25. ধর্মের আড়ালে স্বার্থোদ্ধারের অপবাদ
    26. আরো একটা নোংরা অপপ্রচার
    27. বিভ্রান্তি সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ
    28. ইসলামী সংগঠনের অভ্যন্তরে নৈতিক ব্যবস্থাজনিত জটিলতা
    29. হযরত আয়েশার নিজস্ব প্রতিবেদন
    30. ওহির সাফাই
    31. আইন সক্রিয় হয়ে উঠলো
    32. শাপে বর
    33. উস্কানীমূলক তৎপরতা
    34. বিচার ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
    35. রসূলের সা. পরিবারে কলহ বাধানোর অপচেষ্টা
    36. হত্যার ষড়যন্ত্র
    37. খয়বর বিজয়
    38. সর্বনাশা বিশ্বাসঘাতকতা
    39. কোরায়েশদের ঘৃণ্য প্রতিশোধমূলক তৎপরতা
  5. মানবতার বন্ধুর সামরিক তৎপরতাঃ নীতি-কৌশল ঘটনাবলী-শিক্ষা
    1. যুদ্ধ ও জেহাদের ইসলামী দৃষ্টিভংগি
    2. কোরআনের সমর দর্শন
    3. ইসলামী যুদ্ধ-বিগ্রহের ধরণ
    4. মদিনার সামরিক কর্মকাণ্ডের ধরণ
    5. রসূল সা. এর সমর কৌশল
    6. একটা ব্যাপক ভুল বুঝাবুঝি
    7. কোরায়েশের আগ্রাসী মানসিকতা
    8. মদিনার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
    9. রসূল সা. এর প্রতিরক্ষা কৌশল
    10. টহল দানের ব্যবস্থা ও তার উদ্দেশ্য
    11. দুটো বাস্তব কারণ
    12. কোরায়েশদের তিনটে প্রয়োজন
    13. বাণিজ্য কাফেলা ছিল যুদ্ধের অগ্রবর্তী বাহিনী
    14. বদরের যুদ্ধের ফলাফল
    15. দুটো শক্তির পার্থক্য
    16. বদর যুদ্ধের পর
    17. দ্বিতীয় বৃহত্তম যুদ্ধ ওহুদ
    18. ওহুদ যুদ্ধের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক
    19. ওহদের পর
    20. তৃতীয় বড় যুদ্ধ – খন্দক
    21. খন্দক যুদ্ধের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
    22. খন্দক যুদ্ধ থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত
    23. চতুর্থ বৃহৎ অভিযান-মক্কা বিজয়
    24. মক্কা বিজয়ের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
    25. মক্কা বিজয়ে পূর্ণতা প্রাপ্তি
    26. মক্কা বিজয়ের পর
    27. দুটো আর্ন্তজাতিক যুদ্ধ
    28. মূল্যায়ন
  6. আলো ছড়িয়ে পড়লো সবখানে
    1. ইসলামী আন্দোলন অগ্রযাত্রার প্রাণশক্তি
    2. যুক্তি প্রমাণের শক্তি
    3. হিতাকাংখী সুলভ আবেদনের শক্তি
    4. মক্কার মোশরেকদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ
    5. আহলে কিতাবের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ
    6. খৃস্টানদের উদ্দেশ্যে ভাষণ
    7. মোনাফেকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ
    8. সমালোচনার শক্তি
    9. মুসলমানদের নৈতিক শক্তি
    10. চুক্তি ও সমঝোতার শক্তি
    11. হোদাইবিয়ার সন্ধি
    12. ওমরাতুল কাযা
    13. জনমতের ওপর জেহাদের প্রভাব
    14. সরকার স্বয়ং বিপ্লব শিক্ষা দিত
    15. জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি
    16. রাষ্ট্রনায়কের সুদূর প্রসারী সম্পর্ক
    17. জনতার স্বতস্ফূর্ত অগ্রযাত্রা
    18. আন্তর্জাতিক দাওয়াতের সূচনা
    19. সর্বশেষ বিক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া
    20. ইসলামী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সম্মেলন
    21. ইসলামী আন্দোলনের আন্তর্জাতিক মেনিফেষ্টা
    22. রসূল সা. এর তীরোধানের পর
    23. কাজ এখনো অসম্পূর্ণ
  7. পরিশিষ্ট-১
  8. পরিশিষ্ট-২
  9. পরিশিষ্ট-৩

মক্কা বিজয়ের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা

১. মক্কা বিজয় ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ বিজয়ের পর ইসলামের প্রতিষ্ঠা লাভের সমস্ত বাধা অপসারিত হয়। আরবের প্রাচীন জাহেলী নেতৃত্বের কেন্দ্রস্থল ছিল মক্কা। এই কেন্দ্রের পতন না ঘটা পর্যন্ত ইসলামী বিপ্লবের সামনে অগ্রসর হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। জাহেলী নেতৃত্বের পতাকা যখন অবনমিত হলো, তখন আর জাহেলী সমাজ ব্যবস্থার টিকে থাকার সাধ্য থাকলোনা এবং জাহেলিয়াতের চার পাশে জনগণের সমবেত সম্ভাবনাও রইলনা।

মক্কা বিজয় জনসাধারণের বহু জটিলতা দূর করে দেয়। অনেকগুলো গোত্র শুধু এ কারণেও ইসলামের দিকে অগ্রসর হতে পারেনি যে, তাদের সাথে কোরায়েশদের হয় মৈত্রীর সম্পর্ক ছিল, নচেত অর্থনৈতিকভাবে তারা কোরায়েশদের নিকট মুখাপেক্ষী বা ঋণগ্রস্থ ছিল। কেউবা তাদের সামাজিক প্রাধান্য ও ধর্মীয় পৌরহিত্যের দাপটের কাছে অসহায় ছিল। কোরায়েশের এই দাপট যখন শেষ হয়ে গেল, তখন তাদের পথ কে আটকায়। তাদের পথ আবিষ্কার হয়ে গেল।

জাহেলী সমাজের কোন কোন স্তরে এই ধারণা বিস্তার করেছিল যে, মক্কায় শুধু সে-ই বিজয়ী থাকতে পারে, যাকে আল্লাহ সাহায্য করেন। যে সত্যের পথে প্রতিষ্ঠিত নয়, সে আল্লাহর সাহায্যও পায়না এবং মক্কায় তার জয়ডংকাও বাজেনা। এ ধরনের ধারণা বিশ্বাস বিশেষত আবরাহার আক্রমণের পর আরো জোরদার হয়ে ওঠে। লোকেরা ভাবতে থাকে যে, কোরায়েশ আল্লাহর প্রিয় জনগোষ্ঠী। লোকেরা রসূল সা. কোরায়েশের বিরোধে হস্তক্ষেপ না করে বলতোঃ

‘‘মুহাম্মদ সা. কে ও তার গোত্রকে নিজ নিজ অবস্থায় থাকতে দাও। সে যদি তাদের ওপর বিজয়ী হয়, তবে বুঝতে হবে, সে যথার্থই নবী। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই মক্কা বিজয়ের পর জনতার স্রোত বাধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ইসলামের দিকে ধাবিত হতে থাকে। শুধু মক্কাবাসী নয় বরং আশপাশের এলাকার গোত্রগুলো থেকেও দলে দলে লোকেরা ছুটে এসে সানন্দে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। ইসলামী আন্দোলনের সেবক ও মুহাম্মদের সা. অনুসারী হওয়াকে তার পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে করতে থাকে।

ইসলামের দাওয়াত ও শিক্ষা বিস্তারের জন্য এরপর ময়দান একেবারেই পরিষ্কার ও বাধামুক্ত হয়ে গেল। তখন প্রত্যেক মুসলমান ইসলামের প্রচার কার্যে আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হলো। বাধা দেওয়ার কেউ রইলনা।

২- রসূল সা. যখন মক্কা অভিযানে বের হন, তখন প্রথম থেকেই এমন কৌশল আবলম্বন করেন, যাতে আদৌ কোন রক্তপাত না হতে পারে। তিনি নিজের উদ্দেশ্যও কারো কাছে ব্যক্ত না করে যাত্রা অব্যাহত রাখেন। কোরায়েশকে কোন প্রস্তুতি গ্রহণ এবং কোন দিক থেকে কোন সাহায্য গ্রহণের আদৌ কোনো সুযোগ না দিয়ে সহসাই মক্কার উপকণ্ঠে গিয়ে উপনীত হন। এভাবে যে বিরোধী শক্তি আগেই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, এই আকস্মিকতায় তারা একেবারেই হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আবু সুফিয়ানের মানসিক পরাজয় তো আরো আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। উপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করে সবার আগে তাকেই ভীতসন্ত্রস্থ করে দেয়া হয়। আবু সুফিয়ানের নতি স্বীকার করার কারণে আর কারো পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করার কোন অবকাশ থাকলোনা। রসূল সা. যে একজন সেনাপতিকে শুধু একটু উস্কানীমূলক ও উত্তেজনাপূর্ণ শ্লোগান দেয়ার কারণে সেনাপতিত্ব থেকে বরখাস্ত করেছিলেন, তাও এই উদ্দেশ্যেই করেছিলেন। তিনি মক্কাবাসীকে নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে, আজকের দিন কা’বার মর্যাদা পুনর্বহালের দিন, তথা পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তার দিন।

৩. রসূল সা.-এর নিজের ওপর এবং নিজের প্রিয় সাথী ও আপনজনদের ওপর দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে নিকৃষ্টতম নির্যাতন পরিচালনাকারী, ঠাট্টাবিদ্রুপকারী, নোংরা বর্জ্য নিক্ষেপকারী, পথে কাটা বিস্তারকারী, আটককারী, হত্যার ষড়যন্ত্রকারী, দেশ থেকে বিতাড়ণকারী এবং বিনা উস্কানীতে আক্রমণকারী ইসলামের কট্টর শত্রুদের সমস্ত বর্বরোচিত অপরাধকে সম্পূর্ণরূপে ভূলে গেলেন এবং সাধরণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। কঠোরতার পরিবর্তে নমনীয় ও কোমল আচরণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যায় অপেক্ষা রাখেনা। তিনি কোন দুনিয়াবী বিজেতা ছিলেন না যে, শক্তি ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কিছু লোককে বশীভূত করা এবং ডান্ডার জোরে হুমকি ধমকির মাধ্যমে তাদেরকে নিজের হুকুমের গোলাম বানানোই যথেষ্ট হবে। তিনি ছিলেন একটা দাওয়াত, একটা মিশন, একটা নৈতিক আন্দোলন, এবং একটা পবিত্র ও নির্মল শাসন ব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার পতাকাবাহী। তিনি যদি লোককে নিছক ধরে বেঁধে জবরদস্তিমূলকভাবে নিজের অনুগত বানাতেন, তাহলে তাতে তাঁর ঐ উদ্দেশ্য সফল হতোনা। তাঁর প্রয়োজন ছিল এমন একদল মানুষের, যাদের মনমগর্জে পরিবর্তন এসেছে। আর মনমগজের পরিবর্তন একমাত্র ক্ষমা, দয়া, অনুগ্রহ ও কোমলতার মাধ্যমেই সম্ভব। তাঁর উদ্দেশ্য কেবল তখনই সফল হতো পারতো, যখন মক্কাবাসী তাদের অতীতের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে রাজী হতো। একটা সত্য আদর্শ ও গঠনমূলক বিপ্লব বাস্তবায়ন যাঁর লক্ষ ও মূলমন্ত্র, তাঁর জন্য অন্য কোন বিজেতাসুলভ নীতি মানানসই হতোনা।

আরো একটা বাস্তবতাকেও রসূল সা. গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। সেটি হলো, কোরায়েশ অতীতে যা-ই করুক না কেন, আরব জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তারাই সবচেয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও উপযুক্ত জনগোষ্ঠী। সারা আরবে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গোত্রগুলোর মধ্যে তারা একটু অটুট সেতুবন্ধন স্বরূপ ছিল যে, তাদেরকে যদি বিনষ্ট করে দেয়া হয়, তবে সহজে এর কোন বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাবেনা। নীতিগতভাবে ইসলামের এ নীতি অকাট্য সত্য ও একে মেনে নেয়া অপরিহার্য যে, ঈমান ও সততায যে যাত অগ্রগামী, নেতৃত্বের জন্যও সে ততই যোগ্য। কিন্তু ঈমানদারী ও সততার সাথে সাথে নেতৃত্বের মানসিক ও বাস্তব যোগ্যতাও তো সুস্পষ্ট যৌক্তিক প্রয়োজন। এ কাজের জন্য প্রভাব প্রতিপত্তি দরকার, শাসনকার্য পরিচালনা ও সামরিক অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা আবশ্যক, কৌশল জ্ঞান, কল্যাণ চেতনা ও প্রজ্ঞা থাকা আবশ্যক, ভাষা ও অন্যান্য ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর দক্ষতা চাই এবং মানুষের সাধারণ মনস্তত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা চাই। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিরা কেবল তখনই সফলতা লাভ করতে পারে, যখন তাদের শ্রেষ্ঠত্ব আগে থেকে জনগণের কাছে স্বীকৃত এবং তাদের শেকড় থাকে জনমতের অনেক গভীরে। কোন নেতৃত্ব শূ্ণ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কোরায়েশের নেতৃত্বের যোগ্যতা জাহেলিয়াতের অনুসারী ছিল বলেই ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যাখ্যাত ছিল। কিন্তু ঐ নেতৃত্ব ইসলামের অনুসারী হয়ে ইমানদারী ও সততার গুণাবলীর অর্জন করলেই তা মহামূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়ে যায়। রসূল সা. বিজয়োত্তরকালে কোরায়েশদের সাথে আচরণের যে নীতি নির্ধারণ করেন, তা এই উদ্দেশ্যের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করেন যেন ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী আন্দোলন কোরায়েশদের কাছ থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতা ও প্রশাসন লাভ করতে পারে। বলপ্রয়োগ ও অবমাননাকর আচরণ দ্বারা যদি তাদেরকে দমন ও দলন করা হতো, তবে তাদের দ্বারা এই প্রয়োজনটা পূরণ হতোনা।

৪. বিজয়ীর বেশে মক্কা প্রবেশকালে রসূল সা. খোদাভীতির যে দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, কোন দুনিয়াদার রাষ্ট্রনায়কের কাছ থেকে তা প্রত্যাশা করা যায় না। তিনি বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেন, অথচ ঢাকঢোল বা তবলা দামামা বাজেনি, গর্ব ও অহংকারের প্রদর্শনী হয়নি, বড় বড় কৃতিত্বের দাবী নিয়ে গলাবাজী করা হয়নি, বরঞ্চ জনতা ঠিক তার বিপরীত দৃশ্য দেখেছে। ‘সিজদারত অবস্থায়’ প্রবেশের আদেশ পালন করে আল্লাহর দরবারে মাথা নত করা হয়েছে। আল্লাহর প্রশংসাসহ গান গাওয়া হয়েছে। মুখে যদি কোন শ্লোগান উচ্চারিত হয়ে থাকে, তবে তাও ছিল আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের শ্লোগান। আযান, নামায ও দোয়া মক্কার পরিবেশে আলোর বন্যা বইয়ে দিয়েছে। নিজের কোন দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধার করা হয়নি, বরং মোহাজেরদের যে সমস্ত সম্পত্তি কোরায়েশরা জোর পূর্বক ও জুলুম নির্যাতনের ম্যধ্যমে হস্তগত করেছিল, তাও কোরায়েশদের অধিকারেই থাকতে দেয়া হলো। দুঃখের বিষয় যে, রসূল সা. কিছু কিছু বিবেকহীন সমালোচক রসূল সা. এর ইসলামী আন্দোলনের খোদাভীতিমূলক দিকগুলোকে নিছক স্বার্থপরতামূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি কেউ কেউ একে খোলাখুলি লোক দেখানো ভড়ং বলেও প্রমাণ করতে চেয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ!) তারা তখন ভেবে দেখেনি যে, যারা লোক দেখানো ভড়ং করে, তারা সর্বাত্মক সাফল্য লাভ করলে মুখোস খুলে যায় এবং তাদের আসর রূপটা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আল্লাহ না করুন, এট যদি কোন রাজনৈতিক ভেলকিবাজী হতো, তাহলে মক্কা বিজয় এমন সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল যে, তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়তো এবং ‘আল্লাহ বড়’ আল্লাহ বড়’ বলে যারা গলা ফাটাচ্ছিল, সহসাই দেখা যেত যে তারা নিজেদের বড়াই জাহির করা শুরু করে দিয়েছে। অথচ এখানে অবস্থা ছিল এ রকম যে, রসূল সা. তার বিজয়োত্তর প্রথম ভাষণে সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব আল্লাহর বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন ও বিজয়ী করেছেন।

৫. মক্কা বিজয়ের সময় রসূল সা. শুধু রাজনৈতিক অপরাধই ক্ষমা করেননি, বরং কোন কোন ব্যক্তির এমন সব ফৌজদারী অপরাধও মাফ করে দেন, যার জন্য তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া জরুরী ছিল। এ সব দৃষ্টান্তের আলোকে আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে আধুনিক যুগের পরিস্থিতিকে ভেবে দেখতে হবে যে, ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে শাস্তি কমানো বা মাফ করার ক্ষমতা কতখানি দেয়া যেতে পারে।

মক্কা বিজয়ে পূর্ণতা প্রাপ্তি

মক্কার আশে পাশে কোরায়েশদের পুরানো সমর্থক ও সহযোগী এবং প্রায় একই ধরনের প্রভাব প্রতিপত্তি ও দাপটের অধিকারী যে গোত্রগুলো বাস করতো, মক্কা বিজয়ের সাথে সাথে সেই দুর্ধর্ষ গোত্রগুলোকেও যদি শায়েস্তা না করা হতো, তবে মক্কা বিজয়ের সঠিক অর্থে বিজয় বলেই গণ্য হতোনা, আর হলেও তা টেকসই হতোনা। মক্কার জাহেলী নেতৃত্বের নিজস্ব ক্ষমতা ও প্রতাপ যেটুকু ছিল, সেটুকুকে জোরদার করার ব্যাপারে বনু হাওয়াযেন, তায়েফবাসী ও বনু সাকীফেরও প্রচুর অবদান ছিল। এরা বলতে গেলে একই গাছের ভিন্ন ভিন্ন ডালপালা ছিল। সাধারণ আরবদের মোকাবিলায় মক্কার পার্শ্ববর্তী এই সব গোত্রও নেতৃত্বের মর্যাদা ভোগ করতো। অবশ্য কোরায়েশদের সামনে তারা ছিল দ্বিতীয় স্তরের নেতৃত্বের সারিতে। মক্কার সাথে তাদের মিত্রতাপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্কও ছিল যথেষ্ট প্রাচীন, আর অর্থনৈতিক সম্পর্কও ছিল নিবীড় ও গভীর। সামরিক প্রয়োজনেও তারা পরস্পরের সাথী ছিল, আবার সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও তারা উঁচু স্তরের লোক ছিল। মক্কা বিজয় যে বিনা রক্তপাতে সম্পন্ন হয়েছিল, সেটা নেহাৎ অলৌকিকভাবেই হয়েছিল। নচেত বনু হাওযাযেন, বুন সাকীফ ও তায়েফবাসী সম্মিলিতভাবে কোরায়েশকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসার কথা ছিল। তা যদি সত্যিই ঘটতো, তবে মক্কার ইতিহাসে চরম রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হতো। কিন্তু রসূল সা. এর পরিকল্পনা এ নিপুণ ও দক্ষতাপূর্ণ ছিল যে, মক্কাবাসী আশপাশ থেকে কোন সাহায্যই পায়নি। একেবারেই একাকী ও অতর্কিতভাবে মুসলিম বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে পড়েছে।

হাওয়াযেন গোত্রের নেতারা আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছিল যে, কী ঘটতে যাচ্ছে। যে সংঘাতের সূচনা বদরে হয়েছে, তার শেষ পরিণতি যে এখানো বাকী রয়েছে, তা তারা বুঝতে পেরেছিল। কোরায়েশের পক্ষ থেকে হোদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তি ভংগ, রসূল সা. এর পক্ষ থেকে প্রেরিত নতুন শর্তাবলী, প্রস্তাব রক্ষাকারী দূতকে ফেরত পাঠানো এবং এরপর আবু সুফিয়ানের চুক্তি নবায়নের চেষ্টায় ব্যর্থতা -এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা শুভ লক্ষণ ছিলনা। এ জন্য হাওয়াযেন গোত্রের নেতারা সারা বছর শক্তি সংগ্রহের কাজে ব্যাপৃত ছিল। তারা বিভিন্ন গোত্রের সাথে যোগাযোগ করে ইসলামের বিরুদ্ধে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলেছিল। কিন্তু যখন সময় এল, তখন রাসূল সা. এর রহস্যপূর্ণ কার্যকলাপকে তারা ভুল বুঝলো। বনু হাওয়াযেন ভাবলো, রসূল সা. তাদেরকে লক্ষ্য করেই যাবতীয় যুদ্ধ প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। তাই তারা নিজেদের অঞ্চলেই সেনা সমাবেশ ঘটালো এবং মহা ধুমধামে প্রস্তুতি চালাতে লাগলো।

কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ তাদের অনুমানের বিপরীত অন্য রকমের রূপ ধারণ করলো। তারা তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নিজ জায়গায় বসে রইল। আর মক্কার পতনের ন্যায় বিরাট ঐতিহাসিক ঘটনা অত্যন্ত সহজে সংঘটিত হয়ে গেল। মক্কা বিজয়ে অন্যান্য গোত্রের প্রতিক্রিয়া হলো এই যে, তাদের পক্ষ থেকে লোকেরা দলে দলে রসূল সা. এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগলো। কিন্তু বনু হাওয়াযেন ও বনু সাকীফের প্রতিক্রিয়া হলো অন্য রকম। কেননা একেতো তাদের বিপুল জনবল, অর্থনৈতিক শক্তি ও সামারিক দক্ষতায় তারা সংগঠিত ছিল। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত শত্রুতামূলক আচরণ করতে করতে তাদের এমন হঠকারি মেজাজ গড়ে উঠেছিল যে, তারা নিজেদের কর্মসূচীকে চূড়ান্ত রূপ দিতে বাধ্য ছিল। তারা তাদের শেষ লড়াই লড়বার জন্য তায়েফ ও মক্কার মধ্যবর্তী আওতাস বা হোনায়েনে সৈন্য সমবেত করলো। শুধুমাত্র বনু কাব ও বনু কিলাব পুরোপুরি নিরপেক্ষ ভূমিকা অবলম্বন করলো।

রসূল সা. বনু হাওয়ানের প্রস্তুতির কথা শুনে আব্দুল্লাহ বিন আবি হাদরুকে গোয়েন্দা হিসেবে পাঠালেন এবং সঠিক তথ্য জেনে নিলেন। এবার যুদ্ধ প্রস্তুতির পালা। সামরিক প্রয়োজন পূরণের জন্য রসূল সা. আবদুল্লাহ বিন রবীয়ার কাছ থেকে তিন হাজার দিরহাম এবং মক্কার বিশিষ্ট নেতা সাফওয়ান বিন উমাইয়ার কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিশেষত ১০০ বর্ম ধার নিলেন। এ থেকে অনুমিত হয় যে, রসূল সা. কোন অসাধারণ সামারিক প্রস্তুতি নিয়ে বের হননি। আগে থেকেই কোন রক্তপাতের চিন্তা তার ছিলনা। কেবল ঘটনাস্থলেই নতুনভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়েছিল। কেমন নজীরবিহীন ঘটনা! যে বিজেতা কোরায়েশকে সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্তু করেছেন, তিনি তাদের কাছ থেকে অর্থ ও অস্ত্র জবরদস্তিমূলকভাবেও আদায় করতে পারতেন। এত উঁচু পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েও তিনি নৈতিকতার প্রতি এত লক্ষ্য রাখতেন যে, যা কিছুই নিলেন ধার হিসেবেই নিলেন। ইসলামী আন্দোলনের বৈশিষ্টই হলো তার এই নৈতিক চেতনা।

৮ম হিজররি শাওয়াল মাসে ১২ হাজার মুসলিম সৈন্য মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করলো। এই মুসলিম সৈন্যদের মনে এবার এরূপ মনোভাব জাগ্রত হলো যে, আমরা এখন মক্কা বিজয়ী সেনাবাহিনী। আমাদের জনবল বিপুল। অস্ত্রবলও আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী। এ ধরনের আত্মম্ভরী মনোভাব যে মানুষকে দুর্বল করে দিতে সক্ষম, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এটা ছিল তাদের মানবীয় দুর্বলতা। তাদের খেয়াল ছিল না যে, তারা সেই বিশ্ব সম্রাটের সৈনিক, যিনি এক তিল পরিমাণ অহংকার সহ্য করেন না। অহংকার ও আত্মম্ভরিতা মানুষের ও আল্লাহর মাঝে লোহার প্রাচীর স্বরূপ। এর কারণে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। অথচ আল্লাহর সাহায্য যে কোন ইসলামী লড়াই এর প্রাণ হয়ে থাকে। কিছুক্ষণের জন্য এই আত্মম্ভরিকতার এমন কঠোর শাস্তি দেয়া হলো যে, তা ঐতিহাসিক স্মৃতিতে পরিণত হলো। কোরআন এ ঘটনাকে স্থায়ী শিক্ষার উৎসে পরিণত করেছে।

ঘটনা ছিল এই যে, মুসলিম সেনাবাহিনীর মধ্যে এবার মক্কা থেকে একদল নতুন ধরনের সৈনিক যোগ দিয়েছিল। খালেদ বিন ওলীদের নেতৃত্বে পরিচালিত অগ্রবর্তী বাহিনীতেও নও মুসলিম তরুণরা ভর্তি হয়েছিল। তারা আবেগে এতই উদ্দীপ্ত ছিল যে, প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্রেও সজ্জিত হয়ে যায় নি। তাছাড়া মক্কার দু’হাজার ‘‘তোলাকাবা মুক্ত লোক’’ও ছিল, যারা ইসলামী সরকারের অনুগত ছিল বটে, তবে এখনো সঠিকভাবে তাদের ইসলামী চরিত্র গড়ে উঠেনি। ওদিকে প্রতিপক্ষের লোকেরা ছিল যুদ্ধবিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শী, বিশেষত তীর নিক্ষেপ তাদের সমকক্ষ সারা আরবে কেউ ছিল না। তারা রণাঙ্গনের সবচেয়ে ভালো জায়গা আগেই দখলে নিয়েছিল এবং প্রত্যেক পাহাড়ে, পাহাড়ের গর্তে, গিরিপথে তীরন্দাজ বাহিনী গোপনে বসিয়ে রেখেছিল।

হামলার শুরুতেই যখন সকল দিক থেকে তীর নিক্ষেপ হতে লাগলো, তখন অগ্রবর্তী বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে গেল। সেই সাথে মুসলিম সৈন্যরা ঘাবড়ে গিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। এক সময় এমন অবস্থা হলো যে, রসূল সা. এর পাশে কেউ ছিল না, তিনি সম্পূর্ণ একাকী দাঁড়িয়েছিলেন। এটা রসূল সা. সামরিক জীবনের কয়েকটি বিরল ও নাজুক মুহূর্তের অন্যতম, যখন তার সংকল্পের দৃঢ়তা, বীরত্ব, আত্মবিশ্বাস ও আল্লাহর নির্ভরতা নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে। তিনি প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে সাথীদেরকে ডাকলেন এবং বাহন জন্তুর পিঠ থেকে নেমে গম্ভীর স্বরে বলতে লাগলেনঃ

‘‘আমি সত্য নবী, এতে নেই কোন মিথ্যার লেশ। [আরবী*********]

আমি আব্দুল মুত্তালিবের পৌত্র জানো বেশ।’’ [আরবী*********]

হযরত আববাস নিকট থেকেই ডাক দিলেনঃ ‘‘ওহে আনসারগণ! ওহে গাছের নিচে বসে বায়য়াত গ্রহণকারীগণ!’’ এ আওয়ায শুনেই বিক্ষিপ্ত মুসলমানরা চারদিক থেকে ছুটে এল এবং অমিত বিক্রমী নেতা রসূল সা. এর চার পাশে সমবেত হলো। এরপর তারা এমন বীরোচিতভাবে যুদ্ধ করলেন যে, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই যুদ্ধের গতিধারা পাল্টে গেল। শত্রুর ৭০ জন মারা গেল। তাদের পতাকাবাহক মারা গেলে। তাদের গোটা বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে গেল। পরাজিত কাফের বাহিনীর একাংশ আওতাস দূর্গে গিয়ে আত্মগোপন করলো। আবু আমের আশয়ারী ক্ষুদ্র একটা দল নিয়ে সেখানে গেলেন। শত্রুরা ছিল কয়েক হাজার। আবু আমের আশায়ারী নিজে শহীদ হলেন। তবে তার দল জয় লাভ করলো।

তায়েফ অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গা ছিল। কেননা তার চারপাশে ছিল প্রাচীর। এই প্রাচীর মেরামত করা হয়েছিল এবং সারা বছরের প্রয়োজনীয় রসদ আগে থেকে সেখানে সঞ্চিত করা হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্রও ছিল। রসূল সা. এর আসল লক্ষ্য ছিল এই কেন্দ্রীয় জায়গাটি দখল করা। কিন্তু তিনি এমন কৌশল অবলম্বন করলেন যে, তায়েফবাসীকে বনু হাওয়াযেনের সাহায্যে থেকে প্রথমে বঞ্চিত করলেন। কিন্তু হেরে যাওয়া লোকেরা এখানেই সমবেত হয়েছিল। তায়েফের ওপর আক্রমণ এমন একটা দিক দিয়ে করা হলো, যেদিক থেকে আক্রমণ হওয়ার কথা তায়েফবাসী কল্পনাও করতে পারেনি। প্রথমে হযরত খালেদ একটা সেনাদল নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন। পরে রসূল সা. স্বয়ং গোটা বাহিনী নিয়ে হাজির হলেন। এটা ছিল প্রথম ঘটনা, যখন দুর্গ ভাঙ্গার জন্য কামান ও ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। (উল্লেখ্য যে, রসূল সা. জুরাশ নামক স্থানে দুর্গ ভাঙ্গার ভরী অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য অন্য কয়েকজন মুসলিম যোদ্ধাকে পাঠিয়েছিলেন। জুরাশ ছিল এই জাতীয় অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কেন্দ্র। সম্ভবত এই কেন্দ্র ইহুদীদের দখলে ছিল)। কিন্তু ভেতর থেকে সৈন্যদের ওপর ব্যাপক তীর বর্ষণের সাথে সাথে দূর্গভাঙ্গা অস্ত্রগুলোর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে গরম লৌহ শলাকা নিক্ষেপ করা হতে লাগলো। বহু মুসলিম যোদ্ধা আহত হলো এবং তাদেরকে পিছু হটতে হলো।

এই পরিস্থিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রসূল সা. নওফেল বিন মুয়াবিয়ার মতামত তলব করলেন। তিনি এক মজার জবাব দিলেন। সে বললো, “শেয়াল গর্তে ঢুকে গেছে। চেষ্টা অব্যাহত রাখা হলে নিয়ন্ত্রণে আসবেই। আর যদি তাকে তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তেমন কোন ক্ষতির আশংকাও নেই।‘’ এই জ্ঞানগর্ভ পরামর্শের ভিত্তিতে রসূল সা. মনে করলেন, গোটা আরব যেখানে ইসলামের অধীনে এসে গেছে, সেখানে তায়েফ ভিন্ন মতাবলম্বী তো হতে পারে না। তাকে যদি এখনই বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করা হয় তাহলে দুটো ক্ষতি হবে। আর যদি ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি তায়েফবাসীর মধ্যে সেচ্ছা ভিত্তিক আনুগত্যের প্রেরণা জাগাবে। তাদের মনের দরজা ইসলামের বিপ্লবী মতাদর্শের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তাই তিনি ইসলাম ও তায়েফবাসী উভয়ের বৃহত্তম কল্যাণার্থে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলেন। রসূল সা. রক্তপাত এড়িয়ে চলতে কত যত্নবান ছিলেন, এটা তার একটা জ্বলন্ত প্রমাণ। সাথীরা বললো, “হে রাসূল, আপনি তায়েফবাসীর জন্য বদদোয়া করুন।’ রাসূল সা. দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ সকীফকে সঠিক পথ দেখাও এবং তাদেরকে আমাদের সাথে যুক্ত করে দাও।” যে তায়েফবাসী একদিন রাসূল সা. কে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল, তাদের জন্য তিনি এ দোয়া করলেন। এ দোয়াও তাঁর এই দয়ালু হৃদয়ের পরচিায়ক, যে হৃদয় একান্ত বাধ্য না হলে কোথাও শক্তি প্রয়োগকরার পক্ষপাতী ছিল না। তবে সে হৃদয় ক্ষমাও দয়া বিতরণে কখনো কার্পণ্য করেনি।

জারানায় ২৪ হাজার উট, ৪০ হাজার ছাগল এবং ৪ হাজার উকিয়া রৌপ্য গণিমত হিসেবে হস্তগত হয়। এর মধ্য থেকে কোরআনের বিধান অনুসারে এক পঞ্চমাংশ সামাজের অভাবী শেণীর জন্য ও সমষ্টিক প্রয়োজনের জন্য বাইতুলমালে জমা করা হয়। আর বাদবাকী সব সৈন্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এভাবে গণিমত হস্তগত করা একদিকে যেমন শত্রুপক্ষরে আর্থিক ও সামরিক শক্তি হ্রাস করার একটা উৎকৃষ্ট পন্থা, অপর দিকে তেমনি শত শত বছর ধরে সঞ্চিত সম্পদকে এই প্রথম বারের মত অবাধ বিতরণের সুযোগ পাওয়া গেল এবং ধনী ও গরীব গোত্রসমূহের পুরানো অর্থনৈতিক বৈষম্য দুর হবার অবকাশ সৃষ্টি হলো।

কোরআন যাকাতরে অর্থ বিতরণের জন্য ‘চিত্ত আকর্ষণ’ বা ‘তালীফুল কালব’ শীর্ষক একটা খাত বরাদ্দ করেছে। (এর পারিভাষিক অর্থ হলো, ইসলাম ও মুসলমানদরে বৃহত্তর স¦ার্থে যে সমস্ত ব্যক্তিকে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি সহনশীল বা সহানুভূতিশীল করা প্রয়োজন, তাদেরকে প্রয়ােজনীয় অর্থ দিয়ে উদ্দেশ্য সিদ্ধ করা-অনুবাদক) এই খাতের আওতায় রাসূল সা. মক্কার অধিবাসীদেরকে ও তাদের নেতৃবৃন্দকে মুক্ত হস্তে অনেক অর্থসমম্পদ দান করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল তাদের মনের জ¦ালা প্রশমতি করা। তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার আকাশ থেকে পাতালে নক্ষিপ্তি হয়েছিল এবং গোটা সামাজিক পরিবেশ তাদের কাছে সম্পূর্ণ পরর্বিততি হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় তাদের মত দুস্থ ও অসহায় পৃথিবীতে আর কেউ ছিলনা। রসূল সা. এর ঘনিষ্ঠ জন হয়েও যখন তারা পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতো, আর আনসার ও মোহাজেররা রাসূল সা. এর ডান হাত ও বাম হাত হিসেবে অবস্থান করতেন, তখন তাদের অনুভুতি কেমন হতে পারে তা সহজেই বুঝা যায়। আল্লাহর আদালত দীর্ঘ দু’দশক ধরে প্রতিষ্ঠিত মামলার রায় ঘোষাণা করলো। এ মামলায় কােরায়শেরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও হেরে গেল। তাই তাদের চেয়ে বড় র্দুদশাগ্রস্ত মানুষ সেদিন আর কেউ ছিলনা। তাদের পরাজয়ের গ্লানী ও হতাশা ভোলানোর ব্যবস্থা যদি না করা হতো, তাহলে তদের হতাশা থেকে বারবার চাপা প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠতো এবং তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোক দেখানো আনুগত্যের আড়ালে ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে ভেতরে ভেতরে সাবোটাজ করতে থাকতাে। আবু সুফিয়ান, হাকীম বিন হিযাম, নাযর বিন হারিস, সাফওয়ান বিন উমাইয়া ও আকরা বিন উমাইয়া ও আকারা বিন হারিসের মত শীর্ষস্থানীয় কোরায়েশ নেতারা আজ সেই ব্যক্তির কাছ থেকেই দান গ্রহণ করছে, যাকে তারা বহু বছর ধরে গাল দিয়েছে, মিথ্যুক বলেছে, ব্যংগ বদ্রিুপ করেছে, শারীরিক কষ্ট দিয়েছে, অবরোধ করেছে, হত্যা করতে চেয়েছে, ঘর বাড়ী ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে, এবং হিজরত করে চলে যাওয়ার পরও তাঁর বরিুদ্ধে আগ্রাসী আক্রমণ চালিয়ে তাকে এক মুর্হূত শান্তিতে ও নিরাপদে থাকতে দেয়নি। এমন বিস্ময়কর দৃশ্য কে কোথায় দেখেছে? মানবতার সেবার এমন ক’টা দৃষ্টান্ত ইতিহাসে পাওয়া যাবে?

বদান্যতা ও মহানুভবতার এমন উত্তাল সমুদ্র কােরায়শে নেতাদের ওপর আছড়ে পড়ছে দেখে আনসারদের কারো কারো মনে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলো। তাদের মধ্যে কিছু কিছু হীন ভাবাবগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। তারা ভাবলো, বংশীয় স¦জন প্রীতি ও মাতৃভমির টানেই হয়তো রাসূল সা. তাদেরকে এত খাতির তোয়াজ করছেন এবং আমাদেরকে অবহেলা করছেন। কেউ কেউ মুখ ফুটে বলে ফেললো, “ইসলামের রক্ষণাবক্ষেণরে জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করার বেলায় তো আমরাই আছি এবং আমাদের তরবারী দিয়ে এখনও রক্তের ফোঁটা টপকাচ্ছে। কন্তিু দান দক্ষণিার বেলায় আমাদের ওপর কোরায়েশরাই অগ্রাধিকার পেল।

যাদের মাথায় এ ধরনের চন্তিাভাবনা কিলবিল করছিল, তারা এ কথা ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করলোন্া যে, রাসূল সা. নিজ পরিবারভূক্তদেরকে এই দান দক্ষণিা দিচ্ছেননা। নিজের নিকটাত্মীয় মোহাজেরদেরকেও দিচ্ছেননা এবং নিজেও নিচ্ছেন না। এমতাবস্থায় কোরায়েশদের সাথে যদি একটু বিশেষ ধরনের আচরণ করা হয়ে থাকে তবে নিশ্চয়ই তার পেছনে ্েকান বৃহত্তর কল্যাণ রয়েছে।

বিষয়টা যখন রাসূল সা. এর কানে গেল, তখন একটা শামিয়ান টানানো হলো এবং সেখানে এবং সেখানে আনসারদেরকে ডাকা হলো। রসূল সা. তাদের সামনে মর্মস্পর্শী সংক্ষপ্তি ভাষণ দিলেন। (এই ভাষণ ইতি পূর্বে উদ্ধৃত করা হয়েছে।) এ ভাষণের শেষ বাক্যটা ছিল এ রকম: “হে আনসার! তোমাদের কাছে কি এটা পছন্দনীয় নয় যে, অন্যরা উট ছাগল নিয়ে যাক, আর তোমরা মুহাম্মদ সা. কে সাথে নিয়ে যাও?” এ ভাষণ শুনতে শুনতে আনসারদের চোখের পানিতে দাড়ি ভিজে যাচ্ছিল। শেষের বাক্যটি শুনতে তারা চিৎকার করে বলে উঠলো, “আমাদের জন্য শুধু মুহাম্মদই সা. যথেষ্ট।’’ এরপর তিনি কোমল ভাষায় তাদেরকে বুঝালেন কোন্ কোন্ কারণে কোরায়েশদের মনলোভনের প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল।

এ দিকে ছ’ হাজার যুদ্ধবন্দী তাদের ভাগ্য নির্ধারণের অপক্ষোয় ছিল। রাসূল সা. পুরো দু’সপ্তাহ অপক্ষো করলেন যে, কেউ এসে তাদের সম্পর্কে কোন বক্তব্য পেশ করে কিনা। এ জন্য তিনি গণিমতের ভাগবাটোয়ারাও স্থগিত রেখেছিলেন। কন্তিু কেউ যখন এলনা, তখন ভাগবাটোয়ারা হয়ে গেল। ভাগবাটোয়ারার পর রসূল সা. এর দুধমাতা হালীমা সা’দিয়ার গোত্রের মান্যগণ্য লোকদের একটা দল তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে এল। দলনেতা যোহায়ের অত্যন্ত মর্মস্পশী ভাষায় তাদের গোত্রের যুদ্ধবন্দীদের সম্পর্কে বললোঃ

“যে মহিলারা এখানে ছাপড়ায় আটক রয়েছে, তাদের ভেতর আপনার ফুফুরাও আছে, খালারাও আছে। আল্লাহর কসম, আরবের কোন রাজাও যদি আমাদের গোত্রের কোন মহিলার দুধ পান করতো, তবে তার কাছওে আমরা অনেক কিছু আশা করতাম। তবে আপনার কাছ থেকে আমরা আরো বেশী আশা করি।”

রাসূল সা. তাদের বুঝালনে যে, আমি নজিইে দীর্ঘ সময় অপক্ষোয় ছিলাম যে, কোন দাবীদার আসে কিনা। শেষ র্পযন্ত কেউ না আসায় বাধ্য হয়ে বন্টন করে দিয়েছি। এখন যে সব বন্দীকে বনু হাশেমের লোকদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে, তাদেরকে তো আমি এই মুহূর্তেই তোমার হাতে অর্পন করছি। অন্যদের জন্য নামাযের পর মুসলমানদের বৃহত্তম সমাবেশে তুমি বক্তব্য রাখবে। নামাযের পর যোহায়ের তার বক্তব্য পেশ করলো। রসূল সা. বললেন, “আমি শুধু আমার গোত্র (বনু হাশেম) সম্পর্কে দায়িত্ব নিতে পারি। তবে সকল মুসলমানকে আমি সুপারিশ করছি।” তৎক্ষণাত সকল আনসার ও মোহাজের বলে উঠলোঃ “আমাদের অংশও আমরা মুক্ত করে দিচ্ছি।” কেবল বনু সুলায়েম ও বনু ফাযারার কাছে বিজিত শক্রদের আটককৃত যুদ্ধবন্দী বিনা মূল্যে স্বাধীন করে দেয়ার ব্যাপারটা অভিনব মনে হলো এবং তারা ইতস্তত করতে লাগলো। অবশেষে রসূল সা. বন্দীপ্রতি ৬ টি করে উট দিয়ে বাদবাকী বন্দিদেরকেও মুক্ত করিয়ে আনলেন। এভাবে ৬ হাজার যুদ্ধবন্দীর সবাই মুক্ত হয়ে গেল। বহু বন্দীকে রাসূল সা. পোশাকও দিলেন। সাধারণ বিজেতাদের যা কল্পনারও বাইরে, সেটাই এখানে সংঘটিত হলো। বন্দীদেরকে মুক্তিপণ ছাড়াইমুক্ত করে দেয়া হলো। কেননা লোকদেরকে হত্যাকরা বা গোলাম বানানো তার আসল উদ্দেশ্য ছিলনা। আসল উদ্দেশ্য ছিল সত্য দ্বীনের প্রতষ্ঠিা এবং মানুষের মনকে তার জন্য প্রস্তুত করা।

এই কাজ সম্পন্ন করে তিনি ওমরা করলেন এবং ইতাব বিন উসাইদকে মক্কার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে মদিনায় চলে গেলেন।

মক্কা বিজয়ের পর

আমার মতে, মক্কা বিজয়ের পরবর্তী হোনায়েন যুদ্ধে ইসলাম বিরোধী নাশকতাবাদী শক্তি অভ্যন্তরীণভাবে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। এ যুদ্ধের পর আরবের ভাগ্যে ইসলামী বিধান চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। অন্য কারো জন্য সামনে অগ্রসর হবার কোন সুযোগ অবশিষ্ট থাকেনি। এরপরও ছোট ছোট কয়েকটা সামরিক ব্যবস্থা বক্ষিপ্তি দুস্কৃতিকারীদের দমন ও আইন শৃংখলা পুনর্বহালের জন্য গ্রহন করতে হয়েছিল। তবে সেগুলো তেমন গুরুত্বর্পূণ ঘটনা নয়।

বনু তামীম গোত্র অন্য কয়েকটা গোত্রকে প্ররোচিত করে ইসলামী সরকারের রাজস্ব আদায় বন্ধ করে দিয়েছিল। এটা ছিল একটা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। উয়ইনা বিন হিসনকে ৫০ জন অশ্বারোহী সৈন্য সমেত পাঠানো হয়। হামলা হওয়া মাত্রই বনু তামীম পালিয়ে যায়। কয়েকজনকে বন্দী করে মদিনায় আনা হয় এবং পরে মুক্তি দেয়া হয়।

খাসয়াম গোত্র (তাবালা অঞ্চলের অধীবাসী) বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিল। কাতবা বিন আমেরের নেতৃত্বে ২০ জন সৈন্যের একটা সেনাদল তাদের দমনের জন্য পাঠানো হয়। বিদ্রোহীরা পালিয়ে যায়। কিছু লোককে বন্দী করা হয়। কিন্তু রসূল সা. পরে তাদেরকে ছেড়ে দেন। হযরত দাহাককে বনু কিলাবের কাছে পাঠানো হয়। তাঁর সাথে ছিল একই গোত্রের আসীদ বিন সালমাও। এ দলটা ছিল প্রধানত দাওয়াতী ও শক্ষিামূলক দল। গোত্রের লোকেরা তাদের বরিুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। আসীদের পিতা নিহত হয়। এ সম্পর্কে আর কোন বস্তিারতি বিবরণ জানা যায়নি।

একবার জানা গেল আবিসিনিয়ার কিছু নৌদস্যু জেদ্দায় সমবেত হয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন হুযাফা কারশী (বা আলকামা বিন মুজাযযাজ) তিনশো সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে রওনা হতেই দস্যুরা পালিয়ে যায়।

নবম হিজরীর রবিউস সানী মাসে হযরত আলী রা. কে দেড়শো অশ্বারোহী সৈন্য সমেত বনী তাঈ গোত্রে পাঠানো হলো এবং নির্দেশ দয়ো হলো ওখানকার বড় মন্দিরটাকে ধ্বংস করে দিতে। এখানে বিষয়টার একটু বশ্লিষেণ প্রয়োজন। মদিনার ইসলামী রাষ্ট্র একটা আদর্শবাদী রাষ্ট্র ছিল। এ রাষ্ট্র যে মৌলিক আকীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ তার বিরোধী আকীদা পোষণ করলে তা ঐ রাষ্ট্র বরদাশত করতে পারতো। কন্তিু এই মৌলিক আকীদা বিশ্বাস তথা তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসের পরিপন্থী কোন সামাজিক প্রতিষ্টানকে সে কিভাবে চলতে দিতে পারে? এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে যে প্রাগৈতিহাসিক আরবের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় সেখানকার মূর্তিগুলো ছিল জীবন্ত প্রেরণার উৎস স্বরূপ। ঐ সব মূর্তির অস্তত্বি কল্পনা করতেই এমন মানসিক ভাবাবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হতো, যা জাহেলী সমাজের লোকদেরকে উস্কানী দিয়ে দিয়ে ইসলামী সরকারের বরিুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করতো। এই সব মূর্তির নামে বড় বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রক্ষোপটে জাহেলী যুগের মন্দিরগুলোকে সামষ্টিক প্রতষ্ঠিান হিসাবে বহাল রাখা এবং পৌত্তলিক চন্তিাধারাকে বারবার অস্থিরতা ও উত্তেজনা সৃষ্টির সুযোগ দেয়া কোনমতেই যুক্তিসংগত কাজ হতোনা। এই মূর্তিগুলো প্রকৃত পক্ষে একটা বিশেষ ধরনের মানসিকতার প্রতীক এবং একটা বাতিল জীবন ব্যবস্থার নিদর্শন ছিল। তাই বনী তাঈ গোত্রের মন্দির ধ্বংসের এই পদক্ষপেকে কোন স্বীকৃত ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষপেরে পর্যায়ভুক্ত বলা যাবেনা, বরং এটা ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তত্বিরে বরিুদ্ধে হুমকি সৃষ্টিকারী প্রবণতা থেকে পরিবেশকে মুক্ত করার একটা অনিবার্য পদক্ষপে ছিল। ব্যাপারটা কার্যত কেবল আর্দশকি পর্যায়েই যে সীমাবদ্ধ ছিল; তাও নয়। তাই গোত্র পৌত্তলিক আকীদা বিশ্বাস দ্বারা তাড়িত হয়ে কিছ বিদ্রোহী মনোভাবও পোষণ করতে আরম্ভ করেছিল। মদিনার সাথে টক্কর দেয়ার চন্তিাভাবনা তাদের ভেতরে যথেষ্ট পেকে উঠেছিল। এর অকাট্য প্রমাণ এইযে, হাতেম তাঈ এর খ্যাতনামা পরিবারে তার ছেলে আদী ইবনে হাতেম স্বয়ং এ উদ্দেশ্যে বহু সংখ্যক বাহক পশু ও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে রেখেছিল। আদীর মত ঐ গোত্রে আরো অনেকেই যে এধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল তা বিচিত্র কিছু ছিলনা।

যাহোক, হযরত আলী রা. কুল্স নামক স্থানে পৌঁছে সকাল বেলাই আক্রমণ চালালেন। আদী বিন হাতেম কিছু শক্তি সংগ্রহ করে আনার উদ্দেশ্যে সিরিয়া পালিয়ে গেল। গোত্রের লোকেরা সামান্য প্রতিরোধ করেছিল। তাদের মন্দির ভেংগে ফেলা হলো। আদীর বোনসহ আরো কয়েকজনকে বন্দী করে মদীনায় আনা হলো এবং কিছু পশু ও অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করা হলো। আদীর বোন রসূল সা. এর কাছে নিজের র্মমন্তুদ দুঃখরে কাহিনী বর্ণনা করলো। সে বললোঃ “আমার বাবা মারা গছেনে। আমার প্রহরী আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমি বৃদ্ধা ও দুর্বল। কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই। আমার ওপর অনুগ্রহ করুন। আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ করবে। রাসূল সা. এই মহিলার ইচ্ছা অনুযায়ী তার জন্য বাহক পশুর ব্যবস্থা করলেন এবং তাকে মুক্ত করে পাঠিয়ে দিলেন। এই মহিলা বাড়ী গিয়ে তার ভাইকে রাসূল সা. এর মধুর স্বভাব ও আচরণের কথা জানালো। সে বললো, “অবিকল আমাদের পিতার মত আচরণ দেখে এলাম। অমুক এলে তার প্রতি এরূপ অনুগ্রহ দেখানো হলো, অমুক এলে তাকে এরূপ বদান্যতা প্রদর্শন করা হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। রাসূল সা. এর সাথে যুদ্ধ করার চন্তিা ছেড়ে দাও। নিজে যাও। দেখাবে কত উপকার লাভ করবে।” এর অল্প কিছুদিন পরই আদী ইবনে হাতেম মদিনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করলো।

দুটো আর্ন্তজাতিক যুদ্ধ

রসূল সা. এর জীবদ্দশায় যে আসল কাজটা সম্পন্ন হয়েছিল, তা ছিল দেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও ইসলামী বপ্লিবরে পূর্ণতা সাধনের কাজ কন্তিু তিনি আশপাশের দেশগুলোর শাসকদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আন্দোলনের আর্ন্তজাতকি যুগের সূচনা করেন। তিনি বিভিন্ন দেশে দূত প্রেরণ করেন। একজন দূতের নাম হলো হারেস বিন উমায়ের আয্দী। তাঁকে সিরিয়ার খৃষ্টান শাসকের নিকট পাঠানো হয়। কন্তিু খৃষ্টান শাসক শুরাহবীল বিন আমের গাসসানী রাসূল সা. এর এই দূতকে পথিমধ্যেই হত্যা করে। এ কাজটা ছিল মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও সমকালীন প্রচলিত আর্ন্তজাতকি আইনের এমন জঘন্য লংঘন, যাকে কোন সরকার নীরবে বরদাশত করলে সে সরকারের কোন মান মর্যাদা অবশিষ্ট থাকতোনা। এ জন্য ৮ম হিজরীতে রসূল সা. স্বীয় মুক্ত গোলাম যায়েদ বিন হারেসার নেতৃত্বে তিন হাজার সৈন্যের এক বাহিনীকে সিরিয়া অভিমুখে প্রেরণ করেন। এক ব্যক্তি গোলামীর অবস্থা থেকে উন্নীত হয়ে কিভাবে সেনাপতি হয়ে গেল এবং ইসলামী বপ্লিবরে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো, সেটাই এ ঘটনায় পরিষ্ফুট হয়েছে। এই যায়েদ বিন হারেসার ছেলে উসামাকেও রসূল সা. জীবনের শেষ অভিযানে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। এই বাহিনীকে বিদায় জানাতে রাসূল সা. স্বয়ং সানিয়াতুল ওদা র্পযন্ত যান। বাহিনী যখন মুয়ান নামক স্থানে পৌছলো, তখন জানা গেল যে, রোম স¤্রাট হিরাক্লিয়াস সিরিয়া সফরে এসেছে এবং ঐ অঞ্চলের প্রায় এক লাখ খৃষ্টান সৈন্য তার সাথে রয়েছে। ইতিপূর্বে মুসলিম বাহিনীর মদনিায় প্রত্যাবর্তনের যে প্রস্তাব বিবেচনাধীন ছিল, সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলো এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে যুদ্ধ করার সদ্ধিান্ত নেয়া হলো। সামনে অগ্রসর হতেই মাশারেফ নামক স্থানে শক্রর এক বিরাট বাহিনীর সাথে সাক্ষাত হলো এবং তুমুল লড়াই হলো। যায়দে বিন হারেসা শহীদ হলেন। এরপর পতাকা বহন করলেন হযরত জাফর। জাফরের ডানহাত কেটে গেলে বাম হাত দিয়ে পতাক ধরলেন। বাম হাতও কেটে গেলে বুকের ওপর রাখলেন। অবশেষে ৯০টি আঘাত খেয়ে শাহাদাত লাভ করলেন। এরপর রাসূল সা. এর নির্দেশিত ধারাবাহিকতা অনুসারে পতাকবাহী হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা। তনিওি যখন শহীদ হলনে তখন র্সবসম্মত রায়ে সনোপতি হলনে খালদে ইবনুল ওলীদ। তিনি এমন দুর্ধষতার সাথে যুদ্ধ করলেন যে, তার হাতে একে একে ৯ খানা তরবারী ভেঙ্গে গেল। অবশেষে শক্রসৈন্য পিছু হটতে বাধ্য হলো। হযরত খালেদ বাহিনীকে বাঁচিয়ে নিয়ে এলেন। মোট ১২ ব্যক্তি এই যুদ্ধে শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে মূল্যবান ব্যক্তিবর্গ অর্ন্তভুক্ত ছিলেন।

মুসলমানরা সাময়কিভাবে এই বিজয়কে যথেষ্ট মনে করলেন। কেননা শক্রর সৈন্য সংখ্যা খুবই বেশী ছিল, স্থানটা ছিল বিদেশ এবং পরিস্থিতি ছিল একেবারেই অপরিচিত। রসদের ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল এবং বাড়তি সৈন্য আনারও কোন আশা ছিলনা। এ জন্য এই বাহিনী মদিনায় ফিরে এল। রসূল সা. ও মুসলমানগণ মদিনা থেকে বেরিয়ে এসে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। কেউ কেউ কৌতুক করে এই বাহিনীকে “ফেরারী” বলে আখ্যায়িত করলে রাসূল সা. বললেন, না “ফেরারী” নয় এরা “কেরারী” অর্থাৎ তারা পুনরায় যুদ্ধে যাবে। হযরত খালেদ রা. এই যুদ্ধে যে কৃতিত্ব দেখান. সে অনুসারে তাকে ‘সাইফুল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহর তরবারী’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

এই পর্যায়ে দ্বিতীয় অভিযান ছিল তাবুক অভিযান।

মক্কা বিজয়ের পর নবম হিজরীর রজব মাস চলছে। সিরিয়া থেকে আগত এক কাফেলা খবর দিল যে, রোম স¤্রাটের সৈন্যরা মদিনায় আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। রোম সা¤্রাজ্য তৎকালীন দুনিয়ার প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে বস্তিৃত ছিল। কছিুদনি আগে এ সা¤্রাজ্য ইরানকেও ঘায়েল করেছিল। রসূল সা. ও মুসলমানগণ সারা পৃথিবীতে ঈমান ও সততার আলো ছড়ানোর জন্য মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রকে একটা আলোর মিনার হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। অনেক পরিশ্রমের গড়া এই ইসলামী রাষ্ট্রকে তারা ধ্বংস হতে দিতে পারেন না। কেননা এই রাষ্ট্রই ছিল তাদের দ্বীন দুনিয়া, তাদের ধন সম্পদ ও আত্মীয় স্বজন সব কিছু। তাই তাৎক্ষণকি প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেল। স্থির হলো যে, কায়সারের সৈন্যরা আরবের ভূমিতে প্রবেশের আগেই অতর্কিতে আক্রমণ চালানো হবে, হাতে এই ভুখন্ডে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারে। সময়টা ছিল প্রচন্ড গরম, ভয়াবহ র্দুভক্ষি ও শোচনীয় দারিদ্রের। রাসূল সা. যুদ্ধের চাঁদার জন্য আবেদন জানালেন। মুসলমানরা এ আবেদনের এমন স্মরণীয় জবাব দিল যে, তা বিশ্বমানবতাকে চিরদিন মূল্যবান প্রেরনা যোগাতে থাকবে। হযরত উসমান রা. ৯০০ উট, ১০০ ঘোড়া, ও এক হাজার দিনার দান করলেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. ৪০ হাজার দিরহাম দিলেন। হযরত ওমর রা. নিজের সহায় সম্পদের বেশী অর্ধেক হাজির করলেন। হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রা. পুরো ঘর খালি করে নিজের যথা সর্বস্ব এনে জমা দিলেন। দানের প্রতিযোগিতায় তাঁর পাল্লা সবার চেয়ে ভারী হয়ে গেল। তবে সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার সম্ভবত একজন দরিদ্র দিনমজুর আনসারী করেছিলেন, যিনি সারা দিন পানি বহন করে পাওয়া মজুরী দু’ভাগ করে অর্ধেক পরিবারের জন্য রেখে বাকী অর্ধেক রসূল সা. এর কাছে হাজির করে দেন। রসূল সা. তাঁর দেয়া জিনিসগুলোকে অন্যদের দেয়া সমস্থ মূল্যবান জিনিসের ওপর ছড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুসলিম মহিলারা জেহাদের ফান্ডে নিজেদের অলংকারাদি র্পযন্ত দিয়ে দিয়েছিলেন।

দশ হাজার ঘোড়াসমেত ৩০ হাজার সৈন্য তাবুক অভিযানে রওনা হয়। মদিনার উপকন্ঠে ছানিয়াতুল বিদা নামক স্থানে বসেই সৈনিকদের শ্রেণী বিন্যাস, সেনাপতি নিয়োগ ও পতাকা বন্টনের কাজ সুসম্পন্ন করা হয়। তাবুক পৌঁছার পর জানা গেল, শক্ররা আরবের ওপর হামলা করার ইচ্ছা পরিত্যাগ করেছে। আসলে তাদেরকে কে যেন ভুল খবর দিয়েছিল যে, মদিনার নবী সা. মারা গছেনে। (নাউজুবল্লিাহ) এজন্য তারা ভেবেছিল যে এখন হামলা করার সুবর্ণ সুযোগ এসে গেছে। পরে যখন তারা জেনেছে, নবীও জীবিত আছেন এবং মদিনাও জীবিত, তখন তাদের আগ্রাসী উচ্চাভিলাষ স্তব্ধ হয়ে গেছে। যাহোক, এই সামরিক অভিযানের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল খুবই সন্তোষজনক। রাসূল সা. একমাস র্পযন্ত তবুকে সেনা শিবির বহাল রেখে অবস্থান করেন। এই সময় চতুর্দিকে রাজনৈতিক প্রভাব বস্তিাররে কাজ সাফল্যজনকভাবে চলতে থাকে। আয়লার শাসনকর্তা এসে সাক্ষাত করে এবং জিযিয়া দিতে সম্মত হয়ে আপোষমূলক সম্পর্কের সূচনাকরে। জারাবা ও আযরাদের অধিবাসীরা ও এসে জিযিয়া দিয়ে বশ্যতা স্বীকার করে। দুমাতুল জান্দালের সমস্যা বহু দিন ধরে রসূল সা. এর কাছে গুরুত্বর্পূণ ছিল। হযরত খালেদ ইবনে ওলীদকে চারশোরও বেশী সৈন্যসহকারে জুমাতুল জান্দালের শাসক উকায়দারের কাছে পাঠানো হয়। সে ও তার ভাই শিকার করছিল। তার ভাই মারা গেল এবং উকায়দার গ্রেফতার হলো। জিযিয়ার ভিত্তিতে তার সাথে সন্ধি হয়। রাসূল সা. তাকে দুমাতুল জান্দাল, আইলা, তায়মা ও তবুকের জন্য মদিনার সরকারের পক্ষ থেকে শাসনকর্তা নিয়োগ করেন এবং এই মর্মে লিখিত সনদ অর্পণ করেন। কোন কোন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, হযরত খালেদ সুকৌশলে বিনাযুদ্ধে দুমাতুল জান্দালের দূর্গ দখল ও মূল্যবান গণমিত অর্জন করেন। রসূল সা. তাবুক থেকে প্রত্যাবর্তন করলে মদিনায় তাঁকে জাকজমকপূর্ণ সম্বর্ধনা জানানো হয়। এই অভিযান সম্পর্কে মোনাফেকরা যে সব চক্রান্ত চালায়, সেগুলো আমি ইতিপূর্বে একটা অধ্যায়ে উল্লখে করেছি। প্রচুর সংখ্যক (প্রায় ৮০ জন) মোনাফেক মদিনায় বসেছিল। তাদেরকে যখন তবুকে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তারা নানা রকম মনগড়া ওজুহাত খাড়া করে। রাসূল সা. তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তবে কিছু কিছু নিষ্ঠাবান মুমিন ও থেকে গিয়েছিল। আবু খায়সামা এদেরই একজন গণ্য হয়েছেন। তিনি মদিনায় থেকে গেলেও সহাসাই তার ভেতরে সম্বিত ফিরে আসে। রসূল সা. রওনা হয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর একদিন প্রচন্ড গরমে স্ত্রীর সাথে গাছগাছালির শীতল ছায়ায় আরাম করতে এলেন। সেখানে তিনি পানি ছিটানোর ব্যবস্থা ও ভোজনের আয়োজন করে রেখেছিলেন। সহসা খেয়াল হলো এবং স্ত্রীকে বললেন, “হায়, রসূল সা. রোদে ধূলায় ও গরমে কষ্ট পাচ্ছেন, আর আমি আবু খাইসামা কিনা সুশতল ছায়ায় সুন্দরী স্ত্রীর সাথে মজার মজার খাবার খাচ্ছি! এটা কিছুতেই ন্যায়সঙ্গত নয়’ আল্লাহর কসম আমি স্ত্রীদের কক্ষে যাবনা। আমার জন্য সফরের আয়োজন করা হোক।” উট আনিয়েই তাতে চড়ে রওনা হয়ে গেলেন এবং অনেক দূর গিয়ে তিনি বাহিনীর সাথে মিলিত হলেন। কন্তিু তিনজন মুমিন কা’ব বিন মালেক, হিলাল ইবনে উমাইয়া এবং মুরারা ইবনে রবী যাই যাই করেও যেতে পারেননি। তাদেরকে রাসূল সা. না যাওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে তারা স্পষ্ট ভাষায় বলনে, আমাদের ক্রটি হয়ে গেছে। রাসূল সা. আল্লাহর পরবর্তী নির্দেশ না আসা র্পযন্ত তাদেরকে সমাজ থেকে পৃথক এবং নিজ স্ত্রী থেকে দূরে থাকার আদশে দেন। এটা ছিল এক ধরনের নির্জন কারাবাসের শাস্তি। তাদের হাত পায়েও শেকল পড়ানো হয়নি, তাদেরকে কোন আলাদা কারাকক্ষওে আটকানো হয়নি। সামষ্টিক জীবন থেকে আকস্মিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী হয়ে যাওয়া খুবই কঠিন শাস্তি। তাও এমনভাবে যে সমস্ত কড়াকড়ি স্বয়ং আসামীকেই নিজের ওপর প্রয়োগ করতে হয়। কন্তিু তারা আনুগত্যের এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, যা ইতিহাসে র্স্বণাক্ষরে লেখা থাকবে। এমনকি বিষয়টা গাসসানী খৃস্টান শাসক যখন জানতে পারলো, তখন সে একটা চমৎকার মনস্তাত্বকি সুযোগ ভেবে কা’ব বিন মালেককে চিঠি লিখে যে, “তোমাদের নবী তোমাদের ওপর যুলুম করেছে। অথচ তোমরা খুবই মূল্যবান লোক। তোমরা আমাদের কাছে চলে আসলে আমরা তোমাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেব।” এটা ছিল একটা কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু কা’ব এই চিঠিকে চুলোর মধ্যে নক্ষিপে করেন। অবশেষে পুরো ৫০ দিন পর ওহি নাযিল হয়ে তাদের আন্তরকিতা ও নিষ্ঠার দরুন তাদের তওবা কবুল করার কথা ঘোষণা করে। এতে মদিনায় আনন্দের সাড়া পড়ে যায়। সর্ব দিক থেকে লোকেরা মোবারকরাদ সহ ঐ তিনজনকে সুসংবাদ দিতে দিতে ছুটে আসে। হযরত কা’ব তাঁর তওবা কবুল হওয়ার আনন্দে অধিকাংশ সম্পদ ছদকা করে দেন। এ রকমই ছিল ইসলামী আন্দোলনের গড়া মানুষের চরিত্র।

তবুক সফরকালেই আব্দ্লুাহ যুলবিজাদাইন ইন্তকিাল করেন। রাসূল সা. এর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন এই যুবক। তিনি খুবই বপ্লিবী আবেগ নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তরুণ বয়সেই তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গিয়েছিল এবং তার মন প্রভাবিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চাচার ভয়ে নিজের মনোভাব চেপে রাখেন। অবশেষে রসূল সা. যখন মক্কা জয় করে ফিরে এলেন, তখন তিনি তার চাচাকে বললেন: “প্রিয় চাচাজান, ‘’আমি বহু বছর ধরে অপক্ষোয় ছিলাম কখন আপনার মনে ইসলামী চেতনা জাগ্রত হয়। কন্তিু আপনি যেমন ছিলেন তেমনি রয়ে গেলেন। এখন আমাকে মুসলমান হওয়ার অনুমতি দিন।”

পাষাণ হৃদয় চাচা জবাব দিল: তুমি যদি মুহাম্মদের সা. দাওয়াত গ্রহন কর তবে আমি তোমাকে সমস্ত সহায় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবো। এমনকি তোমার পরনরে কাপড়ও কেড়ে নেব।”আব্দুল্লাহ বললেন, “চাচা, আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। মূর্তিপূজা এখন আমার আর ভাল লাগেনা। কাজেই এখন আমি অবশ্যই মুসলমান হব। আপনার সমস্ত সহায় সম্পদ আপনি নিয়ে নিন।” এই বলে পরনের কাপড় র্পযন্ত খুলে দিলেন। তার মা তার শরীর ঢাকবার জন্য একটা কম্বল দিল। কম্বল দুভাগ করে তিনি অর্ধেক দিয়ে লুংগি বানালেন এবং অর্ধেক দিয়ে দেহের ওপরের অংশ ঢাকলেন। এই অবস্থায় তিনি মদিনায় রাসূল সা. এর কাছে হাজির হলেন এবং ‘আসহাবে সুফফা’ দলে যোগদান করলেন। এই বপ্লিবী যুবক জেহাদের আবেগে উদ্দীপিত হয়ে রাসূল সা. এর সাথে তবুক রওনা হলেন। সেখানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ইন্তকোল করেন। রাতের অন্ধকারে তাঁর দাফন কাফন সম্পন্ন হয়। হযরত বিলাল রা.বাতি উঁচু করে ধরলেন। রসূল সা. স্বয়ং এবং আবু বকর ও ওমর রা. কবরে নামেন। রসূল সা. তাদেরকে বলেন, “তোমাদের ভাই এর সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখ।” রাসূল সা. স্বহস্তে তার কবরে ইট রাখেন। অতপর দোয়া করেন, “হে আল্লাহ, আজ সন্ধা র্পযন্তও আমি তার উপর সন্তুষ্ট ছিলাম। তুমিও তার উপর সন্তুষ্ট থাক।”

আব্দুল্লাহর এত কদর দেখে ইবনে মাসউদ রা. আক্ষপে করে বলেছিলেন, “হায়, এই কবরে যদি আমি যেতে পারতাম!”

মূল্যায়ন

এই অধ্যায়ে আমি মদিনার ইসলামী সরকারের গৃহীত সব ক’টা সামরিক পদক্ষপে বর্ণনা করেছি। এই যুদ্ধ-বগ্রিহগুলাে এবং যে পরিস্থিতিতে এগুলো করা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল, তা মনে রাখলে এ কথা অস্বীকার করার অবকাশ থাকেনা যে, রসূল সা. সংঘর্ষ এড়িয়ে গঠনমূলক কাজ করতে বদ্ধপরিকর থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ইসলামের শক্ররা নেহাৎ জোর করেই যুদ্ধের ময়দানে টেনে এনেছিলো। যে ব্যক্তি ক্ষমতার মসনদের পরিবর্তে কেবল সত্যও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ছেয়েছিলেন, যিনি তরবারীর জোর প্রভাব প্রতিপত্তি সৃষ্টির পরিবর্তে যুক্তি ও চরিত্র দ্বারা গোটা দুনিয়াকে জয় করতে চেয়েছিলেন, যিনি প্রতিশোধের পরিবর্তে ক্ষমা এবং হিংসা ও বলপ্রয়োগের পরিবর্তে ন্যায্য ব্যবহার ও সদাচারের পথ অবলম্বন করেছিলেন এবং যিনি রক্ত ঝরানো তরবারীর পরিবর্তে চুক্তি লিপিবদ্ধকারী কলম দিয়ে মীমাংসার নীতি প্রবর্তন করেছিলেন, সেই মহামানবকে তারা আট নয় বছরের মধ্যে একটা মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দেয়নি। এহেন পরিস্থিতিতেও রসূল সা. ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দেয়ার সেই অসাধারণ গঠনমূলক কাজ কিভাবে সম্পন্ন করলেন, ভেবে অবাক হয়ে যেতে হয়। রসূল সা. এর গঠনমূলক কাজের বস্তিারতি বিবরণ আমি এ পুস্তকরে একটা পৃথক অধ্যায়ে তুলে ধরবো ইনশায়াল্লাহ।

বস্তুত রসূল সা. এ দিক দিয়ে মানবতার সবচেয়ে বড় উপকারী বন্ধু ছিলেন যে তিনি শান্তি ও নিরাপত্তার র্বাতা প্রথমে সারা আরবে এবং পরে সারা পৃথিবীতে পৌঁছানোর জন্য তলোয়ারের ভেতর থেকেও নিজস্ব স্বাতন্ত্র পথ খুজে নেন। চরম দাঙ্গাবাজ শক্রদের প্রতিরোধবুহ্য ভেঙ্গে ন্যায় ও সত্যের বিধানকে প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণতা দান করেন। নচেত অন্য কেউ যদি হতো, সে শক্রর যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ শুনে নিজস্ব সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হতো। তাহলে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার স্মৃতি ইতিহাস থেকে মুছে না গেলেও তাকে আমরা বড় জোর মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে উপস্থিত দেখতে পেতাম, একটা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার আকারে তাকে আমরা কল্পনা করতে পারতাম না। সে ক্ষেত্রে ইসলাম দুনিয়ার অন্যান্য ধর্মের মতই ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ নিছক একটা আধ্যাত্মিক ও নৈতিক ধর্ম হিসেবে টিকে থাকতো। সমাজ ও রাষ্টের সাথে তার কোন সংশ্রব থাকতোনা। এ ধরনের ইসলামের আওতায় যত উচ্চাংগরে সাধু সজ্জনই তৈরী হোক না কেন, তারা প্রত্যেক কুফরি, বাতিল, অত্যাচারী ও শোষক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অত্যন্ত অনুগত ও বশ্বিস্ত সহযোগীতে পরিণত হতো। সে ক্ষেত্রে মানব সমাজ সামাজিক যুলম শোষণ ও দুনীতি উচ্ছেদের কোন প্রেরণা রসূল সা. এর কাছ থেকে পেতনা।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বিশ্ববাসী ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মঙ্গল নিশ্চিত করার লক্ষে রসূল সা. কত দুঃখ কষ্ট ও যুলুম নিপীড়ন সহ্য করেছেন, কত বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে শক্রদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন এবং যুলুমবাজ ও দুর্নীতিবাজ শক্তিকে দমন করেছেন, ছত্রভঙ্গ গোত্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, তাদেরকে জাহেলী নেতৃত্ব থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন, তাদেরকে শক্ষিা দিয়েছেন ও পরিশুদ্ধ করেছেন। শান্তরি পরিবেশ গড়ে তুলেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, সমাজকে ভ্রাতৃত্ব ও সুবিচারের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছেন এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পরামর্শ ভিত্তিক করন গণতান্ত্রিক যুগের সূচনা করেছেন।

এটাও রসূল সা. এর সর্বোচ্চ বচিক্ষণতা ও কর্মকুশলতার পরিচায়ক যে, এত যুদ্ধ করলেন এবং এত সেনাদল পাঠালেন, কন্তিু তাতে সর্বনিম্ন পরিমাণ রক্তপাত ঘটেছে ও সর্বনিম্ন পরিমান প্রাণ নাশ হয়েছে। এত কম রক্ত ঝারিয়ে আরবের মত বিশাল ভূখন্ডে সর্বপ্রথম একটা আদর্শবাদী একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা মানবেতিহাসে একটা বিস্ময়কর ঘটনা।

প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আজ আমাদের প্রতিটি মানুষ, সত্যটা জানুক বা না জানুক, তাঁর অনুগ্রহের কাছে ঋণী। তিনি যদি মুষ্টিমেয় সংখ্যক দলকে সাথে নিয়ে যুলুমের বিরুদ্ধে রুখে না দাাঁড়াতেন, তা হলে আমরা জীবনে সফলতা লাভের যে মূলনীতি, যে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং যে নৈতিক ঐতিহ্য তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি, মনুষ্যত্বের যে দৃষ্টান্ত তাঁর মাধ্যমে আমাদের সামনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির যে সর্বোত্তম ভারসাম্যপূর্ণ রূপকাঠামো তিনি নর্মিাণ করে দেখিয়েছেন, সেই সব অমুল্য সম্পদ আমাদের কপালে কোনকালেও জুটতোনা। রসূল সা. তাঁর যে উৎকৃষ্টতম ও প্রিয়তম সাথীদেরকে পবিত্র লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে কুরবানী করেছেন, তাদেরই রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীতে নতুন প্রভাতের সূচনা হয়েছে। আল্লাহ মুহাম্মদ সা. ও তাঁর অনুসারীদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন!

 

Page 26 of 35
Prev1...252627...35Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South