পরিশিষ্ট-৩
ইসলামী আন্দোলনে জনশক্তির ক্রমবৃদ্ধি
– রসূল সা. এর ইসলামী সংগঠনের প্রথম সহযোগীঃ (১) হযরত খাদীজা, (২) হযরত আবু বকর (৩) হযরত আলী (৪) হযরত যায়েদ বিন হারেসা রা.।
– হযরত আবু বকরের দাওয়াতী প্রচেষ্টার ফলে প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারী ৫ জনঃ (১) হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (২) হযরত ওসমান ইবনে আফফান (৩) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (৪) হযরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (৫) হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস।
– দাওয়াতের প্রথম তিন বছরে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ৪৬ ব্যক্তিঃ (১) খাব্বাব ইবনুল আরত তামীমী (২) সাঈদ বিন যায়দ (দারুল আরকাম কেন্দ্রিক আন্দোলনেরও পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন) (৩) ফাতেমা বিনতুল খাত্তাব (৪) লুবাবা বিনতুল হারেস (হযরত খাদিজার পর সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মহিলা) হযরত আব্বাসের স্ত্রী (৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (কারো কারো মতে, ইনি ইসলাম গ্রহণকারী ৬ষ্ঠ ব্যক্তি) (৬) উসমান ইবনে মাযঊন (ইসলাম গ্রহণকারী চতুর্দশ ব্যক্তি) (৭) আরকাম ইবনে আবুল আরকাম (ইসলাম গ্রহণকারী একাদশ বা দ্বাদশ ব্যক্তি।মতান্তরে তিনি ৭ম) মাখযুমী (ইবনে হাজারের মতে, ইনি উসমান ইবনে মাযঊন, উবায়দা ইবনুল হারেস, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ ও আবু সালমার সাথে একত্রেই দারুল আরকামে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (৮) আবু সালমা বিন আব্দুল আসাদ মাখযুমী (৯) আবু উবাইদা বিন আমের আল জাররাহ (হযরত ওমরের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন) (১০) কুদামা ইবনে মাযঊন (১১) উবায়দা বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিব (১২) জাফর বিন আবু তালেব (১৩) আসমা বিনতে উমায়েস (১৪) আবদুল্লাহ বিন জাহাশ (১৫) আবু আহমদ বিন জাহাশ (১৬) সায়েব বিন উসমান বিন মাযঊন (১৭) মুত্তালিব বিন আযহার (১৮) রমলা বিনতে আবি আওফ, মুতালিব ইবনে আযহারের স্ত্রী (১৯) উমাইর বিন আবি ওয়াক্কাস (সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাসের ভাই) (২০) আসমা বিনতে আবি বকর (২১) আয়েশা বিনতে আবি বকর (২২) হযরত আইয়াশ বিন আবি রবীয়া (আবু জাহলের ভাই) (২৩) আসমা (আইয়াশের স্ত্রী) (২৪) সুলাইত বিন আমর (হযরত আবু বকরের বর্ণনা অনুসারে, ইনি দারুল আরকাম যুগের পূর্বের মুসলমান) (২৫) মাসঊদ বিন রবীয়া (দারুল আরকাম যুগের পূর্বে ইসলাম গ্রহণকারী) (২৬) খুনাইস বিন হাদ্দাফা (২৭) আমের বিন রবীয়া (২৮) হাতেব ইবনুল হারস জুমহী (২৯) ফাতেমা বিনতে মুহাল্লাল, হাতেবের স্ত্রী (৩০) খাত্তাব ইবনুল হারেস (৩১) ফুকাইহা, খাত্তাবের স্ত্রী (৩২) মুয়াম্মার বিন হারেস (হযরত ওমরের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইনিই তার বোনকে কোরআন পড়াতেন। ওয়াকেদীর মতে, তার স্থান দশ জনের পর। ইবনে খাসয়ামার মতে, ৩৮ জনের পর।) (৩৩) নঈম বিন আব্দুল্লাহ, বনু আদীর সদস্য (চতুর্থ বা পঞ্চম ইসলাম গ্রহণকারী, কিন্তু পিতার ভয়ে ঈমান গোপন রাখেন) (৩৪) খালেদ বিন সাঈদ ইবনুল আস (ইমাম যুহরীর মতে, তাঁর স্থান ৪৪তম) (৩৫) আমীনা (বা হামিনা) বিনতে খালাফ, খালেদ বিন সাঈদের স্ত্রী। (৩৬) হাতেব বিন আমর (৩৭) ওয়াকেদ বিন আব্দুল্লাহ, বনী আদীর মিত্র (৩৯) খালেদ বিন হিযাম (হযরত খাদীজার ভ্রাতুষ্পুত্র) (৪০) আমের বিন মালেক (দারুল আরকামে ইনিই প্রথম বায়য়াত করেন) (৪১) আকেল বিন বুকায়ের (৩৫ বা ৩৬তম স্থান) (৪২) খালেদ বিন বুকায়ের (৪৩) আমের বিন বুকায়ের (৪৪) আম্মার বিন ইয়াসার (পিতা ইয়াসারের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন) (৪৫) সুমাইয়া (আম্মারের মাতা) (৪৬) সুহায়েব বিন সুফান রুমী, ইবনে জাদয়ানের মুক্ত গোলাম।
– আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরতকারীদের সংখ্যাঃ ১২ জন পুরুষ, ৪ জন মহিলা (মোট ১৬জন)।
– দ্বিতীয়বার আবিসিনিয়ায় হিজরতের সময় মোট সংখ্যাঃ ৮৩ জন। এ সময় যারা মক্কায় থেকে যান, তাদের সংখ্যা অন্তত পক্ষে আবিসিনিয়ায় গমনকারীদের সমান হবে। তাই মোট সংখ্যা দেড়শোর ওপরে হবে।
– মদিনায় ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পতাকাবাহীদের সংখ্যা ছিল মোট ৮জন।এরা সর্বপ্রথম রসূল সা. এর কাছে বায়য়াত করেন। (১) বারা বিন মারূর (২) কা’ব বিন মালেক (৩) আবদুল হাইছাম মালেক বিন তায়হান (৪) আসাদ বিন যারারা (৫) রাফে বিন মালেক (৬)কুতবা বিন আমের (৭) উকবা বিন আমের (৮) জাবের বিন আবদুল্লাহ।(সুবিদিত বর্ণনা অনুসারে আকবায় প্রথম বায়য়াত গ্রহণ করেন ৬ জন। ওয়াকেদীর মতে আসাদ বিন যারারা এবং যাকওয়ান বিন আব্দুল কায়েস আকাবার প্রথম বায়য়াতের আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
– আকাবার দ্বিতীয় বায়য়াতে অংশ গ্রহণ কারীগণঃ মোট ১২ ব্যক্তি অংশ নেন। জাবের বিন আব্দুল্লাহ ব্যতীত উপরোক্ত আনসারীগণ পুনরায় আসেন এবং নিজেদের সাথে আরো ৫ জনকে নিয়ে আসেন। নবাগতরা হলেনঃ (১) মুয়ায বিন হারেস (২) আওফ বিন হারেস (৩) যাকওয়ান বিন আবদুল কায়েস (৪) ইয়াযীদ বিন সা’লাবা (৫) উয়াইমির বিন মালেক।
– আকাবার দ্বিতীয় বায়য়াতে অংশগ্রহণকারীগণঃ এবারে সর্বমোট ৭৩ জন নারী ওপুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেন।
– (আকাবার তৃতীয় বায়য়াতের সময়) মক্কার শেষ যুগে মুসলমানদের সর্বমোট সংখ্যাঃ আবিসিনিয়ার মোহাজের ৮৩ এবং আকাবার বায়য়াতকারী আনসারী ৭৩ ছাড়াও মক্কায় কিছু মুসলমান ছিল। অনুরূপ, মদিনাতেও এমন কিছু মুসলমান থাকতে পারে, যারা নবুয়তের ১৩তম বর্ষের হজ্জে নাও এসে থাকতে পারে। এভাবে আনুমানিক মোট সংখ্যা আড়াই শো হতে পারে। এই সাথে যদি নাজরান ও গিফার (গিফার গোত্রের প্রায় অর্ধেক অল্প দিনের মধ্যেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল) এবং ইয়ামানের নও মুসলিমদের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তবে আরবের সর্বমোট মুসলমানদের সংখ্যা তিনশোর কম হবেনা।
– হিজরতের অব্যবহিত পর মদিনার মুসলমানদের সংখ্যা, আনুমানিকঃ বনুসালেম গোত্রের এলাকায় সর্বপ্রথম যে জুমার নামায পড়া হয়, তাতে একশো মুসলমান শরীক হয়েছিল, একথা সুবিদিত। যারা শরীক হতে পারেনি, সেই সব নারী ও রোগীদের সংখ্যা ধরলে মদিনার মুসলমান জনসংখ্যা কমের পক্ষে তিনশো হওয়ার কথা। একথাও সুবিদিত যে, রসূল সা. আনসার ও মোহাজেরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য একেবারে প্রথম দিকে যে সভা ডেকেছিলেন, তাতে ৯০ জন অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে উভয় পক্ষের লোক ছিল অর্ধেক অর্ধেক। এই সম্মেলনে আনসারদের মধ্য থেকে সম্ভবত সচ্ছল লোকদেরকেই রাখা হয়েছিল, যারা নিজ নিজ আর্থিক অবস্থার ভেতরে অন্তত একজন করে মোহাজেরের স্থান সংকুলান করতে পারে। এখানে নারীরা শরীক ছিলনা। তাই এই সম্মেলন থেকেও উপরোক্ত অনুমান সঠিক বলেই ধারণা জন্মে।
– বদর যুদ্ধের সময় মদিনায় মুসলমানদের আনুমানিক সংখ্যাঃ একথা সবার জানা যে, মদিনার আনসারদের মধ্যে ইসলাম অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করে এবং আওস ও খাজরাজ গোত্রে এ ব্যাপারে কোন বাধা ছিলনা। এ কথাও সুবিদিত যে, হিজরত থেকে বদর যুদ্ধ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় দু’একজন করে মোহাজেরের আগমন অব্যাহত ছিল এবং তাদের মোট সংখ্যা মোটামুটি কম ছিলনা। বুয়াত অভিযানে রসূল সা. এর সাথে দু’শো মোহাজের ছিল। অনুরূপভাবে, যুল উশাইর অভিযানেও তাদের সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ এর কাছাকাছি ছিল। এই সব প্রাথমিক অভিযানে রসূল সা. শুধু মোহাজেরদেরকেই কাজে লাগাতেন।
কেননা আকাবার বায়য়াত অনুসারে আনসারগণ শুধু মদিনার ভেতরে প্রতিরক্ষামূলক কাজে যোগ দিতে বাধ্য ছিল। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যুদ্ধে যোগদানকারী মোহাজেরদের সংখ্যাই যদি ২০০ হয়ে থাকে, তাহলে মোট সংখ্যা আরো কিছু বেশীই হবে। কমের পক্ষে আড়াই শো ধরে নেয়া যেতে পারে। [সাধারণভাবে যে কোন জনবসতিতে পুরুষদের সামরিক অনুপাত ১/৪ এবং ১/৫ হওয়ার কথা। কিন্তু দুই কারণে মদিনার মোহাজেরদের অবস্থা ভিন্নতার ছিল। প্রথমত, আরবের গোত্রীয় সমাজে সাধারণত প্রত্যেক পুরুষই লড়াকু হতো এবং এর ব্যতিক্রম খু্ব কমই হতো। তদুপরি মোহাজেরদের ঈমানী ও বিপ্লবী প্রেরণা থাকার কারণে তারা সর্বক্ষণ জীবন ও মৃত্যুর সংঘাতের মধ্যে জীবন যাপন করতো। এর ব্যতিক্রম কেউ ছিলনা বললেই চলে। তাছাড়া মোহাজের সমস্ত পরিবার পরিজন নিয়ে আসেনি। নারীদের উপস্থিতিও কম ছিল এবং বুড়ো লোকেরা বেশীর ভাগ মক্কায় থেকে গিয়েছিল। এই দুটি কারণে আমরা এভাবে অনুমান করেছি।] আনসারদের সংখ্যা এর দ্বিগুণ হওয়ার কথা। অর্থাৎ সর্বমোট সংখ্যা সাত আটশো হতে পারে।[বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মদিনা রসূল সা. তিনবার আদম শুমারি করিয়েছিলেন। প্রথমবার লোক সংখ্যা ছিল পাঁচশো, দ্বিতীয়বার ৭-৮ শো এবং তৃতীয়বার হাজারের কিছূ বেশী। আমাদের ধারণা, প্রথম আদম-শুমারী মোহাজেরদের পুনর্বাসনের সময় অথবা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের শুরুতে করা হয়ে থাকতে পারে। এরপর কোন গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণের সময় (যেমন সিরিয়া প্রত্যাগত কোরায়েশী বাণিজ্যিক কাফেলার গতিরোধ করা) পুনরায় জনশক্তি যাচাই করা হতে পারে। তৃতীয় আদমশুমারী সম্ভবত এক বছর পর আবু সুফিয়ানের প্রতিশোধ গ্রহণের হুমকির সম্মুখীন হয়ে করা হয়ে থাকবে।]
বদর যুদ্ধের মুসলিম যোদ্ধাদের সংখ্যা দেখে অনেকে বিভ্রাটে পড়ে যেতে পারে। তবে আমাদের গবেষণা মোতাবেক রসূল সা. যখন মদিনা থেকে ৩১৪ জন সাথীকে নিয়ে বেরিয়ে যান, তখন কোন আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ-সংঘর্ষের আশংকা তিনি করেননি। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক কাফেলাকে প্রতিরোধ করা। তাছাড়া তাড়াহুড়োর ভেতরে ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল বিধায় সওয়ারীর ও অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণ খুবই কম ছিল। অথচ মদিনার মুসলিম অধিবাসীরা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশী সওয়ারী ও অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবস্থা করতে পারতো। যে যোদ্ধা সংখ্যা জোগাড় করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশী যোদ্ধা সংগ্রহ করাও সম্ভব ছিল। এর প্রমাণ এই যে, বদরযুদ্ধে সর্বমোট ৮৬ জন মোহাজের শরীক ছিলেন। অথচ ইতিপূর্বে কোন কোন টহল অভিযানেও মোহাজেরদের মোট সংখ্যা ২০০ পর্যন্ত দেখা গেছে। সুতরাং আমাদের অনুমান এই যে, বদর যুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে মদিনায় মোট মুসলমান জনসংখ্যা ৭/৮ শোর কাছাকাছি ছিল। এর মধ্য থেকে ৪/৫ শো লড়াকু যোদ্ধা সংগ্রহ করা যেত। কিন্তু বদর যুদ্ধে পুরো সামরিক শক্তি শরীক হতে পারেনি। কারণ সমগ্র সামরিক শক্তিকে যোগদান করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে একটা বাহিনী সীমিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য রসূল সা. এর সাথে গিয়েছিল মাত্র।
বনু কাইনুকার অভিযান থেকেও আমাদের এই অনুমানের সত্যতা প্রমাণিত হয়। বদর যুদ্ধের অব্যবহিত পর এই পাষন্ড ও বর্বর ইহুদী গোত্রটিকে ঘেরাও করা হয় এবং তারা পর্যুদস্ত হয়ে মদিনা থেকে বেরিয়ে যেতে সম্মত হয়। জানা যায়, এই গোত্রের লড়াকু শক্তি ৬০০ যুবক নিয়ে সংগঠিত ছিল। তাদেরকে ১৫ দিন যাবত অবরুদ্ধ করে রেখে পর্যুদস্থ করতে মুসলিম বাহিনীর কমের পক্ষে ৪/৫ শো যোদ্ধার প্রয়োজন হয়েছিল বলে অনুমান করা যায়।
– বদর যুদ্ধের সময় সমগ্র পৃথিবীতে মুসলমানদের সার্বিক জনসংখ্যাঃ (আনুমানিক) মদিনার সাত আটশো জনের সাথে আমরা যদি আবিসিনিয়ায় অবস্থানরত মোহাজেরগণ, নাজরান, ইয়ামান, গিফার গোত্র, বাহরাইন ও অন্যান্য অঞ্চলে ও গোত্রে বিদ্যমান বিক্ষিপ্ত মুসলমানদের সংখ্যা যোগ করি, তাহলে সম্ভবত মোট জনশক্তি এক হাজার বা তার চেয়ে কিছু বেশী হবে।
– বিভিন্ন যুদ্ধে ও অভিযানে মুসলিম জনশক্তির সংখ্যাঃ [পরবর্তী যুগের ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তির হিসাব করতে হলে যুদ্ধ বিগ্রহ ও অভিযান সমূহে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যার আলোকেই তা জানা যাবে।]
– ওহুদ যুদ্ধ- ৬৫০ মতান্তরে ৭০০[আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর তিন শো মুনাফেক সাথী বিদায় হয়ে যাওয়ার পর…..।]
– দ্বিতীয় বদর অভিযান- (যুদ্ধ হয়নি) ১৫১০।
– দুমাতুল জানদাল অভিযান (যুদ্ধ হয়নি) ১০০০।
– খন্দক যুদ্ধ- ৩০০০।
– হোদায়বিয়ার সফর- ১৪০০।
– খয়বরের যুদ্ধ- ১৪২০ (২০ জন মহিলাসহ)।
– মূতার যুদ্ধ- ৩০০০।
– মক্কা অভিযান- ১০,০০০।
– হোনায়েন যুদ্ধ ও তায়েফ অবরোধ- ১২,০০০।
– তবুক অভিযান- ৩০,০০০।
– বিদায় হজ্জের সহযাত্রী- ১,২৪০০০, মতান্তরে ১,৪৪০০০। [কোন কোন রেওয়ায়েতে এর সংখ্য বেশী বলা হয়েছে।]
– ইসলামী আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান জনশক্তির পর্যালোচনা করার সময় একথাওমনে রাখতে হবে যে, রসূলের সা. বিপ্লবী সংগ্রামে মহিলারাও শুরু থেকেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য তারাও নিজ নিজ কর্তব্য পালন করেছেন। মক্কার অগ্নিপরীক্ষায় তারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হিজরতের সময়ও তাদের অনেকে সহযাত্রী হয়েছে। এমনকি সম্ভাব্য জেহাদেও তারা সহযোগী হয়েছেন। বরঞ্চ এটা মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে রসূল সা. এর ওপর সর্বপ্রথম ঈমান আনা, রসূল সা. কে প্রবোধ দেয়া, এবং তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দানকারীও একজন মহিলাই ছিলেন, অর্থাৎ হযরত খাদীজা। বস্তুত রসূল সা. যে সর্বাত্মক মৌলিক পরিবর্তন সাধন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা মহিলাদের সহযোগিতা ছাড়া কার্যকর হওয়া সম্ভব ছিলনা। পারিবারিক ক্ষেত্র যদি কোন সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তাহলে কাজের গতি অত্যধিক শ্লথ হয়ে যায়। রসূল সা.পরিচালিত ইসলামী আন্দোলন পুরুষদের ন্যায় মহিলাদের নিকট থেকেও প্রেরণা,অর্থ, শ্রম ও ত্যাগ পুরো মাত্রায় অর্জন করেছে। আসলে এ বিষয়ে একটা স্বতন্ত্র নিবন্ধের প্রয়োজন। তবে আপাতত এটা স্থগিত রাখছি। এখানে সংক্ষেপে শুধু ইসলামী আন্দোলনের মহিলাদের অনুপাত কেমন ছিল,তাই দেখাতে চাই। প্রথম তিন বছরের প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ৫৬ জনের মধ্যে ১২ জন ছিলেন মহিলা। আবিসিনিয়ায় প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফা হিজরতে তাদের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫ ও ১৭, তৃতীয় আকাবার বায়য়াতের অধিবেশনে ২ জন মহিলা আনসারীও ছিলেন। রসূল সা. এর পূর্বে যারা মদিনায় হিজরত করেন, তাদের মধ্যেও কমের পক্ষে দশজন মহিলা ছিলেন।
[সমাপ্ত]